দরজায় পৌঁছে দিচ্ছে জরুরি পণ্য, সেই হাত কি সুরক্ষিত?

করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য ঘরে থাকার এই সময়ে অনলাইন বা ফোনে অর্ডার করে খাদ্যপণ্যসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ বেড়েছে বহু গুণে। তবে যারা এই সেবাটি দিচ্ছেন, তারা যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন কি না, সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

সাজিদুল হকমেহেরুন নাহার মেঘলা ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2020, 10:42 AM
Updated : 12 May 2020, 02:11 PM

বিভিন্ন সুপারশপ ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসের ‘ডেলিভারিম্যানদের’ অনেকেই পিপিই পরছেন না, কারও হাত খালি, কেউ নিজের সুরক্ষার জন্য মাস্কও পরছেন না। যদিও ওই সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ‘সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ’ নিচ্ছেন তারা।

করোনাভাইরাস মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন সবই বন্ধ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নগরবাসীর অনেকেই ঘরে বসে নিত্যপণ্যের চাহিদা মেটাচ্ছেন অনলাইনে কেনাকাটা করে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সরোয়ার নিপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই অনলাইনে অর্ডার করে বাজার করছি। যেসব ডেলিভারিম্যান আসছেন তাদের কাউকেই পিপিই পরা দেখিনি। মাস্ক হয়ত পরছেন। কিন্তু সেটাও কাপড়ের। অনেকের হাতেই গ্লাভস নেই।”

ওই এলাকারই সুপারশপপ মীনাবাজারের অনলাইন সার্ভিস মীনা ক্লিকের একজন ডেলিভারি পারসন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পিপিই আমাদের দেওয়া হয়নি। তবে ফেইসশিল্ড দেওয়া হয়েছে।”

করোনাভাইরাস সঙ্কটে ঘর থেকে বের হতে না পারার কারণে বেড়েছে অনলাইনে খাবার কেনা। লকডাউনের ভেতরে বাড়ি বড়ি খাবার পৌছে দিচ্ছে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

প্রায় একই কথা বলেন অনলাইন মার্কেটপ্লেস প্রিয়শপের একজন ডেলিভারিম্যান। এই প্রতিবেদকের একটি অর্ডার ডেলিভারি দিতে এলে কথা হয় তার সঙ্গে। পিপিই, গ্লাভস না পরেই পণ্য পৌঁছানোর কাজ কেন করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অফিস থেকে মাস্ক দেওয়া হয়েছে শুধু, আর কিছুই দেওয়া হয়নি।”

সুপারশপ মীনাবাজার ঢাকা শহরে প্রায় ১০০ জন কর্মী দিয়ে বাসায় বাসায় পণ্য পৌঁছানোর কাজ করছে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহীন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাস্ক ও গ্লাভসের পাশাপাশি আমরা ডেলিভারি পারসনদের ‘ফেইসশিল্ড’ দিয়ে থাকি যেহেতু তারা বাইকে যাতায়াত করে।”

এছাড়া যে কোনো সময় হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হয় বলে জানান তিনি।

মীনাবাজারের সিইও বলেন, “ডেলিভারিম্যানদের তুলনায় যারা স্টোরে কাজ করে তারা বেশি মানুষের সংস্পর্শে এলেও উভয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা সকলকেই সমানভাবে সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহ করে যাচ্ছি। আর এতে করে ক্রেতারাও নিরাপদ থাকতে পারছেন।”

করোনাভাইরাস সঙ্কটে ঘর থেকে বের হতে না পারার কারণে বেড়েছে অনলাইনে খাবার কেনা। লকডাউনের ভেতরে বাড়ি বড়ি খাবার পৌছে দিচ্ছে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

ফুডপান্ডা থেকে বেশ কয়েকবার খাবার অর্ডার করা শ্যামলীর বাসিন্দা নওরীন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যতবার খাবার অর্ডার করেছি তাদের ডেলিভারিপারসন কাউকেই সুরক্ষা উপকরণ পরতে দেখিনি। মাস্ক ছাড়া ডেলিভারি দিতেও এসেছে কয়েকজন। তাদের প্রতিষ্ঠানের উচিত কর্মীদের এসব দিক খেয়াল রাখা।”

