ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের পক্ষে রোববার সকালে নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আরিফুর হক রোকন।
বাণিজ্য ও শ্রম সচিব ছাড়াও তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের অফিসিয়াল ই-মেইলে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই আইনজীবী।
নভেল কারোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হঠাৎ পোশাক শ্রমিকদের ঢাকায় ফেরানোর পেছনে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে নোটিশে।
নোটিশে বলা হয়েছে, “যেহেতু করোনাভাইরাস বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করেছে। বৈশ্বিক এ সঙ্কটে অনেক দেশই লকডাউন করতে বাধ্য হচ্ছে। দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে সরকার আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি জনসাধারণকে এই সময় ঘরে থাকতে বলেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধের পাশাপাশি সরকার জনসাধারণকে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব রাখার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
“কিন্তু এ পারিস্থিতিতেও সরকারের আদেশ, নির্দেশ অমান্য করে বিভিন্ন গার্মেন্ট মালিক রোববারের মধ্যে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও এ নির্দেশের কারণে রোববার দেশের নানা অঞ্চল থেকে শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে, ট্রাক ভাড়া করে, ফেরিতে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এসেছে অনেক শ্রমিক রোববারের আগেই ঢাকায় পৌঁছেছে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে কারখানা মালিকদের এ নির্দেশনা শ্রমিক ও ঢাকার মানুষদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলেছে।”
নোটিশে বলা হয়, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্যমতে কোভিট-১৯ এর সংক্রমণ ঠেকাতে হলে সামাজিক-শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি ঘরে অবস্থান করতে হবে। কিন্তু শ্রমিকরা যদি কাজে যোগ দেয় তাহলে তারা আরও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে।”
আইনজীবী রোকন শ্রম আইনের ৫৬ (১) ধারা উদ্বৃত করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ শ্রম আইনে শ্রমকিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। উপযুক্ত কর্মপরিবেশের কথা বলা হয়েছে আইনে। শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কর্মস্থলে অতিরিক্ত ভিড় এড়ানোর কথাও বলা হয়েছে আইনে। তাছাড়া সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদে জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ করা আছে।
“গার্মেন্ট মালিকরা শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা স্পষ্টভাবেই সংশ্লিষ্ট আইন, সংবিধানের লঙ্ঘন।”
শ্রম আইনের ৫৬ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোন প্রতিষ্ঠানের কোন কর্ম-কক্ষে উহাতে কর্মরত শ্রমিকগণের স্বাস্থ্য হানি হয় এই প্রকার অতিরিক্ত ভিড় করা যাইবে না।
আর সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, (১) সকল প্রকার জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধ; এবং এই বিধান কোনোভাবে লংঘিত হইলে তাহা আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে।
(২) এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই সেই সকল বাধ্যতামূলক শ্রমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না, যেখানে
(ক) ফৌজদারী অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তি আইনতঃ দণ্ডভোগ করিতেছেন; অথবা
(খ) জনগণের উদ্দেশ্যসাধনকল্পে আইনের দ্বারা তাহা আবশ্যক হইতেছে।
নোটিশদাতা ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি।
২৪ ঘণ্টার সময় দিয়ে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্টরা গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা না নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন নোটিশদাতা।
নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম সচিব কে এম আলী আজম বলেন, নোটিশটি তিনি এখনও হাতে পাননি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে কখনও বলা হয়নি যে, কারখানা বন্ধ বা খোলা রাখার বিষয়টি। কারখানার মালিকদের বলা হয়েছে পিপিই, মাস্ক তৈরি এবং জরুরি যদি কারো অর্ডার থাকে সেসব মালিক- শ্রমিক আলোচনা করে সরকারের সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখতে। তবে শর্ত থাকে মালিক-শ্রমিক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। আর আমাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা হল, খোলা রাখতে হলে পারফেক্টলি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।”
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এই কর্মকর্তা বলেন, “বর্তমানে সরকার যে বিষয়টির ওপর বেশি জোর দিচ্ছে তাহলো শ্রমিকদের বেতন। তারা যাতে সবাই বেতন পায় সেই বিষয় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।”
এদিকে এই অবস্থার মধ্যে হাজার হাজার পোশাক শ্রমিকের ঢাকায় ফেরার খবর নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে শনিবার রাতে সব পোশাক কারখানা আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক।