বাজেটে খুশি বিজিএমইএ, উৎসে কর ০.২৫% রাখার অনুরোধ

কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর থেকে আসছে অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের অব্যাহত নীতি সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সমিতি বিজিএমইএ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2020, 08:11 PM
Updated : 12 June 2020, 10:29 AM

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন।

বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মহামারীর কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলা ও তৈরি পোশাক খাতের সহায়তায় সরকারের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করলেও রপ্তানি মূল্যের উপর উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে দশমিক ৫ শতাংশ করায় কিছুটা নাখোশ পোশাক মালিকরা।

বিজিএমইএর এক বিবৃতিতে বলা হয়, যখন সমগ্র বিশ্ব কোভিড-১৯ এর মহামারীতে টালমাটাল, জনজীবন পর্যন্ত বিপর্যস্ত, ঠিক সেরকম এক অভুতপূর্ব সংকটের মধ্যে থেকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিজের দ্বিতীয় এবং দেশের ৪৯তম বাজেট ঘোষণা করলেন।

“বাজেট প্রস্তাবনায় তৈরি পোশাক শিল্পখাতে রপ্তানির বিপরীতে যে নগদ সহায়তাগুলো চালু আছে সেগুলো অব্যাহত রাখার এবং পাশাপাশি অতিরিক্ত ১ শতাংশ বিশেষ নগদ সহায়তাও অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

“গতবছর পোশাক শিল্পের আবেদনের প্রেক্ষিতে উৎসে কর কমিয়ে ০.২৫% হারে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল। শিল্পের এই কঠিন সময়ে উৎসে কর ০.২৫% হারে আরও ৫ বছর অব্যাহত রাখতে অর্থমন্ত্রীর প্রতি বিজিএমইএ বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছে।”

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী রপ্তানিমুখী শিল্পের পণ্য মূল্যের উপর উৎসে কর হার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে নতুন অর্থবছরে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কাটার প্রস্তাব করেন। যদিও আয়কর অধ্যাদেশে এক শতাংশ হারে উৎসে করহার কর্তনের কথা বলা আছে।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই, বাজেট প্রস্তাবনায় আর্টিফিশিয়াল ফাইবার উৎপাদনকে কর হ্রাসের জন্য।”

“যদিও রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের চাহিদার কারণে গত কয়েক দশকে আমাদের পশ্চাদসংযোগ শিল্পখাতটি উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়েছে, তবুও প্রাথমিক বস্ত্রখাত উৎপাদনের ক্ষেত্রে ম্যানমেড ফাইবার, পলিয়েস্টার, ভেজিটেবল ফাইবার ও অ্যানিমেল ফাইবার উৎপাদনে না গিয়ে কটন ফাইবার (প্রাকৃতিক তন্তু) উৎপাদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।”

বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্যে কটনভিত্তিক পোশাকের চাহিদা প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং যৌগিক বাৎসরিক প্রবৃদ্ধির হার (সিএজিআর) হিসেবে এ হার ২০০৭-২০১৭ সময়ে ০.৫ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ব বাণিজ্যে কৃত্রিম তন্তুভিত্তিক পোশাকের অংশ প্রায় ৪৫ শতাংশ, যা উল্লেখিত একই সময়ে যৌগিক বাৎসরিক প্রবৃদ্ধির হার (সিএজিআর) হিসেবে ৫ শতাংশ হারে বেড়ে চলেছে।

ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা ও বৃহৎ শিল্পের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সহায়তা প্যাকেজ বাণিজ্যিক ব্যাংকসমুহের মাধ্যমে দ্রুততার সাথে বিতরণ করা হবে বলে বিজিএমইএর আশা।

২০১৭ সালে বিশ্ব বাণিজ্যে কৃত্রিম তন্তুভিত্তিক পোশাকের ব্যবসা ছিলো ১৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশ ছিলো মাত্র ৫ শতাংশ, যেখানে কিনা ভিয়েতনামের অংশ ছিলো ১০ শতাংশ (উৎস পিডব্লিউসি) এর বিপরীতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ৭৪.১৪ শতাংশ কটনভিত্তিক পণ্য, যা কিনা গত ১০ বছর আগে ৬৮.৬৭ শতাংশ ছিলো।

“কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনকে কর থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ফলে এখাতে বিনিয়োগ আরও উৎসাহিত হবে বলে বিজিএমইএ মনে করে। প্রকারান্তরে এটি আমাদেরকে রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং উচ্চ মূল্যের পণ্যে যেতে সহায়তা করবে।

“বর্তমানে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পখাতে কর্পোরেট করহার গ্রিন কারখানার জন্য ১০ শতাংশ এবং গ্রীন কারখানা ব্যতিত অন্যান্য কারখানার জন্য ১২ শতায়শ হারে বিদ্যমান রয়েছে। বাজেট প্রস্তাবনায় এই হার আগামী দু বছরের জন্য অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই ঘোষণা প্রদানের জন্য শিল্পের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।”

বাজেটে সুতার উপর করহার হ্রাস, পিপিই ও মাস্ক উৎপাদনকে ভ্যাট থেকে অব্যাহতি, তুলা আমদানির উপর শুন্য শতাংশ শুল্কহার অব্যাহত রাখা এবং আরএফআইডি ট্যাগ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেসিং সিস্টেম, কাটিং টেবিল আমদানীতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ শিল্পকে সহায়তা করবে বলে বিজিএমইএ মনে করে। 

“পোশাক শিল্পের সংকট চলাকালে আমাদের কৃষিখাত ভালো করছে- এটা অবশ্যই জাতির জন্য আশাব্যঞ্জক। বিশেষ করে আমাদের শ্রমিক ভাই বোনদের খাদ্য সংস্থানে এটি সরাসরি প্রভাব রাখছে।

বিজিএইএ সভাপতি বলেন, “আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ যে, চরম অনিশ্চয়তার সময়ে সরকার শিল্পের সংকটগুলো অনুধাবন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বে মাননীয় অর্থমন্ত্রী শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অব্যাহত সহযোগিতা যুগিয়ে চলেছেন।”