পোশাক রপ্তানি তলানিতে

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারী বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বয়ে এনেছে নজিরবিহীন বিপর্যয়।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2020, 02:23 PM
Updated : 5 May 2020, 02:23 PM

এ খাতের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে উভেন ও নিট মিলিয়ে মাত্র ৩৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই অংক গত বছরের এপ্রিলের ২৪২ কোটি ডলারের আয়ের তুলনায় ৮৫ শতাংশ কম।

শেষ কবে এক মাসে এ খাতে ৫০ কোটি ডলারের কম রপ্তানি হয়েছিল, তা তাৎক্ষণিকভবে মনে করতে পারলেন না বিজিএমইএ কর্মকর্তারা।

বিজিএমইএ সচিব মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে বিদেশি ক্রেতারা অনেক ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন। পোশাক কারখানাও বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন। ফলে রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে গেছে।”

তিনি জানান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে এপ্রিল মাসের রপ্তানি পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। তার আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে তারা এপ্রিল মাসের রপ্তানির ওই তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

এমনিতে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে তারা হালনাগাদ তথ্য দিলেও লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকায় গত মার্চ মাসের তথ্য ইপিবি প্রকাশ করেছিল ১৮ এপ্রিল।

গতবছর ডিসেম্বরের শেষে চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে কাঁচামাল আনা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাতে ফেব্রুয়ারি থেকেই প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল। এরপর শুরু হয় ক্রয়াদেশ বাতিলের হিড়িক। মার্চ মাসে এসে রাপ্তানির অংকে ধস স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ওই মাসে ২২৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা আগের বছরের মার্চের চেয়ে ২০ শতাংশ কম ছিল। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) মধ্যে সেটিই ছিল বড় ধাক্কা। এপ্রিলে তা প্রায় তলানিতে পৌঁছে গেল।

সামনে শুধুই অনিশ্চয়তা

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে- তা কেউ বলতে পারে না। আর পরিস্থিতি ভালো হলেই যে মানুষ আগের মত পোশাক কিনবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

“দীর্ঘদিন সবকিছু বন্ধ থাকার কারণে কাজকর্ম নেই। মানুষর হাতে টাকা না থাকলে পোশাক কিনবে কী দিয়ে?”

পরিস্থিতি কতটা খারাপ হবে বলে মনে করছেন- এই প্রশ্নে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জানি না ভাই, কী যে হবে… দেখতেই তো পাচ্ছেন…।”

আর নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন মানুষের হাতে আর কিছু নেই।”

# দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে।

# জুলাই-মার্চ পর্যন্ত সময়ে এ খাতে আয় হয়েছে ২ হাজার ৪১০ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।

# এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ১২ শতাংশ কম।

# এই নয় মাসে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি ৮২ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করে। তাতে প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ৪ শতাংশ। এরমধ্যে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলার।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার। এরমধ্যে পোশাক রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ১৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার উভেন থেকে এবং ১৮ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার নিট থেকে আসবে বলে আশা করা হচ্ছিল।

জুলাই-মার্চ সময়ে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে ১১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। উভেন থেকে আয় হয়েছে ১২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।

এই নয় মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে নিট পোশাক রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর উভেন থেকে রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ।