পাওনা বকেয়া রাখা ক্রেতাদের কালো তালিকাভুক্ত করার হুমকি বিজিএমইএ’র

করোনাভাইরাসের এই সঙ্কটের সময়ে পোশাক কিনে দাম আটকে রাখা পশ্চিমা কোম্পানিগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করার হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2020, 08:18 AM
Updated : 28 May 2020, 08:27 AM

টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটিশ বিলয়নেয়ার ফিলিপ ডের এডিনবরা উলেন মিল (ইডব্লিউএম) গ্রুপকে ২৫ মার্চের আগে যেসব পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে, তার পাওনা পরিশোধের জন্য বিজিএমইএ শুক্রবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে।

এর মধ্যে টাকা না পেলে মামলা করারও হুমকি দেওয়া হয়েছে বিজিএমইএর পাঠানো এক চিঠিতে।

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হককে উদ্ধৃত করে টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, “বিজিএমইএ নির্দিষ্ট কিছু বায়ারকে কালো তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইডব্লিউএম এর ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”

রুবানা বলেন, “তাদের সাথে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য না। তবে যদি আমরা দেখি যে বিদেশি ক্রেতারা ইচ্ছা করে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চাইছে, তখন আমাদের একটি অবস্থান নিতেই হবে।”   

অস্টিন রিড ও ইয়েগারের মত পোশাক ব্র্যান্ডের মালিক কোম্পানি এডিনবরা উলেন মিল গ্রুপের একজন মুখপাত্র টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেছেন, তারা সব রপ্তানিকারকের সঙ্গেই ‘আন্তরিকভাবে’ কথা বলছেন।

“সম্ভাব্য সবগুলো বিকল্পই আমাদের মাথায় আছে। আর সমস্যা সমাধানের জন্য পোশাক সরবরাহকারী সব কোম্পানির সঙ্গেই আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু এটাও আমাদের সবাইকে স্বীকার করতে হবে যে সমস্যাটা অত্যন্ত জটিল।”

বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ এই পোশাক খাত থেকেই আসে। বাংলাদেশের চার হাজারের বেশি পোশাক কারখানার ৪০ লাখ শ্রমিকের একটি বড় অংশই নারী।

ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারি থেকেই সংকটের শুরু হয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার পশ্চিমা বিশ্বে পোশাকের চাহিদা যায় কমে।

এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ক্রেতা কোম্পানি আকস্মিকভাবে একের পর এক কার্যাদেশ বাতিল করতে থাকে। অনেকে পণ্য হাতে পেয়েও সেগুলোর দাম আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিজিএমইএর হিসাবে, কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর বাংলাদেশের ১১৫০টি কারখানার ৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। গত দুই মাস ধরে প্রায় বন্ধ রয়েছে নতুন ক্রয়াদেশ। এতে করে এসব কারখানার প্রায় ২৮ লাখ শ্রমিকের জীবনে আর্থিক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

কারখানা মালিকরা বলছেন, বিভিন্ন ক্রেতা কোম্পানির বিল বকেয়া থাকলেও তারা প্রথম নোটিসটি এডিনবরা উলেন মিল (ইডব্লিউএম) গ্রুপকে পাঠিয়েছেন, কারণ তারা এখন এই সঙ্কটের মধ্যে এসে ওই বিলের ওপর মোটা অংকের ডিসকাউন্ট দাবি করছে।

বিজিএমইএ বলছে, ডিসকাউন্টের ওই দাবি স্থানীয় আইন, আন্তর্জাতিক নিয়ম এবং নৈতিকতার লঙ্ঘন।

ইডব্লিউএমকে পাঠানো বিজিএমইএর চিঠিতে বলা হয়েছে, কোনো কোনো ক্রেতা কোম্পানি কোভিড-১৯ সঙ্কটের মধ্যে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার চেষ্টায় চুক্তির বাইরে গিয়ে অযৌক্তিক ডিসকাউন্ট দাবি করছে।

“যারা ওই ডিসকাউন্ট দাবি করছেন, তাদের মধ্যে আপনারাও রয়েছেন।… এ ধরনের ডিসকাউন্ট আর্থিকভাবে বিপর্যয় ডেকে আনবে।”

বাংলাদেশে সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বিজিএমইএর এই অবস্থানের প্রশংসা করেছেন।

টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে তিনি বলেন, পোশাক কারখানার মালিকরা বলে আসছেন, অর্ডার বাতিল হওয়ায় শ্রমিকদের বেতন দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিজিএমইএর এই অবস্থানের কারণে এখন যদি ক্রেতারা পয়সা দিতে শুরু করে, তাহলে তা কর্মীদের জন্য ভালো হবে।”