রোজার বাজারে ডাল-আদার দাম চড়া

অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে অনেক পণ্যের দাম কমলেও রোজা ঘিরে অস্বাভাবিক বেড়েছে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2020, 03:54 PM
Updated : 24 April 2020, 03:54 PM

হঠাৎ করে ডাল ও আদা দাম চড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। অপরদিকে রোজা উপলক্ষে ক্রেতা চাহিদা বেড়ে যাওয়ার তুলনায় পণ্যের সরবরাহ না থাকার কথা বলছেন বিক্রেতারা।

শুক্রবার রমজান মাসের নতুন চাঁদের দেখা মেলায় পরদিন শনিবার থেকে রোজা শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের মুসলমানদের।

রোজা সামনে রেখে বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে বলেন, খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কেউ পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কারসাজি করতে চাইলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তার পরদিনই ঢাকার বাজারগুলোতে আদা ছাড়াও মসুর ডালের দাম বেড়ে গেছে।সপ্তাহখানেক ধরে সব ধরনের আদার দাম বেড়ে প্রতিকেজি ৩৬০ টাকায় পৌঁছেছে, যা সাধারণত ১২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে থাকে।

এদিন মোটা দানার মসুর ডালের কেজিও ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে, যা সাধারণত ৬০-৭০ টাকায় মুদি দোকানগুলোতে পাওয়া যায়।

হঠাৎ করে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে ক্রেতাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে জানিয়ে মিরপুর পীরেরবাগের মুদি দোকানি ঝন্টু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লকডাউনের কারণে এমনিতেই দোকান খোলা যাচ্ছে না। এর মধ্যে আদার দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। মসুর ডাল যেগুলো গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ৫৫ টাকা বিক্রি করতাম এখন একশ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

“দেশি চিকন জাতের ডাল আগের মতোই প্রতিকেজি ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।”

শ্যামলীর মুদি দোকান শ্যামলী স্টোরের বিক্রেতা আল আমিন বলেন, বিভিন্ন স্থানে লকডাউনে আটকা পড়া মানুষদের মাঝে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। সেই ত্রাণের মধ্যে অন্যতম উপাদান হিসাবে স্থান পাচ্ছে মোটা দানার মসুর ডাল।

“হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই মসুর ডালের দাম বেড়ে গেছে। অন্য কথায় বলতে গেলে পাইকারি বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।”

তার দোকানে আদা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৩০ টাকায়, পেঁয়াজ ৫০ টাকায়, দেশি রসুন ১৬০ টাকায়।

তবে লকডাউন শুরুর আগেই অনেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেনাকাটা করায় এখন রোজার সময় দোকানে ক্রেতাদের তেমন ভিড় নেই।

ঢাকার বাসাবোর বউবাজারের ক্রেতা সিদ্দিকা সুলতানা শিরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোজা সামনে রেখে এক দিনের মধ্যেই শসার দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। গতকালকে শসার দাম ছিল ৩০ টাকা আজকে শসা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির দাম ১১৫ টাকা হলেও গরু বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা দরে। আদা গত কয়েক দিন ধরে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা দরে।

“বলতে গেলে রোজাকেন্দ্রিক সব পণ্যের দামই তো বাড়ছে। তাহলে প্রশাসনের নজরদারির ফলটা কোথায়?”

কাঠালবাগান বক্স কালভার্ট রোডের অভি কনফেকশনারীর তাপস পাল জানান, তারা আলু বিক্রি করছেন ২৫ টাকা কেজি। পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, আর আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি।

ইস্কাটনের রাশেদ স্টোরের রাশেদুল হক জানান, চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি, লবণ ৩৮ টাকা, আটা ৩৫ টাকা, ময়দা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, গুড়া মরিচ ৪০০ টাকা এবং গুড়া হলুদ ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন তারা।

হঠাৎ আদার দাম এত বেড়েছে কেন জানতে চাইলে শ্যামবাজারে পাইকারি বিক্রেতা ইদ্রিস আলী মধু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদার আমদানি কমে যাওয়ার কারণেই সংকটটা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্কট বুঝতে পেরে আমদানিকারক অকারণে একের পর এক নিজেদের মধ্যে কৃত্রিমভাবে হাত বদল করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

“শ্যামবাজারের পাইকারি দোকানে আদা ছাড়া অধিকাংশ পণ্যের মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪০ টাকা, রসুন প্রতি কেজি ৯০ টাকা থেকে ১২০ টাকা এবং আদা ২৪০ টাকা থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”

এদিকে আদার মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে দোকানিদের জরিমানা করা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই আদার আমদানি মূল্য প্রতি কেজি ‘একশ টাকার বেশি পড়ছে না’। সেখানে দুইশ টাকার বেশি বিক্রি করা কোনো যুক্তিতে পড়ে না।