ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা টেলিযোগাযোগেও

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর ক্ষতির পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটে কয়েক হাজার নেটওয়ার্ক সাইট পরিচালনায় সমস্যা পোহাতে হচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটরদের। 

শামীম আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2020, 01:22 PM
Updated : 21 May 2020, 01:25 PM

মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত টাওয়ারের প্রায় ৩০ শতাংশ বা ১৩ হাজার সাইট জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছিল না।

বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৫ হাজার মোবাইল টাওয়ার রয়েছে।

খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহীর প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মোবাইল সাইট ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছে অ্যামটব।

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্পান বুধবার রাতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যায়।

ঝড়ো হাওয়ায় বিভিন্ন জেলায় গাছ-পালা উপড়ে পড়ে, উড়ে যায় অনেক ঘরও। ঝড়ের কারণে প্রভাবে দেশের মোট গ্রাহকের প্রায় ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন্স মুহাম্মদ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টি‌ফোর ডটকমকে বলেন, “ঘূর্ণিঝড়টি আমাদের অবকাঠামোতে, বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ফাইবার ও বৈদ্যুতিক সংযোগে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে।”

সামগ্রিক ক্ষয়-ক্ষতির মূল্যায়ন করছেন জানিয়ে তিনি পর্যায়ক্রমে ওই সব অঞ্চলে সব সেবা দ্রুতই চালুর আশ্বাস দেন।

হাসান বলেন, “বর্তমানে আমাদের নেটওয়ার্কের দুই-তৃতীয়াংশ গত ১২ ঘণ্টা ধরে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে।”

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টি‌ফোর ডটকমকে বলেন, “ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে উপকূলবর্তী ও সংলগ্ন এলাকায় আমাদের প্রায় ২ হাজার ৫০০ সাইট বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে, যা পুনরায় চালু করার জন্য আমাদের টেকনোলজি টিম কাজ করে চলেছে।”

জরুরি পরিষেবা হিসেবে উপকূলবর্তী এলাকায় দ্রুততম সময়ে মোবাইল সেবা চালু করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতের ঐকান্তিক সহযোগিতা প্রয়োজন, বলেন সাহেদ আলম।

বাংলালিংকের হেড অফ কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স এন্ড সাস্টেইনিবিলিটি আংকিত সুরেকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তারা জেনারেটরের মাধ্যমে সাইটগুলো সচল রাখার চেষ্টা করছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার সাইট বিদ্যুৎ পাচ্ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের জেনারেটরের ব্যাকআপ সক্ষমতা সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। ঝড় পরবর্তী সময়ে যত দ্রুত আমরা কমার্শিয়াল পাওয়ার পাব, তত দ্রুত আমরা সাইটগুলো পুনরায় চালু করতে পারব।”

রাষ্ট্রয়াত্ত অপারেটর টেলিটক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাব উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সাইক্লোন আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রায় দুই হাজার সাইট বন্ধ রয়েছে।

“ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জেলা সদরগুলোতে বিদ্যুৎ থাকায় নেটওয়ার্কে তেমন সমস্যা না হলেও মফস্বল এলাকায় নেটওয়ার্ক সমস্যা রয়েছে।”

বিদ্যুৎ সংযোগ বা মেরামত হওয়া মাত্র নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক হয়ে যাবে এবং দ্রততার সাথে কাজ চলছে বলে জানান সাহাব উদ্দিন।   

অ্যামটব মহাসচিব এস এম ফরহাদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “সাইক্লোন আম্পান দেশের টেলিকম নেটওয়ার্ক অবকাঠামোয় অনেক ক্ষতি করেছে।

“খুলনা, বরিশাল, চাটগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহীর প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মোবাইল সাইট এই দানবীয় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে টেলিকম সেবাকে ব্যাহত করে।”

বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় মোবাইল টাওয়ারগুলো সচল রাখতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান ফরহাদ।

তিনি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার করতে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের নিরলস পরিশ্রম আমাদের জন্য অত্যন্ত উৎসাহব্যাঞ্জক।

“তবে যেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত টাওয়ারগুলি বেশিরভাগ পল্লী অঞ্চলে অবস্থিত, তাই প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে বা পুনরুদ্ধারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিশেষ সহায়তার প্রয়োজন।”