বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেন পোশাক কারখানা মালিক হেলেনা জাহাঙ্গীর

দেশে ‘লকডাউন’ চলা অবস্থায় কারখানা চালুর সমালোচনাকারীদের তুলোধুনো করার পরদিন সুর বদলে ক্ষমা চেয়েছেন পোশাক কারখানা মালিক হেলেনা জাহাঙ্গীর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2020, 06:22 PM
Updated : 5 April 2020, 06:22 PM

ফেইসবুক লাইভে এসে কারখানা চালু রাখার পক্ষে যুক্তি দেওয়ার পরদিন রোববার আরেক লাইভে এসে আগের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চান তিনি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হেলেনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার তিনটি কারখানা রয়েছে। আমি সেগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে যেহেতু বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি তাই খোলা রাখার পক্ষে বলেছিলাম। এটা নিয়ে অনেকেই আমাকে ভুল বুঝেছেন। সরকার যতদিন চাইবে ততদিন কারখানা বন্ধ থাকবে।

“যে কোনো পরিস্থিতিতে সরকার কারখানা বন্ধের নির্দেশ না দিলে মালিকরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কারখানা বন্ধ করলে তা বায়ার বা বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো মেনে নিতে চান না। সে কারণে আমরা কারখানা বন্ধ রাখার বিষয়ে আগে একমত হতে পারিনি। এখন যেহেতু বিজিএমইএ বলেছে এখন কারখানা বন্ধ থাকবে।”

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সরকার সারা দেশে ছুটি ঘোষণা করে ঘরে অবস্থানের কর্মসূচি দিলে কিছু পোশাক কারখানাও ছুটি ঘোষণা করে। তবে ৪ এপ্রিল লকডাউন চলার মধ্যেই কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত নেন অনেক মালিক। আকস্মিক এমন সিদ্ধান্তে পর যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে শত শত কিলোমিটর দূরের পথ থেকে নিজ নিজ কারখানার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন শ্রমিকরা।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার এই সময়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির ফলে তীব্র সমালোচনা হয় দেশজুড়ে।

শনিবার রাতেই সব কারখানা মালিককে আবার ছুটি ঘোষণা করার আহ্বান জানান বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক। তারপর কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দেন বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমানও।

রুবানা হকের ওই ঘোষণা আসার ঘণ্টা দেড়েক আগে শনিবার রাত ৮টার দিকে ফেইসবুক লাইভে এসে হেলেনা বলেন, “আমাদের অনেক অর্ডার এখনও হাতে রয়ে গেছে, আমরা ইচ্ছা করলেই গার্মেন্টস বন্ধ করতে পারি না। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক জনগণ বলছে, আমরা করোনায় মরতে চাই, আমরা না খেয়ে মরতে চাই না। আমরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় মরতে চাই না, আমরা ভাইরাসে মরতে চাই।

“আপনারা যারা মালিকদের নিয়ে তর্কবিতর্ক করেন- এই কথাগুলো কি আপনারা শোনেন না? আপনাদের তো আসলেই শোনা উচিত যে, আসলে জনগণ কী বলছে। জনগণের খাবারটা কে দেবে? আপনারা যারা বড় বড় কথা বলেন সোশ্যাল মিডিয়াতে, আপনারা কি জনগণের খাবার দিচ্ছেন? আপনারা ১০টা শ্রমিকের খাবার দেবেন না, একশটা শ্রমিকের বেতন নিশ্চয় দেবেন না। সো, আপনারা বড় কথা বলতে আসবেন না। যারা শ্রমিক পালে, যারা গার্মেন্টস চালায়, তারাই শ্রমিকদের বেতন দেবে, তারাই ভাতা দেবে।”

ওই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে রোববার রাতে লাইভে এসে আরও কিছু অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা টেনে আনতে দেখা যায় হেলেনাকে।

তিনি বলেন, “গতকালের লাইভ নিয়ে যারা আমার সমালোচনায় তোলপাড় শুরু করেছেন তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি। হয়ত আপনাদের বোঝার ভুল, অথবা আমার বলার ভুল। ভুল দিয়েই মানুষের শুরু হয়। আমরা ভুল করি বলেই আমরা মানুষ। আমার কথাগুলো ছিল ওভারঅল সিচুয়েশন নিয়ে, আমি শ্রমিক, মালিক, সরকার কিংবা অন্য কারো পক্ষে বলিনি।

“শ্রমিকদের ছুটি দিলাম, তাদের বলা হয়েছে যার যার অবস্থানে থাকতে। কিন্তু তারা চলে গেছেন গ্রামে। গ্রামে গিয়ে তারা যদি একটা দিন অপেক্ষা করতেন তাহলে এখনকার সিদ্ধান্তটা জেনে যেতেন। কিন্তু তারা সেখানেও থাকলেন না আবার চলে আসতে শুরু করলেন। একদিন পরে আসলে আমরা কখনও চাকরি খেতাম না।”

শ্রমিকদের বেতন দিয়েছেন বলে ফেইসবুক লাইভে জানালেও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে হেলেনা বলেন, “স্যালারি দেইনি। তবে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”

নারায়ণগঞ্জের অন্তত তিনটি কারখানার মালিক হেলেনা জাহাঙ্গীর বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ছাড়াও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সদস্য।

হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে থাকেন। মাঝে মাঝেই তাকে ফেইসবুক লাইভে এসে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায়। তবে এর আগেও ফেইসবুক লাইভে ‘ঝামেলার জন্য’ পরে ক্ষমা চেয়েছেন এই নারী উদ্যোক্তা।

গত বছর এক ইফতার মাহফিলে জন্মদিন উদযাপন ও রোমান্টিক গান পরিবেশন করতে গিয়েও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল হেলেনাকে। একই বছর দেশের প্রবীণ একজন টেলিভিশন মালিকের সঙ্গে গানের অফার পেয়েছেন বলে ফেইসবুকে পোস্ট দেন হেলেনা। পরে ওই পোস্টের জন্য তাকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছিল বলে গণমাধ্যমের খবর।