আপাতত কারখানা চালুর ‘চিন্তা নেই বিজিএমইএর’

চলতি মাসের শেষ দিকে বিশেষ ব্যবস্থায় শ্রমিকদের কর্মস্থলে এনে কিছু পোশাক কারখানা চালুর পরিকল্পনা নিলেও তা থেকে সরে এসেছে বিজিএমইএ।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2020, 05:35 PM
Updated : 17 April 2020, 05:38 PM

পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠনের সভাপতি রুবানা হক শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতা জারির পর ওই পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়েছে।

আপাতত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে নাগরিকদের ঘরে রাখতে সব ধরনের যান চলাচল ও কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখেছে সরকার। সেই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ পোশাক কারখানাও।

মাঝে এক দফা বাড়িয়ে আগামী ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। সেই সময়সীমা শেষ হলে কিছু কারখানা চালু করার জন্য ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রংপুর ও বগুড়া অঞ্চলের শ্রমিকদের নিরাপদে কর্মস্থলে নিয়ে আসতে পরিবহনের ব্যবস্থা করার জন্য বিআরটিসির চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখেছিলেন রুবানা হক।

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক (ফাইল ছবি)

সেই চিঠির প্রেক্ষিতে উদ্বেগ জানিয়ে আপাতত কারখানা না খোলার ব্যবস্থা নিতে সরকারের দাবি জানিয়েছে বামপন্থি দলগুলোর জোট গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যজোট।

দেশে প্রতিদিনই নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এই সময়ে পোশাক কারখানা চালু হলে ভয়ানক অবস্থা তৈরি হবে বলে সতর্ক করেন তারা।

দেশে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৬৬ জনের মধ্যে নভেল ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৩৮ জনে। এই ভাইরাসে এরইমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৭৫ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন মাত্র ৫৮ জন।

আগের দিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পুরো দেশকে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে। ওই ঘোষণার পরেই ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক।

শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, “কিছু দিন আগে দেখা গেছে গণপরিবহনের অভাবে শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছিল।এবারের পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল, শ্রমিকদের ফিরে আসার সময় একটি নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

“গত ১৫ এপ্রিল বিজিএমইএর পক্ষ থেকে চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল, যাতে আমরা সময়ের আগেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারি। কিন্তু ১৬ তারিখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশকে মহামারীর ঝুঁকি ঘোষণার পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। বিজিএমইএ সঙ্গে সঙ্গে ওই চিঠি বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছে। আপাতত সব পরিকল্পনা বাদ রাখা হয়েছে।”

রুবানা হক বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হলে শ্রমিকদের নিরাপদে আসার বিষয়ে আবার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

“সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেই সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আপাতত আমাদের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার হচ্ছে, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা।”

বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, “দেখা যাচ্ছে, কারখানা চালু করার আগে আমাদের নিরাপদ থাকতে হবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে বুঝতে পারব, কারখানা খোলার সঠিক সময় কোনটি। কিন্তু এই মুহূর্তে শ্রমিক ও নিজেদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তাই একমাত্র অগ্রাধিকারের বিষয়।”

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চলমান লকডাউনের মধ্যে এ মাসের প্রথম সপ্তাহে কারখানা চালু করতে গিয়ে এক বিপর্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কর্মস্থলে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার শ্রমিক পায়ে হেঁটে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিল।

বিষয়টি নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন পোশাক শিল্প মালিকরা। বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

বেতন দিয়েছে ৯১ ভাগ কারখানা: বিজিএমইএ

ঢাকার ১৫৩টি ও চট্টগ্রামের ৫০টি কারখানা ছাড়া বিজিএমইএ’র তালিকাভুক্ত সব কারখানায় বেতন পরিশোধ করা হয়েছে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে।

বিজিএমইএ শুক্রবার বলছে, তাদের সদস্য দুই হাজার ২৭৪টি কারখানার মধ্যে দুই হাজার ৭১টি কারখানা মার্চের বেতন পরিশোধ করেছে। এর মানে হচ্ছে ৯১ শতাংশ কারখানা বেতন পরিশোধ করেছে, যা গতকাল বৃহস্পতিবার নির্ধারিত শেষ দিনে ছিল ৮২ শতাংশ।

“শ্রমিকদের সংখ্যার বিচারেও ৯৬ শতাংশ শ্রমিক ইতোমধ্যেই বেতন পেয়েছেন। বেতন পেতে বাকি রয়েছে আরও এক লাখ শ্রমিক।”

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যে ২০৩টি কারখানা বাকি রয়েছে তারাও আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে বেতন পরিশোধ করবে বলে তিনি আশা করছেন।