ক্রেতাদের চাপ সামলাতে অনলাইন কেনাকাটার প্ল্যাটফর্মগুলোর হিমশিম অবস্থা, সময়মত ডেলিভারি না পাওয়া, পছন্দের পণ্য না পাওয়া, অনলাইনে অর্ডার দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়া- এমন সব ঝক্কি শুরু হয়েছে।
সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, অর্ডারের চাপে নাজেহাল তারা। ডেলিভারি দেওয়ার মানুষ না থাকা এবং ওয়েবসাইটের ধারণক্ষমতার চেয়ে চাপ পড়ার কারণে তারা সমস্যায় পড়েছেন। ইচ্ছা থাকলেও দিতে পারছেন না কাঙ্ক্ষিত সেবা।
মিরপুরের শ্যাওড়াপাড়ার বাসিন্দা আরহাম ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, “স্বপ্নের ওয়েবসাইটে কিছু মুদি মাল অর্ডার করতে ঢুকেছিলাম। আমার বাসার কাছেই স্বপ্নের একটি আউটলেট আছে, অথচ ওয়েবসাইটে বলছে আমার ঠিকানার কাছে ওদের কোনো স্টোর নেই। বাধ্য হয়ে আমাকে বাইরে বেরোতে হয়েছে।”
সেগুনবাগিচার বাসিন্দা নাসরিন আক্তার বলেন, “আমার ব্যাংক থেকে এসএমএস পাচ্ছি যে, একটি সুপারশপ থেকে অনলাইনে অর্ডার করলে ছাড় পাব। আমি তো অর্ডারই করতে পারছি না। ওই সুপারশপের ওয়েবসাইটেই ঢুকতে পারছি না। তারা ডেলিভারির যে টাইম স্লট দিচ্ছে সেটাও ওয়েবসাইটে নিচ্ছে না।”
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, “চালডাল-এ (অনলাইন শপ) অর্ডার করলে ৪-৫ দিনের আগে ডেলিভারি দিচ্ছে না। আমি তো সবসময় বুঝতে পারছি না যে ৪-৫ দিন পরে আমার কোন কোন জিনিস শেষ হয়ে যাবে।
চালডাল ডটকমের বিষয়ে একই অভিযোগ করেছেন আরও কয়েকজন।
এ বিষয়ে জানতে চালডাল-এ যোগাযোগ করা হলে তারা ইমেইল করতে বলে। গত ৫ এপ্রিল ইমেইলে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো উত্তর দেয়নি।
সম্প্রতি ই-কমার্স সাইট প্রিয়শপ ডটকম এর সাথে মিলে স্কয়ার টয়লেট্রিজ শুরু করে ‘ফ্রি হোম ডেলিভার’ ক্যাম্পেইন।
কিন্তু এই প্রতিবেদক হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ কয়েকটি পণ্য অর্ডার করার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর যোগাযোগ করলে কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি চাঁদনী বলেন, এক সপ্তাহের আগে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হবে না।
পণ্যের যোগান না থাকাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
সুপারশপ মীনা বাজারের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম মীনাক্লিকেও অর্ডার করে অনেকে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মীনা বাজারের প্রধান নির্বাহী শাহীন খান বলেন, “ওয়েবসাইটে ভিজিটর বেড়ে গেছে অনেক। এটা একটা কারণ। যারা আমরা অনলাইনে অর্ডার নিয়ে পণ্য সরবরাহ করি তাদের প্রত্যেকেরই সক্ষমতার চেয়ে অর্ডার পড়ছে অনেক বেশি।
“মীনাক্লিকে এখন অর্ডার করলে ১৩ এপ্রিলের আগে আপনি ডেলিভারি পাবেন না। আমরা আরও দ্রুত করার কাজ করছি। ওয়েবসাইটের ক্যাপাসিটির চেয়ে হিট পড়ছে অনেক বেশি। আর লোকবলের সমস্যাও আছে। ২৫ তারিখ ছুটি ঘোষণার পর অনেকে চলে গেছে। আমরা এর মধ্যেই লোকবল সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। আশা করছি শিগগিরই এটা সমাধান হয়ে যাবে।”
অনলাইন কেনাকাটার প্ল্যাটফর্ম ‘অথবা ডটকম’ এর হেড অব অপারেশনস উল্লাস হক বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্ডার আগের তুলনায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। ডেলিভারির ক্ষেত্রে আমরা কাস্টমারের কাছ থেকে সময় নিচ্ছি। এছাড়া কিছু করার নেই।”
অন্যদিকে একটি অনলাইন শপের ডেলিভারিম্যান আমিরুল ইসলাম জানান, পণ্য ডেলিভারি দিতে গিয়ে তিনি পুলিশি বাধার মুখে পড়েছেন।
“খাবার বা নিত্যপণ্য ডেলিভারি লকডাউনের বাইরে বলে জানতাম। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় বাধা পাচ্ছি। পুলিশকে অনেক সময় বললেও শোনে না। লাঠির বাড়িও মেরেছে।”