তারল্য সঙ্কট না হলেও ঋণ প্রবাহ কমবে: প্রাইম ব্যাংকের সিএফও

কোভিড-১৯ সঙ্কটের ধাক্কা সামলাতে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে ব্যাংক খাতে তারল্য সঙ্কট এড়ানোর সম্ভাবনা জাগলেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমা ঠেকানো যাবে না বলে মনে করছেন প্রাইম ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2020, 03:09 PM
Updated : 4 June 2020, 03:09 PM

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের এ ব্যাংক বৃহস্পতিবার তাদের ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-জুন) অনীরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে হাবিবুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর আগে নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা কমিয়ে ৪ শতাংশ করেছে।

“তাতে ব্যাংক খাতে তার‌ল্য বৃদ্ধি পাবে। বাড়তি ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকগুলো পাবে ঋণ দেওয়ার জন্য।”

কিন্তু তারপরও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যেতে পারে- এমন ধারণা প্রকাশ করে এই ব্যাংকার বলেন, “বাংলাদেশে এখন আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশ এবং ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এটি অনেক ব্যাংকের মুনাফা কমিয়ে দিতে পারে।

“কারণ ব্যাংকগুলো সেরকম গ্রাহক খুব বেশি একটা পাচ্ছে না যাদেরকে ৯ শতাংশ হারে সুদ দিলে তারা ঠিক মত ফেরত দিতে পারবে। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যেতে পারে।” 

করোনাভাইরাস মহামারীতে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তা বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে ১৫ এপ্রিল থেকে।

সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো সুদহার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা ১২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে।

পাশাপাশি সাধারণ ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) ৮৭ শতাংশে আর ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে হবে ৯২ শতাংশ নামিয়ে আনা হয়েছে, যা আগে ছিল যথাক্রমে ৮৫ এবং ৯০ শতাংশ।

হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, “সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে তারল্য সঙ্কট হবে না। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কেমেছে এবং আমাদের ডলার রিজার্ভ প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, আমাদের এই খাতে টাকার অভাব হবে না।”

প্রথম প্রন্তিকের মুনাফা

২০২০ সালের প্রথম প্রন্তিকে (জানুয়ারি-জুন) মুনাফা বাড়ার কথা জানিয়েছে প্রাইম ব্যাংক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাইম ব্যাংকের শেয়ার প্রতি মুনাফা ৩৮ পয়সা থেকে বেড়ে ব্যাংকের ৪২ পয়সা হয়েছে। শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ২৩ টাকা ৫৭ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৩ টাকা ৮৬ পয়সা।

প্রাইম ব্যাংক জানিয়েছে, তাদের মুনাফা বাড়ার কারণ বিনিয়োগের সুদ। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তারা তাদের বেশ কিছু টাকা ঝুঁকিহীন ইন্সট্রুমেন্ট- অর্থাৎ সরকারি বিভিন্ন বিল এবং বন্ডে বিনিয়োগ করেছে।

হাবিবুর রহমান বলেন, “এ সময়ে আমাদের আমানত বেড়েছে, কিন্তু ঋণ দেওয়ার পরিমাণ বাড়েনি। আমরা বেশিরভাগ টাকা ঝুঁকিহীন খাতে বিনিয়োগ করেছি। ফলে আমাদের ঋণের সুদ থেকে প্রাপ্ত আয় কমলেও মোট আয় বেড়েছে বিনিয়োগের সুদের কারণে।”       

প্রাইম ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক রাহেল আহমেদ বলেন, “প্রথম প্রন্তিকে আমাদের ব্যাংক ভালো করেছে। তবে একদিকে করোনাভাইরাস মহামারী, অন্যদিকে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা জানি না সমনের দিনগুলোতে ব্যাংক কেমন করবে। আমাদের ভালো করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”