এভাবে চললে ছাঁটাই ছাড়া উপায় থাকবে না: বিজিএমইএ সভাপতি

করোনাভাইরাস মহামারীর সঙ্কটে দেশের পোশাক কারখানাগুলো সক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার করে কাজ চালাতে পারছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ‍রুবানা হক বলেছেন, এর প্রভাবে চলতি জুন মাস থেকেই কর্মী ছাঁটাই শুরু হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2020, 01:13 PM
Updated : 4 June 2020, 01:13 PM

এই ছাঁটাইয়ের ফলে যেসব শ্রমিক চাকরি হারাবেন, তাদের পুনর্বাসনে সরকারের সঙ্গে একসাথে কাজ করার ইচ্ছার কথাও তিনি বলেছেন।

পোশাক শ্রমিকদের জন্য একটি করোনাভাইরাস টেস্টিং ল্যাবের উদ্বোধন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে ছাঁটাইয়ের এ বাস্তবতা স্বীকার করেন রুবানা।

করোনাভাইরাস সঙ্কট পোশাক খাতে কতটা প্রভাব ফেলেছে, সেই চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বিজিএমইএর নিবন্ধিত কারখানা ছিল ২২৭৪টি, তার মধ্যে এখন ১৯২৬টি চলছে। অর্থাৎ বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

“অনেকে ছাঁটাই নিয়ে প্রশ্ন করছেন। ছাঁটাই কিন্তু পহেলা জুন থেকে হবে আসলে। এটা একটা অনাকাঙ্খিত বাস্তবতা। কিন্তু এই মুহূর্তে কিচ্ছু করার নেই। কারণ, শতকরা ৫৫ ভাগ সক্ষমতায় কারখানাগুলো চললে আমাদের পক্ষে ছাঁটাই ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।”

রুবানা বলেন, “এই ছাঁটাইকৃত শ্রমিকের জন্য কী করা হবে- সেজন্য আমরা সরকারের কাছে বিনীতভাবে আবেদন করি যে, কীভাবে সবাই মিলে এই ক্রাইসিসটাকে অতিক্রম করতে পারি। তবে ছাঁটাই আসলে হবে।”

অবশ্য পরিস্থিতি যদি হঠাৎ করেই ভালোর দিকে যায়, তাহলে ওই শ্রমিকরাই অগ্রাধিকার পাবে বলে আশ্বাস দেন বিজিএমইএ সভাপতি।

 

ছাঁটাই প্রসঙ্গে কথা বলতে পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে নিজের বক্তব্য থেকে কিছুটা সরে আসেন রুবানা হক।

তিনি বলেন, “জুনের মধ্যে ছাঁটাই হবে এমন ঘোষণা আমি দিইনি। এ ধরনের শিরোনাম পোশাকখাতে উসকানির একটি চেষ্টা। আামি বলেছি পোশাকখাতে সামগ্রিকভাবে অর্ডার কমে গিয়ে সক্ষমতার ৫৫ শতাংশ কাজ করে চলছে জুন মাসে। এর ফলে ছাঁটাইয়ের মত ঘটনা ঘটতে পারে।“

বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ এই পোশাক খাত থেকেই আসে। বাংলাদেশের চার হাজারের বেশি পোশাক কারখানার ৪০ লাখ শ্রমিকের একটি বড় অংশই নারী।

ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারি থেকেই সংকটের শুরু হয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার পশ্চিমা বিশ্বে পোশাকের চাহিদা যায় কমে।

বিজিএমইএ বলছে, চলমান সঙ্কটে বাংলাদেশে পোশাক খাতের প্রায় তিন দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ বাতিল কিংবা স্থগিত হয়েছে। পণ্য বিক্রি করেও দাম হাতে পায়নি অনেক কারখানা।

ইতোমধ্যে ৩৩৮টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে বলে বিজিএমইএ জানালেও তাতে কত সংখ্যক শ্রমিক কর্মহীন হয়েছেন সে হিসাব এখনও দেয়নি কারখানা মালিকদের এ সংগঠন।

সঙ্কটের এই সময়ে শ্রমিকদের বেতনের জন্য সরকার ঋণ দিলেও অনেক কারখানা শ্রমিকের বেতন-বোনাস ঠিকমতো দেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। ঈদের পরেও অনেক শ্রমিক ঈদ বোনাসের অপেক্ষায় আছেন- এমন খবরও সংবাদ মাধ্যমে এসেছে।

২৪ মে পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মার্চ পর্যন্ত সক্রিয় বিজিএমইএর ২২৭৪টি সদস্য কারখানার মধ্যে ২১৮২টি কারখানার ২৪ লাখ ২৪ হাজার ৪১৭ জন শ্রমিক মার্চ মাসের বেতন পেয়েছিলেন। তবে এপ্রিলে সক্রিয় ছিল মাত্র ১৯২৬টি কারখানা। এর মধ্যে বেতন দিয়েছে ১৮৭৮টি কারখানা।

মহামারীর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কারখানার কাজে থেকেও বেতন-বোনাস না পাওয়ার কষ্টের পাশাপাশি ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে কারখানা শ্রমিকদের মনে। 

পোশাকখাত কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে রুবানা হক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শুধু মার্চ থেকে মে পর্যন্ত একটি সামগ্রিক বিবেচনায় তাৎক্ষণিক প্রভাব হচ্ছে ৫ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার।

“কাজেই আমরা বলতে পারি শতকরা ৩০ ভাগ অর্ডার কমে আসবে আগামীতে। জুনে আছি ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটিতে। জুলাইতে কি হবে জানি না। তবে যত যাই হোক এই অর্থবছরে একেবারে কমে গেলেও রপ্তানি হবে ২৩ বিলিয়ন ডলার।”

রুবানা হক বলেন, যেসব অর্ডার বাতিল বা স্থগিত হয়েছিল, আলোচনা করে তার ২৬ শতাংশ ফেরত আনা গেছে। কিন্তু পেমেন্টের শর্তগুলো বদলে গেছে।

“যারা এখনই পরিশোধ করতে চেয়েছিলেন তারা অন্তত ১৮০ দিন পরে টাকাটা দেবেন। কেউ বলছেন পণ্যগুলো আগামী বছর নেবেন। কিন্তু টাকাগুলো কখন দেবেন সেটা বলছেন না। কেউ ডিসকাউন্ট চাইছেন। অনেকে আবার পেমেন্ট নিয়ে কথা বলতে চাইছেন না।”

আবার অনেক অর্ডার রয়েছে যেগুলোর বিপরীতে সুতা, কাপড় কেনা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর কোনো খবর ক্রেতারা নিচ্ছেন না বলে জানা রুবানা।

তিনি বলেন, “অত্যন্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে আমরা আছি, কিন্তু আমাদের কাউকে আশা হারালে চলবে না। অর্ডারগুলো ফেরত আনতে হবে। ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে যে আমরাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো।”

এক জরিপের বরাত দিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, করোনাভাইরাসের অভিঘাতে বিশ্বে ‘কনজাম্পশান’ ৬৫ শতাংশ কমে যাবে। সেটার প্রভাব অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিতেও পড়বে।

“আমরা আশা করতে পারি না যে অ্যাপারেলের চাহিদা বাড়বে। মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট, হেলথ টেক্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর চাহিদা সাংঘাতিকভাবে বাড়বে। এতে করে বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলো রিটুল করতে হবে।”

দীর্ঘমেয়াদী বৈরী প্রভাব পড়লে ক্রেতারা পোশাক কেনা কমিয়ে দেবে। তবে বছরের শেষে ক্রিসমাসের দিকে কেনাকাটা আবার বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন রুবানা।