ঈদের পসরা বসবে না ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকায়

সরকার সুযোগ দিলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকার বিপণি বিতানগুলোর ব্যবসায়ীরা ঈদের আগে দোকান না খোলারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2020, 05:18 PM
Updated : 8 May 2020, 05:18 PM

নিউ মার্কেট, চাঁদনী চক ও গাউছিয়া সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও এবার ঈদের আগে দোকান না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এখনও চূড়ান্ত কিছু না জানালেও তারাও দোকান না খোলার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউন চললেও ঈদের আগে আগামী ১০ মে থেকে শর্ত সাপেক্ষে প্রতিদিন বিকাল ৪টা পর্যন্ত শপিং মল ও বিপণি বিতান খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার।

তবে চার দিন আগেই শপিং মল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয় দেশের বৃহত্তম দুই প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা সিটি ও যমুনা ফিউচার পার্ক। বিপরীতে আড়ং তাদের ১৭টি বিক্রয় কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে দোকান মালিক সমিতি ঈদের আগে দোকান খোলার দাবি জানালেও সরকারের সুযোগ দেওয়ার পর সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েন ব্যবসায়ীরা।

তিনি দিন পর শুক্রবার নিউ মার্কেট এলাকার কয়েকটি বিপণি বিতানের মালিক সমিতি আলোচনার পর দোকান বন্ধ রাখার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।

নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম শাহিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিজেদের রুটি রুজির জন্য দোকানিরা স্বল্প পরিসরে হলেও চালু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন দিনে দিনে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় তারা সাহস করছেন না। সে কারণে আমরা ঈদের আগে দোকানগুলো না খোলার পক্ষেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

“কর্মচারী ও নিজের সংসারের খরচ বহনের জন্য দোকান না খুলেও উপায় নেই। আবার নিজের নিরাপত্তা, ক্রেতার নিরাপত্তা এবং সামগ্রিকভাবে দেশের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে এই পরিস্থিতিতে দোকান খোলার কোনো সুযোগ দেখছি না।”

গত বছর ঈদের কয়েক দিন আগে নিউ মার্কেট এলাকা ছিল এমন সরগরম (ফাইল ছবি)

পাশের চাঁদনী চক ও গাউছিয়া সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও একই পথে হাঁটছেন।

চাঁদনী চক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিন বলেন, “আমরা এখনও দোকান চালু করার সিদ্ধান্ত নিইনি। দোকান চালু করলে যদি ক্রেতা আসে, তাহলে হয়ত সাম্প্রতিক ক্ষতিগুলো কিছুটা রিকভারি করা যাবে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কাস্টমারই বা কেন আসবে? আমরা তো কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।”

ঢাকার ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতাদের বড় একটি অংশ সামলায় নিউ মার্কেট এলাকার বিপণি বিতানগুলো।

চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মনজুর আহমেদ মঞ্জু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই পরিস্থিতিতে দোকান চালু রাখার কোনো সুযোগ নেই। তারপরেও কেউ যদি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দোকান চালু করতে চায়, তাদেরকে সেই অনুমোদন দেওয়ার পক্ষে ছিলাম আমরা। কিন্তু পাশে নিউ মার্কেট, গাউছিয়া ও চাঁদনী চকের ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা যাতে খোলার ঘোষণা না দিই, সেই অনুরোধও করেছেন। তাই আমরা আগামীকাল পর্যন্ত সময় নিচ্ছি।”

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, “আসলে সবার পক্ষে এই পরিস্থিতিতে বেচা-কেনা চালানো সম্ভব নয়। তবে পাড়া-মহল্লায় কিছু ছোটখাটো দোকান তো খোলা থাকবে।”

সহযোগিতা চান ব্যবসায়ীরা

এই সঙ্কটকালে টিকে থাকার জন্য ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন ক্ষুদ্র এই ব্যবসায়ীরা।

নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহিন বলেন, “এই পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য এবং কর্মচারীদের বেতনভাতা দেওয়ার জন্য ক্ষুদ্র দোকান মালিকদেরও কিছু নগদ অর্থ প্রয়োজন।

স্বাভাবিক অবস্থায় ঢাকার মিরপুর ২ নম্বরের এই ফ্যাশন হাউজগুলোতে থাকে উপচেপড়া ভিড়। করোনাভাইরাসের কারণে মার্কেট বন্ধ থাকায় এখন সেখানে কেবল সুনসান নিরবতা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

“অন্যান্য সেক্টরের মতো আমরা কোনো প্রণোদনা চাচ্ছি না। সরকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আকারভেদে তিন থেকে ১৫ লাখ টাকার ঋণ দিতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্যান্য খাতের জন্য যে ধরনের ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেই ধরনের ঋণই আমাদের জন্য যথেষ্ট।”

এই ঋণ পেলে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই ব্যবসায়ীরা অর্থ পরিশোধ করে দিতে পারবে বলে মনে করেন শাহিন।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে বিপণি বিতান ও দোকানে কোনো বেচা-কেনা নেই। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও লকডাউন পরিস্থিতির শিকার। এই অবস্থায় সরকারি ঋণের বিকল্প নেই।

“তবে সেটা কী পরিস্থিতিতে, কীভাবে নেওয়া হবে, সেটা নিয়ে আরও বিস্তারিত চিন্তা করা হচ্ছে। এই সঙ্কট কতদিন দীর্ঘ হতে পারে সেই ব্যাপারটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।”

“১০ মের পর কী পরিমাণ দোকানপাট চালু হয় তা দেখে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে,” বলেন হেলাল।

পরিসংখ্যার ব্যুরের জরিপের বরাত দিয়ে দোকান মালিক সমিতি জানায়, সারাদেশে প্রায় ৩০ লাখ বিপণি বিতানসহ প্রায় ৫৬ লাখ ক্ষুদ্র দোকান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ কর্মচারী রয়েছে।