তামাক শিল্প বন্ধের অনুরোধ একটা ‘প্রেসক্রিপশন’: শিল্পমন্ত্রী

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ধূমপানে স্বাস্থ্যের ক্ষতি তুলে ধরে দেশে তামাক উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন সাময়িকভাবে বন্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধকে ব্যবস্থাপত্র হিসেবে বিবেচনা করছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2020, 12:16 PM
Updated : 20 May 2020, 03:57 PM

তিনি বলেছেন, কোভিড-১৯ মুহূর্তে তামাক জাতীয় পণ্য বেশি ক্ষতি করছে, তাই এটিকে ওষুধের ব্যবস্থাপত্র হিসেবে নেওয়া যায়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘বাণিজ্য সহায়ক পরামর্শক কমিটির’ সপ্তম সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তবে মন্ত্রীর বক্তব্যের পর দুপুরে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে সামগ্রিক বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তামাক শিল্প চালু রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে ধূমপায়ীদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে উদ্ধৃত করে এই মহামারীকালে দেশে তামাক উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন সাময়িকভাবে বন্ধ করতে মঙ্গলবার শিল্প মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এবিষয়ে জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “যেহেতু আজকের পরিস্থতিতে কোভিড-১৯ দিস ইজ অলসো আ প্রেসক্রিপশন, ইউ ক্যান টেইক ইট। এটা এখন একটা ওষুধের প্রেসক্রিপশন- এটা আরো ক্ষতি করে এই মুহূর্তে কোভিড-১৯ এ তামাক জাতীয় পণ্য ব্যবহার করা।

“তাই কথাটা হচ্ছে সরবরাহ, বিপণন সাময়িক বন্ধের নির্দেশনা। সেটা সময় হোক, আমরা পরে বসে সিদ্ধান্ত নেব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ কনসার্ন সবাই মিলে রিভিও করে সিদ্ধান্ত নেব।”

তামাক শিল্প থেকে বছরে ২৩ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা আয় হয় সেখানে একদিনের মাথায় এত বড় সিদ্ধান্তের ফলে রাজস্ব আয়ে প্রভাবের বিষয় তুলে ধরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ শিল্প চালু রাখার পক্ষে মতামত দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, তামাক শিল্পের সঙ্গে হাজার হাজার প্রান্তিক চাষি এবং শ্রমিকের কর্মসংস্থান জড়িত। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও শিল্পোন্নত দেশগুলোসহ গোটা বিশ্বে এখন পর্যন্ত তামাক শিল্প চালু রয়েছে। দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এককভাবে এ শিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। জাতীয় রাজস্ব আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ এ খাত থেকে আসে।

“এই শিল্প হুট করে বন্ধ করে দেওয়া হলে, একদিকে যেমন দেশ বিরাট অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে তেমনি বিপুল পরিমাণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগও বন্ধ হয়ে যাবে। আবার তামাক পাতা না কিনলে প্রান্তিক চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

“এছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণা দেবে। ফলে আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

ধূমপান কিংবা তামাক জাতীয় পণ্যের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও এর সেবনকারীরা তা জেনেশুনেই সেবন করছেন; এ শিল্প সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিলেও, তারা এটি সেবন করবেন বলে মনে করে মন্ত্রণালয়।

এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মোটিভেশন ছাড়া উৎপাদন বন্ধ করে ধূমপান প্রতিরোধ করা যাবে না। অধিকন্তু উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে কালোবাজারিরা উৎসাহিত হবে এবং আমদানিকৃত সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের মাধ্যমে দেশ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ও রাজস্ব আয় হারাবে বলে যুক্তি তুলে ধরেছে মন্ত্রণালয়।

এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল ধূমপায়ী ও তামাক জাতীয় পণ্য সেবীদের মধ্যে এটি পরিহারের জন্য প্রচার জোরদার করতে পারে।