বিমান ও পর্যটনে বরাদ্দ বেড়েছে ২৬২ কোটি টাকা

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ২৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2020, 05:47 PM
Updated : 11 June 2020, 05:47 PM

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেটে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা রবাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা, সংশোধনে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, “নিরাপদ, দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য দ্রুতগতির যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সুবিধাদি নিশ্চিতকরণে বিশ্বমানের বেসামরিক বিমান পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।”

দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতার মান ও পরিধি বৃদ্ধির জন্য কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে এবং কক্সবাজার ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।

বাগেরহাট জেলায় খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণসহ যশোর, সৈয়দপুর ও বরিশাল বিমানবন্দর এবং রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও নবরূপায়নের পরিকল্পনা নেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

মুস্তফা কামাল বলেন, “দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের সিভিল এভিয়েশন ইনস্টিটিউট নির্মাণসহ রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের বিমান বহর সম্প্রসারণ, লাভজনক বিভিন্ন গন্তব্যে সাপ্তাহিক ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি এবং উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন গন্তব্য যেমন গুয়াংজু, চেন্নাই, কলম্বো, টোকিও, টরেন্টো, বাহরাইন, শারজাহ, নিউইয়র্ক ও ছালালাহতে সার্ভিস সম্প্রসারণ অথবা পুনঃপ্রবর্তনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।”

পর্যটন শিল্পকে অর্থনৈতিক খাত হিসেবে উন্নত ও সমৃদ্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে দেশের পর্যটন শিল্প যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে,তা থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধারে সরকার সক্রিয় প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে।

“দেশের পর্যটন সম্ভাবনাময় স্থানগুলোতে কেবলমাত্র বিদেশি পর্যটকদের জন্য স্বতন্ত্র পর্যটন এলাকা স্থাপন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক, দ্বীপভিত্তিক পর্যটন পার্ক ও হোটেল নির্মাণ এবং আগত পর্যটকদের বিনোদনসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।”

পাশাপাশি বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের বিদ্যমান স্থাপনাগুলোর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন স্থানে আধুনিক পর্যটন সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে বক্তৃতায় উল্লেখ করেন তিনি।

তবে এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের এয়ারলাইন্সগুলো কীভাবে টিকে থাকবে সে বিষয়ে  বাজেটে কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই।

এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উপদেষ্টা বিমান বাহিনীর সাবেক উইং কমান্ডার এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, “বাজেটে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলা হলেও করোনা পরবর্তী সময়ে এয়ারলাইন্সগুলো কীভাবে টিকে থাকবে সেই বিষয়ে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।”

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে বিমান ভাড়া করে দেশ ছাড়তে দেখা যাওয়ার মধ্যে বাজেটে চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টার ভাড়ার উপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, “এই সিদ্ধান্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ আমাদের দেশে যেই ট্রাফিক পরিস্থিতি তৈরি হয় বিদেশ থেকে অনেক ক্রেতারা এসে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হেলিকন্টারে গিয়ে হয়ত কোনো গার্মেন্ট বা কারখানা ভিজিট করেন। সেটা করে আবার তারা চলে যান। এইটা তারা কর্পোরেট ইউজের জন্য করছেন, বিলাসিতার জন্য না। টাকা বাড়ানোতে তাদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব দেখা দিতে পারে।

“আরেকটা হচ্ছে যারা অসুস্থ মানুষ তারা অসুস্থততার কারণে হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। তারাও কিন্তু এখানে নিরুৎসাহিত হবে। ট্যুরিজমের বিকাশে হেলিকপ্টার একটা ভালো মাধ্যম। অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে যখন আমরা যাব তখন এই জিনিসগুলোর ব্যবহার কিন্তু একটু বেশি হতে পারে।”

বাজেটে পর্যটন খাতের উন্নয়নে উল্লেখ করার মতো ‘কোনো নির্দেশনা না থাকায়’ আক্ষেপও করেন তিনি।

“ট্যুরিজমে বাংলাদেশে সরাসরি প্রায় ৬০ লাখ লোক জড়িত। পরোক্ষভাবে আরও অনেক বেশি লোক জড়িত। তাদের সঙ্গে আছে আরও অন্তত ৩০ লক্ষ লোক যারা ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে জড়িত। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এক কোটির বেশি লোক ট্যুরিজমের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। এই বাজেটে জানি না কেন ট্যুরিজম সম্পর্কে কোনো দিকনির্দেশনা চোখে পড়েনি।”