রোববার সকালে নিউ মার্কেটের চারটি গেইটের মধ্যে তিনটি ক্রেতাদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম শাহীন।
এই সপ্তাহে ওই এলাকার চাঁদনী চক, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটসহ অন্যান্য বিপণি বিতানগুলোও খুলছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ২৫ মার্চ সারাদেশে লকডাউন চালু হওয়ার ক’দিন আগেই বন্ধ হয়ে যায় ঢাকার নিউ মার্কেট।
এরপর ঈদকে কেন্দ্র করে মে মাসের শুরুতে সরকার মার্কেট খোলার অনুমতি দিলেও ঝুঁকি এড়াতে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগ নেননি।
ব্যবসায়ী নেতা শাহীন শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংক্রমণের একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছি আমরা।
“কিন্তু জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ঝুঁকি জেনেও আমাদেরকে মার্কেট চালু করার মতো কাজটি করতে হচ্ছে। তবে আমরা বেশ কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছি শুরু থেকে।”
পাশের চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মনজুরুল ইসলাম মনজু জানান, আগামী বুধবার থেকে তাদের মার্কেটও চালু করার চিন্তা করছেন তারা। মঙ্গলবার সপ্তাহিক ছুটি থাকায় তার আগে চালু করার চিন্তা নেই তাদের।
তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মার্কেটগুলো বন্ধ। যারা ঈদকে সামনে রেখে দোকানে পণ্যের সমাবেশ করেছিলেন তাদের অধিকাংশই ব্যাংকঋণের মধ্যে রয়েছেন। বেচাকেনা না চললেও সেই ঋণ পরিশোধের একটা চিন্তা সবার মাথার মধ্যেই রয়েছে।
“এর পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবন চালানোর খরচ রয়েছে। দোকান কর্মচারীরাও রয়েছে আর্থিক সঙ্কটে। এই পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকির বিষয়টি পরিষ্কার হলেও বাধ্য হয়ে দোকান খুলছে অনেকে।”
দোকান চালুর বিষয় সরকার ও পুলিশ প্রশাসন কিছু বিধিনিষেধ দিয়েছে। এর পাশাপাশি নিউ মার্কেট কর্তৃপক্ষও কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছে।
নিউ মার্কেটে সব ক্রেতা ও বিক্রেতাদের প্রতি মাস্ক ব্যবহার করার সাধারণ নির্দেশনা রয়েছে। এর পাশাপাশি প্রধান দুটি ফটকে সমিতির পক্ষ থেকে দুটি করে মাস্কের দোকান বসানো হবে, যাতে যারাই মাস্ক ছাড়া এসে পড়বেন, তারা যেন মাস্ক কিনে ঢুকতে পারেন। এর বাইরেও বেশ কিছু মাস্কের দোকান থাকবে ভেতরে।
ব্যবসায়ী নেতা শাহীন বলেন, “আমরা আলোচনা করে দেখলাম, আগে কখনও একটানা এতদিন বন্ধ ছিল না নিউ মার্কেট। ১৯৫৪ সালে চালু হওয়া এই মার্কেট এই প্রথম টানা দুই মাস বন্ধের কবলে পড়েছে।
“দিন দিন কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এই সময়টা সত্যিকার অর্থে টাফ টাইম। তবুও জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর আমরা মার্কেট খুলে দিচ্ছি। দেখা যায় কী পরিস্থিতি দাঁড়ায়? সবাই যেহেতু খুলতেছে, এই মুহূর্তে আর কিছু করার নেই।”
নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ
দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানান হয়, নিউ মার্কেটের চারটি গেইটের মধ্যে এক ও দুই নম্বর গেইট দিয়ে ক্রেতারা আসা-যাওয়া করতে পারবেন। বড় ফুট ওভার ব্রিজের পাশে চার নম্বর গেইটটি দিয়ে কেবল প্রবেশ করার ব্যবস্থা থাকবে। কারণ সেটি তুলনামূলক সরু।
নিউ সুপার মার্কেটের দিক থেকে যে গেইটটি আছে সেটা বন্ধ রাখা হবে। কারণ দুই মার্কেটে দুই ধরনের ব্যবস্থাপনা।
প্রবেশপথগুলোতে চটের বস্তা বিছিয়ে দেবে কর্তৃপক্ষ। এসব পাটের বস্তা সাবানপানি বা ব্লিচিং পাউডারের পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হবে। পাশাপাশি রাখা হবে নারিকেলের ছোবড়ার তৈরি পাপোস। সেগুলো ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হবে, যাতে ক্রেতাদের জুতার তলা জীবাণুমুক্ত থাকে।
এর বাইরে আপাতত স্যাভলন হ্যান্ডওয়াশ মিশ্রিত পানি রাখা হবে হাত ধোয়ার জন্য। এসব কাজ করার জন্য প্রায় ৪০ জন মানুষ নিয়োজিত করেছে মার্কেট কর্তৃপক্ষ।