মোবাইল খরচ বৃদ্ধিতে সরকারের ‘ক্ষতি বেশি’: অ্যামটব

মোবাইল সেবার ওপর বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব বলেছে, নতুন করে শুল্ক আরোপে মোবাইল খরচ বৃদ্ধিতে ব্যবহার কমে সরকার এ খাতে উল্টো রাজস্ব হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2020, 11:58 AM
Updated : 16 June 2020, 11:58 AM

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব এস এম ফরহাদ একথা বলেন।

তিনি বলেন, “বর্তমানে জিডিপিতে ৭ শতাংশ অবদান রয়েছে মোবাইল অপারেটরদের। আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করলে তা ১০ শতাংশ হত। টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আমাদের কথা শুনে অর্থমন্ত্রীর সাথে আলোচনায় ছাড় দেওয়ার কথা বলেছেন, কিন্তু বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটেনি।”

অ্যামটব মহাসচিব বলেন, “সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার সাথে সাংঘর্ষিক, এখনও মোট গ্রাহকের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ফিচার ফোন ব্যবহার করে, তারা কথা বলা বা এসএমএস করে থাকে। তারা ব্যবহার কমিয়ে দিলে রাজস্ব আসবে না এবং সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিতে মূল চাপটা গ্রাহকের ওপর পড়বে জানিয়ে ফরহাদ বলেন, “তারা ব্যবহার কমিয়ে দিলে রাজস্ব কমে যাবে। অপারেটরদের আয়ের ৫১ থেকে ৫৭ শতাংশ সরকারের রাজস্বে চলে যায়। অপারেটররা আয় করলে সরকারের রাজস্বও বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।”

মোবাইল সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক তুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফরহাদ বলেন, “পুরো ট্যাক্স পলিসি রিভিউ করা উচিত।”

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বৃহস্পতিবার সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের  যে বাজেট উত্থাপন করেছেন, তাতে মোবাইল সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন।

বাজেট ঘোষণা আসার পর এনবিআর এসআরও জারি করায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই মোবাইল সেবায় বাড়তি হারে সম্পূরক শুল্ক কাটা শুরু করে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। এর ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা, এসএমএস পাঠানো এবং ডেটা ব্যবহারের খরচ বেড়েছে গ্রাহকদের।

এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম বলেন, “সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিতে সরকার ৪০০ কোটি টাকার মতো সরকার গেইন করবে। তবে এ খাতের সার্বিক দিক বিবেচনায় সরকার অনেক খাতেই রাজস্ব হারাবে।”

এই বক্তব্যের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “ফ্রিল্যান্সাররা ব্যবহার কমিয়ে দিলে এ খাতে আয় কমে যাবে, মহামারীর সময়ে ই-কমার্স মূল চালিকা শক্তি হিসেবে দাঁড়াচ্ছে, সব মিলে সরকারের ক্ষতির দিকটাই বেশি। শর্ট টাইম লাভের আশায় বড় ধরনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা হারাবে। মহামারীর সময়ে এই সিদ্ধান্ত বোধগম্য হচ্ছে না। এর যুক্তি কোথায় আমরা বুঝতে পারছি না।” 

গত বাজেটে একই হারে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে শাহেদ বলেন, “গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত রেভিনিউয়ে নরমাল যে গ্রোথ তা স্বাভাবিক ছিল, ডেটা ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে তবে ভয়েস বাড়েনি। যে গ্রোথ আশা করেছিলাম শুল্ক বৃদ্ধির কারণে তা হয়নি। কোনো অপারেটরই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।

“ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য সরকারের, তা আমরা বাজেটে পাইনি।”

বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, “বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের টার্গেট থাকে। বাংলাদেশে যেভাবে শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে তারা অন্য দেশে বিনিয়োগে চলে যাচ্ছে। এটি খুবই দুঃখজনক। আমরা আশা করছি, সরকার এসব বিবেচনা করে দেখবেন।”

গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত বলেন, “এ সিদ্ধান্ত গ্রাহকের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। সরকারের কাছে বিবেচনার  দাবি জানাই।”

আরও পড়ুন