গুলশান থানায় গত ১৯ মে এই মামলা হয়েছে। তবে ঘটনাটি তারও দুই সপ্তাহ আগে ৭ মে ঘটেছিল বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এই অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, তারা অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতে তারা তদন্ত করে দেখবে।
১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার দেশের ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবিরও চেয়ারম্যান।
ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক রন হক সিকদার ও তার ভাই দীপু হক সিকদারের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিরাজুল ইসলাম।
এতে দুই ভাইর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তারা এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া এবং অতিরিক্ত এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে অপহরণ করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, রন হক সিকদার গত ৭ মে সকালে ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডিসহ গুলশানে এক্সিম ব্যাংকে আসেন। তারা তাদের প্রস্তাবিত ঋণের টাকার বিপরীতে ‘কো-লেটারেল’ হিসেবে সিকদার গ্রুপের রূপগঞ্জ কাঞ্চন প্রস্তাবিত আদি নওয়াব আসকারী জুট মিলটি পরিদর্শনের জন্য নিয়ে যান এমডি হায়দার আলী ও অতিরিক্ত এমডি ফিরোজকে।
ওই স্থানটি পরিদর্শন করেন জায়গাটির বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে গ্রাহকের বন্ধকী মূল্যের বিশাল ব্যবধান হওয়ায় এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডি দ্বিমত পোষণ করেন বলে মামলায় বলা হয়।
এরপর রন হক সিকদার পূর্বাচলে অবস্থিত তাদের অন্য প্রকল্প স্যাটেলাইট সিটিতে আইকন টাওয়ারের জায়গাটি পরিদর্শনের জন্য বলেন।
ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের জরুরি সভা থাকায় পূর্বাচলে যেতে না চাইলৌ রন হকের ‘বিশেষ অনুরোধে’ গিয়েছিলেন হায়দার ও ফিরোজ।
এজাহারে বলা হয়,“ অনুরোধ উপেক্ষা করার পরিস্থিতি না থাকায় পুরো প্রকল্পটি দেখার জন্য (তারা) ভেতরে যান। কিন্তু রাস্তা অপরিচিত হওয়ায় এবং সেখানে রন হক সিকদার এবং এনবিএলের এমডিদ্বয়ের গাড়ি দেখতে না পেয়ে এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা ঢাকার দিকে রওয়ানা হয়ে তিনশ ফিট রাস্তায় উঠার পর ঢাকামুখী রন হক সিকদার ও এনবিএলের এমডিকে দেখতে পেয়ে গাড়ি থামান।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়, সেখানেই রন হক সিকদার এক্সিম ব্যাংকর দুই নির্বাহীকে তার নিকট মাফ চাইতে বাধ্য করেন।
“তখন রন হক সিকদার গাড়ির ভিতর থেকে বসা অবস্থায় গ্লাস নামিয়ে তার পিস্তল বের করে হত্যার উদ্দেশ্যে এক্সিম ব্যাংকের এমডিকে লক্ষ্য করে গুলি করেন, যা এমডির বাম কানের পাশ দিয়ে যায়। এসময় এমডি হতভম্ব হয়ে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকেন। পুনরায় এএমডিকে লক্ষ্য করে গুলি করতে উদ্যত হলে তিনি দৌড় দিয়ে গাড়ির পেছনে আশ্রয় নিয়ে আত্মরক্ষা করেন।”
এরপর রন হক সিকদার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে এক্সিম ব্যাংকের এমডি এবং অতিরিক্ত এমডিকে গাড়িতে তুলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বনানী ১১ নম্বর সড়কের সিকদার হাউজে নিয়ে যান বলে অভিযোগ করা হয় মামলাতে।
এজাহারে বলা হয়, সেখানে রন ও দীপু জমির দাম কম বলায় এক্সিম ব্যাংকের এএমডি ফিরোজকে মারতে উদ্যত হলে তিনি মাফ চেয়ে প্রাণে বাঁচেন।
“অন্যদিকে দীপু সিকদার তৃতীয় তলায় এক্সিম ব্যাংকের এমডিকে মারতে নিচে নামার সময় এএমডি এমডির পক্ষে মাফ চান এবং তাকে না মারার অনুরোধ করেন। এরপর রন হক সিকদার ও দিপু সিকদার (এক্সিম ব্যাংকের) এমডিকে প্রজেক্টের সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী আছে ব্যক্ত করে তাদের সাথে থাকা অস্ত্র তাক করে জোরপূর্বক একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়।”
এরপর বিকালে দিপু হক সিকদারের নির্দেশে তাদের বাবা জয়নাল হক সিকদারের কাছে এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে নিয়ে ‘ফটোসেশন’ করানো হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলা করতে দেরির কারণ ব্যাখ্যা করে এজাহারে বলা হয়, “বিস্তারিত জেনে এবং ব্যাংকের কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে অভিযোগ দাখিল করতে বিলম্ব হয়।”
এই অভিযোগের বিষয়ে রন হক সিকদার ও দিপু হক সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বলেন, “মামলার ধরন দেখে তো মনে হচ্ছে, অনেক মিথ্যা তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
“ঘটনা ৭ তারিখের, অথচ মামলা করেছে ১৯ তারিখে, এখানে অনেক কিছু তৈরি করা হয়েছে। মামলায় যারা ক্ষুব্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বলা হয়েছে, তারা মামলা না করে তৃতীয় একজন মামলা করেছেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, অনেক ফাঁক-ফোকর রয়েছে। ঘটনা আদৌ সত্যি কি না, এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।”
এদিকে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম এই মামলার তদন্তভার পেয়েছেন।
তিনি মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলাটি তদন্ত চলছে।
“যে চারজন ভুক্তভোগী, তাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা কথা বলব এবং চারজনের অভিন্ন বক্তব্য ও এজাহারের উল্লেখিত অভিযোগের সত্যতা পেলেই একটা ‘পিক’ পয়েন্টে যেতে পারব।”
অভিযোগের সত্যতা কতটুকু- জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারাও ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক। ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেই প্রকৃত বিষয়টি জানা যাবে।”