‘রেড জোনে’ পণ্য সরবরাহে প্রস্তুত ‘৭ হাজার কর্মী’

ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৫৬টিসহ সারা দেশের ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলো অবরুদ্ধ করা হলে সেখানকার বাসিন্দাদের ঘরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিতে প্রায় সাত হাজার কর্মী প্রস্তুত রেখেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো।

শামীম আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2020, 02:47 PM
Updated : 15 June 2020, 02:47 PM

করোনাভাইরাসের বিস্তারে লাগাম টানতে এসব এলাকা লকডাউনের আওতায় আনার প্রক্রিয়ার মধ্যে এই প্রস্তুতি নিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।

ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাজাবাজার এলাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পরীক্ষামূলক লকডাউনে ই-ক্যাব সদস্য কোম্পানি সেবা দিচ্ছে। তাদেরকে আমরা পূর্বেই একটি স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিধি পেশ করেছি। তারা সেটা অনুসরণ করে নিজেদের এবং ক্রেতাদের নিরাপদ রেখে কাজ করে যাচ্ছে।

“রাজাবাজার এলাকায় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ, সিটি করপোরেশনের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় দূরত্ব বজায় রেখে এবং যথাযথভাবে পরিবহনগুলোকে স্যানিটাইজ করে তারা অনলাইনে অর্ডার করা দিনের বাজার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে।”

সদস্য কোম্পানিগুলোর প্রায় সাত হাজার কর্মীকে ই-ক্যাব থেকে প্রত্যয়নপত্র ও নিরাপত্তা স্টিকার দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তমাল বলেন, “এসব কর্মী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পণ্য সরবরাহে কাজ করবে। রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় পণ্য পৌঁছে দিতে সব প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।”

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪৫টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কমিটি। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১১টি এলাকা ছাড়াও দেশের আরও তিনটি জেলার বিভিন্ন এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

‘রেড জোন’ এলাকার মানে হচ্ছে, এখানে জনসংখ্যার অনুপাতে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বেশি। 

চিহ্নিত এলাকায় কবে থেকে লডডাউন শুরু হবে, তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি’ এসব এলাকায় লকডাউন দেওয়া হবে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দুই মাসের বেশি সময় সারা দেশে লকডাউন জারি রাখার পর ৩১ মে থেকে বেশিরভাগ বিধিনিষেধ তুলে নেয় সরকার।

তবে এরপর প্রতিদিন সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এলাকা ধরে ধরে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনুযায়ী লাল, সবুজ ও হলুদ জোনে ভাগ করে প্রয়োজন অনুযায়ী বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

তার ভিত্তিতে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকা পরীক্ষামূলকভাবে অবরুদ্ধ করা হয়েছে গেল সপ্তাহে।

এরইমধ্যে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোতে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।

ঢাকা দক্ষিণের ‘রেড জোন’: যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, পরীবাগ, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সেগুনবাগিচা।

ঢাকা উত্তরের ‘রেড জোন’: বসুন্ধরা, গুলশান, বাড্ডা, ঢাকা সেনানিবাস, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রায়েরবাজার, রাজাবাজার, উত্তরা, মিরপুর।

চট্টগ্রামের ‘রেড জোন’: চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড (আংশিক), পতেঙ্গার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড, পাহাড়তলির ১০ নম্বর ওয়ার্ড, কোতোয়ালীর ১৬, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড, খুলশীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, হালিশহর এলাকার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড।

এসব এলাকায় ‘লকডাউন’ শুরু হলে কীভাবে কাজ করা হবে তার প্রস্তুতিতে এটুআইয়ের সার্বিক তত্ত্বাধানে কাজ চলছে বলে জানান তমাল।

এটুআইএর ই-কমার্স প্রধান রেজওয়ানুল হক জামি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাজাবাজার এলাকার পণ্য সরবরাহে আমরা কেইস স্টাডি হিসেবে দেখছি, সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে আগামীতে আরও ভালো কাজ করা যাবে। নতুন নতুন এলাকা লকডাউনের আওতায় আসলে পণ্য সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না।”

পূর্ব রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা আল আমিন দেওয়ান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লকডাউনের পর কয়েকবার অনলাইনে পণ্য অর্ডার করেছি এবং ঠিক সময়েই তারা পণ্য পৌঁছে দিয়েছে। কোনো ধরনের সমস্যায় পড়িনি।”

পণ্য পৌঁছে দিতে ই-ক্যাব ও এটুআই মিলে একটি যৌথ বিধিমালা প্রনয়ন করেছে জানিয়ে তমাল বলেন, “ই-ক্যাবের সদস্যভুক্ত ৫৬টি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে লকডাউনের এলাকায় সেবা দিতে অনুমতি পেয়েছে। এলাকা বৃদ্ধি পেলে এ তালিকা আরও বৃদ্ধি করা হবে এবং পণ্য সরবরাহের কোনো ঘাটতি থাকবে না।”

তিনি বলেন, “কোনো এলাকায় লকডাউন শুরু হলে কোম্পানিগুলোর তালিকা ওই এলাকার কন্টোলরুমে থাকবে এবং এর ফলে খাদ্য ও নিত্যপণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, অনলাইন ফার্মেসি ও লজিস্টিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য সরবরাহে কোনো সমস্যা থাকবে না।”

ই-ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ই-কমার্সের বাজার আট হাজার কোটি টাকার। বর্তমানে ই-ক্যাবের সদস্য এক হাজার ১০০টি প্রতিষ্ঠান। এ খাতে এক লাখ ২৫ হাজার কর্মী কাজ করছে, যার ২৬ শতাংশ নারী।

আরও পড়ুন: