মোবাইল সেবায় শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে যখন মানুষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইলনির্ভর হয়ে পড়েছে, সেই সময় মোবাইল সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবে হতাশা জানিয়ে তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2020, 01:58 PM
Updated : 11 June 2020, 07:54 PM

মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব এস এম ফরহাদ বলেছেন, “দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এমনিতেই মানুষের মধ্যে যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, মোবাইল মাধ্যম হয়ে উঠেছে সব যোগাযোগের মূল চালিকা ও দেশ ডিজিটাল ইকনোমির দিকে এগিয়ে চলছে; ঠিক সে সময় এ ধরনের করের বোঝা কোনোভাবেই দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে না।

“এ বোঝা দরিদ্র মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে পড়বে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হয়ে উঠবে, যা করোনাভাইরাস সঙ্কটের কারণে আরও বাড়বে।”

দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির কর্মকর্তারাও এই প্রস্তাবে হতাশা জানিয়ে তা পুনর্বিবেচনার দাবি করেছেন।

এদিকে বাজেট প্রস্তাবের পর এনবিআর এসআরও জারি করায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত ১২টার পর থেকেই মোবাইল সেবায় বাড়তি সম্পূরক শুল্কের ভিত্তিতে টাকা কাটবে মোবাইল অপারেটরগুলো।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তাতে মোবাইল সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন।

ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা, এসএমএস পাঠানো এবং ডেটা ব্যবহারের খরচ বেড়ে যাবে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।

প্রথমবার মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয় ২০১৫-১৬ সালের বাজেটে। তখন ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব হলেও পরে তা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল।

মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, এর ফলে বর্তমানে সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১ শতাংশ সারচার্জ, ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং অন্যান্য মিলে মোট কর ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৩৩.২৫ শতাংশ। 

সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়লে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কেউ যদি ১০০ টাকার সেবা নিতে চান, তাহলে ৭৫ দশমিক শূন্য ৩ টাকার সেবা নিতে পারবেন। ২৪ দশমিক ৯৭ টাকা যাবে সরকারের পকেটে।

এই ঘোষণায় অসন্তোষ জানিয়ে অ্যামটব মহাসচিব ফরহাদ এক বার্তায় বলেন, “সরকার নিয়মিতভাবে প্রতিবছর এই খাতের উপর আরও বেশি করে করের বোঝা চাপিয়ে একে আরও দুর্বল করে তুলছে, গ্রাহকদের উপর ফেলছে বাড়তি চাপ। ফলে দেশের জিডিপিতে মোবাইলের বর্তমান অবদান ৭% থেকে যে দুই অংকের ঘরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তা আর অর্জিত না-ও হতে পারে।”

তিনি বলেন, “এ বছর সরকার মোবাইলের মাধ্যমে প্রাপ্ত সকল রকম সেবার ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ১০% থেকে বাড়িয়ে ১৫% করেছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। এর ফলে গ্রাহকদের উপর বাড়তি চাপ পড়বে। এ বিষয়ে এসআরও জারি হওয়ায় তা আজ দিবাগত রাত ১২ টার পর থেকেই কার্যকর হবে।”

দাবি জানিয়ে অ্যামটব মহাসচিব বলেন, “আমরা মোবাইল খাতের পক্ষ থেকে অলাভজনক কোম্পানির জন্য বর্তমান ২ শতাংশ ন্যূনতম কর বিলোপ ও করপোরেট ট্যাক্স কমানোর জন্য পূর্বাপর অনুরোধ করলেও তা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি, যা চরম হতাশাজনক। আমরা সরকারকে টেলিকম খাতের বাজেটের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবারও অনুরোধ করছি।”

গ্রামীণফোনের হেড অব পাবলিক অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত এক বর্তায় বলেন, “২০২০-২১ সালের বাজেটে সম্পূরক শুল্ক বর্ধিত করায় কোভিড-১৯ ও পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় মোবাইল সেবা ব্যবহারে গ্রাহকদের অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত ডিজিটাল বাংলাদেশের সম্ভাবনার পথে অন্তরায়।  গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় আমরা এই সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার অনুরোধ করছি।”

অপারেটর রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে টেলিযোগাযোগ খাতের ওপর আরোপিত ২ শতাংশ ন্যূনতম আয় কর প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যাহার না হওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশেষ করে করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে ডিজিটাল সেবা প্রদান এবং ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরিতে অপারেটরদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পরেও ২% ন্যূনতম করের বোঝা প্রত্যাহার না হওয়াটা আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। আমরা মনে করি, বিষয়টি পুর্নবিবেচনার সুযোগ এখনো আছে এবং এ বিষয় একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত সরকার নেবে।

“সব ধরনের মোবাইল সেবা ব্যবহারে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) আরও ৫ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক। এনবিআরের জারি করা এসআরও অনুযায়ী, আজ মধ্যরাত ১২টা থেকে সব ধরনের মোবাইল সেবার ওপর নতুন এসডি হার কার্যকর করা হবে, এ বিষয়ে সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। উচ্চ করভারে জর্জরিত মোবাইল সেবার ওপর তাই নতুন করে ৫ শতাংশ এসডি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রাহকদের দুর্দশা আরও বাড়াবে। করোনা মহামারীর বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের একটি বড় অংশ এখন ইন্টারনেটভিত্তিক ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন, এসডি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এ ধারাতেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

তিনি বলেন, “২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলা টেলিযোগাযোগ খাতের সমস্যাগুলো প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত থেকে গেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।”

তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাংলালিংকের সিইও এরিক অস বলেন, “আমাদের গ্রাহকরা ইতোমধ্যেই উচ্চ করের বোঝা বহন করে টেলিকম সেবা গ্রহণ করছেন। এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হলে তা অপেক্ষাকৃত স্বল্প আয়ের গ্রাহকদের প্রভাবিত করবে। এর ফলে বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে পড়বে।

“ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের উপর করোনাভাইরাস মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাবের কথা বিবেচনা করে সরকারের কাছে আমরা ইন্টারনেটের উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারেরও দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া যেহেতু আমরা ব্যবসায়িকভাবে এখনও লাভজনক অবস্থানে যেতে পারিনি সেহেতু আমরা সরকারকে অনুরোধ করব, আমাদের আয়ের উপর ন্যূনতম করের হার যেন পুনর্বিবেচনা করা হয়।”