তবে ফুডপান্ডা বাংলাদেশের সিইও আম্বারিন রেজা দাবি করেছেন, গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থাই তারা নিচ্ছেন ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সারাদেশে সকল রাইডারদের আমরা ফেইস মাস্ক, গ্লাভস এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করেছি। প্রত্যেকবার কাজে বের হওয়ার আগে আমাদের হাব অফিসগুলোতে রাইডারদের তাপমাত্রা মেপে দেখা হয়।”

এছাড়া গ্রাহকদের সুরক্ষায় ‘সংস্পর্শবিহীন’ ডেলিভারির জন্য অর্ডার করা খাবার বাসা কিংবা অফিসের সামনে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন আম্বারিন রেজা।

তিনি বলেন, কোনো রাইডার নিয়ম না মানলে প্রয়োজনে তাকে ফুডপান্ডা প্ল্যাটফর্ম থেকে ‘নিষিদ্ধ’ করা হবে। 

অথবা ডটকমের হেড অব অপারেশন্স মাহমুদুল হক উল্লাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের প্রায় দুইশ কর্মীর জন্য ওয়াশেবল পিপিইসহ হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক এবং প্রতিদিন জনপ্রতি ৫০ এমএল হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হচ্ছে।

তবে এসব প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারি পারসনরা সব সময় সেগুলো ব্যবহার করছেন না বলে জানান অনেকে।

মাছ-মাংসসহ পচনশীল খাদ্যপণ্যের একটি অনলাইন সাইটের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করছেন আরাফাত হোসেন সিফাত।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠান থেকে পিপিইসহ গ্লাভস, মাস্ক ইত্যাদি যাবতীয় সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হলেও সব সময় পিপিই পরা হয় না। শুধু গ্লাভস-মাস্ক পরেই ডেলিভারি দিতে যাই।”

তবে ক্রেতাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে পণ্য সরবরাহ করেন বলে জানান তিনি।

করোনাভাইরাস সঙ্কটে ঘর থেকে বের হতে না পারার কারণে বেড়েছে অনলাইনে খাবার কেনা। লকডাউনের ভেতরে বাড়ি বড়ি খাবার পৌছে দিচ্ছে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পণ্য সরবরাহ করে দিনশেষে প্রতিষ্ঠান যে পারিশ্রমিক দেয় তা নিয়ে সন্তুষ্ট সিফাত বলেন, “লকডাউনের এই সময়টায় আগের চেয়ে অর্ডার বেশি আসায় দুই শিফটে ডেলিভারির কাজ করছি। তাই বেতনও আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।”

‘ই-কমার্স অনলাইন ডেলিভারি’ এবং ক্রেতাদের ফোনকলের মাধ্যমে অর্ডার দিয়ে ‘হোম ডেলিভারি’ দিয়ে আসছে সুপারশপ স্বপ্ন।

কর্মীদের সুরক্ষা নিয়ে স্বপ্নের হেড অব কমিউনিকেশন মাহাদী ফয়সাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাসপ্রবণ এলাকাগুলোতে বিশেষ করে মিরপুর আউটলেটে স্টোর কর্মীদেরও পিপিই দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এসব জায়গায় যারা হোম ডেলিভারি দিচ্ছে তাদের সকলকে পিপিই সরবরাহ করছি।”

তবে অন্যান্য এলাকাগুলোতে ডেলিভারি পারসনদের পিপিই সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

“জরুরি সরবরাহ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে যেসব এলাকায় হোম ডেলিভারির বিকল্প নেই, সেসব এলাকায় দ্রুত হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং স্টোর ও ডেলিভারি উভয় কর্মীদের জন্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে,” বলেন স্বপ্নের কর্মকর্তা মাহাদী।