করোনাভাইরাসের মহামারীতে লকডাউনের মধ্যে অভূতপূর্ব এক পরিস্থিতিতে রোজার দিন কাটছে এবার। ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে জনসমাগম এড়াতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার নীতি সব কিছুকে পাল্টে দিয়েছে।
রোজার জন্য বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করে ঢাকা মহানগর পুলিশ দোকানপাট খোলা রাখার সময় দুই ঘণ্টা বাড়ানোর পাশাপাশি হোটেল-রেস্তোরাঁয় ইফতার সামগ্রী বিক্রিরও অনুমতি দিলেও বেশিরভাগই বন্ধ রয়েছে। বেইলি রোড ও গুলশান এলাকার কয়েকটি রেস্তোরাঁ খোলা রয়েছে।
বন্ধ রাখার পেছনে রেস্তোরাঁ চালাতে পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব ও লকডাউনের কারণে ক্রেতা সংকটে সম্ভাব্য ক্ষতির পাশাপাশি ফুটপাতে ইফতারির প্রদর্শন নিষিদ্ধ করাসহ বেশ কিছু কারণ দেখাচ্ছেন মালিকরা।
ডিএমপি বলেছে, নগরীর ‘প্রতিষ্ঠিত রেস্তোরাঁগুলো’ ইফতারি তৈরি ও বিক্রি করতে পারবে। তবে কেউ ফুটপাতে কোনো ধরনের ইফতারির পসরা সাজিয়ে প্রদর্শন বা কেনাবেচা করতে পারবেন না।
রেস্তোরাঁয় ইফতার সামগ্রী বিক্রির সময় ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। রেস্তোরাঁগুলো ইফতারি বিক্রির অনুমতি পেলেও কেউ সেখানে বসে খেতে পারবে না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েকটি কারণ রয়েছে যেমন কর্মচারী চলে গেছে আর পার্সেল ছাড়া বিক্রি করা যাবে না, ইফতারির প্রদর্শন করা যাবে না।
“ইফতারি সাজিয়ে না রাখলে কেউ কিনতে চায় না। আবার পার্সেল কতজন মানুষ কিনবে? তাছাড়াও মানুষের মুভমেন্টও অনেক কম করোনাভাইরাসের কারণে।”
তাই ঢাকা শহরের প্রায় আট হাজার রেস্তোরাঁর প্রায় ৯৭ শতাংশই বন্ধ রয়েছে বলে তিনি জানান।
বেইলী রোড, গুলশান ও বনানীতে কিছু দোকান খোলা হয়েছে। কিন্তু বাহারি ইফতারের জন্য বিখ্যাত পুরান ঢাকার কোনো বড় রেস্তোরাঁ খোলা হয়নি।
রুহুল আমিন বলেন, “কর্মচারীরা আসতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমরা নিষেধ করছি । কারণ রাস্তাঘাটে আসতে গিয়ে আবার যদি ছোঁয়াচে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটায়। তাই সবকিছু স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রেস্তোরাঁ পুরোদমে চালু করতে চাচ্ছি না।”
তবে নয়াবাজার জিন্নাত হোটেলের মালিক মো. জিন্নাত বলেন, “চালু করতে চাই। কিন্তু ২৬ জন কর্মচারীর একজনও নেই, সবাই বাড়িতে চলে গেছে এবং আসতেও চাচ্ছে না।”
চকবাজারের শাহজাহান বেকারির মালিক মো.ফারুক বলেন, ৪০ জন কর্মচারীর মধ্যে পাঁচজন রয়েছে। বাকি সবাই চলে গেছেন। সরকার ঘোষণা দেওয়ার পর শুধু পাউরুটি আর টোস্ট বিস্কুট তৈরি করছি এই পাঁচজনকে দিয়ে।
“ইফতারি তৈরি করার মত জনবল নেই। অন্যান্য সময় ৬০ রকম বেকারি খাদ্য তৈরি করা হতো এবং প্রায় ১৫ রকম ইফতারির সামগ্রী তৈরি করা হতো। পাঁচজন শ্রমিক দিয়ে দুটি প্রয়োজনীয় খাদ্য তৈরি করছি।”
চকবাজারে শাহী ইফতারির বাজারে এখন হাঁক-ডাক নেই: নেই মানুষের আনাগোনা। তবুও আলাউদ্দিন সুইটমিট পুলিশের ঘোষণা পর কিছু ইফতার সামগ্রী তৈরি করে বিক্রি করছে। এছাড়া শাহী মসজিদের সামনে আর কোনো দোকান খোলা দেখা গেল না।
চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, “রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের বলেছি, ইফতারি বিক্রি করতে। কিন্তু কেউ রাজি হচ্ছে না। কারো কর্মচারী নেই, কেউ অন্য কথা বলছে। একেক জনের একেক হিসাব।”
বংশাল থানার ওসি শাহীন ফকিরও বলেন, “রাজ্জাক হোটেলসহ পুরান ঢাকা কিছু বিখ্যাত রেস্তোরাঁ রয়েছে,যেসব রেস্তোরাঁর ইফতারি নেওয়ার জন্য মানুষের ভিড় লেগেই থাকতো। এবার সব রেস্তোরাঁই বন্ধ রয়েছে।”