শ্রমিক ছাঁটাই করবেন না, মালিকদেরকে কলকারখানা অধিদপ্তরের চিঠি

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে শুরু হওয়া সঙ্কটের মধ্যে অনেক শিল্প মালিক শ্রমিক ছাঁটাই করে কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জানতে পেরে তা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2020, 07:56 AM
Updated : 5 April 2020, 07:56 AM

শিল্প ও শ্রমিকদের সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করার পরও এ ধরনের কর্মহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা থেকে মালিকপক্ষকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায়।

গত শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের বরাবর লেখা ওই চিঠির অনুলিপি বাণিজ্য সচিব, শিল্প সচিব, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক, বিভাগীয় কমিশনার, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের নেতাদেরও দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাব ইতোমধ্যে বাংলাদেশে শ্রমিকের জীবনমানের নিরাপত্তাসহ শিল্প-কারখানার সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে পড়েছে। নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে দেশ ও বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট সঙ্কটের ফলে গত ১৯ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এক হাজার ৯০৪টি বন্ধ তৈরি পোশাক কারখানায় ২১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৭৮ জন শ্রমিক এবং অন্যান্য ১৪৮৬৪টি বন্ধ কারখানা শিল্প কারখানায় ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫৩ জন শ্রমিকসহ মোট ৩২ লাখ ৮ হাজার ৬৩১ জন শ্রমিক কর্মহীন রয়েছেন।

চিঠিতে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে শিবনাথ বলেন, এই বিরূপ প্রভাব থেকে উত্তরণে সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম দফা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে, পরবর্তীতে তা ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।

“পর্যাপ্ত কার্যাদেশ (অর্ডার) না থাকায় কিংবা কার্যাদেশ স্থগিত হওয়ায় অথবা শিপমেন্ট বাতিল হওয়ায় বেশিরভাগ তৈরি পোশাক শিল্প কলকারখানা ৪ এপ্রিল পর্যন্ত শ্রম আইনের ১২ ও ১৬ ধারা মেনে বন্ধ (লে অফ) ঘোষণা করে। সরকার ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বর্ধিত করলেও অধিকাংশ কারখানা পূর্বঘোষিত ৪ এপ্রিলের পরে আর ছুটি বর্ধিত করেনি। ৫ এপ্রিল থেকে কারখানা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন কিছু শিল্প গ্রুপের মালিকরা শ্রমিক ছাটাই করবেন মর্মে জানিয়েছেন।”

শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, “পবিত্র রমজান মাস ও ঈদুল ফিতর আসন্ন। এই অবস্থায় শ্রমিক ছাঁটাই করলে একদিকে যেমন তাদের জীবনধারণ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে তেমনি স্বাভাবিক সময়ে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে পড়বে, যা পরবর্তিতে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।

“এমতাবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শিল্পকারখানার মালিকদের শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও যথোপযুক্ত কার্যক্রম প্রদানের জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।”

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনে দেশ; রোববার থেকে গার্মেন্ট খোলা, টঙ্গী এলাকার একটি গার্মেন্টের সামেনে টানানো নোটিস দেখছেন কয়েকজন কর্মী। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ২০ মার্চের পর থেকে ১১০৪টি পোশাক কারখানায় তিন বিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ স্থগিত বা কোনো ক্ষেত্রে বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

বাংলাদেশে লকডাউন পরিস্থিতিতে ৯০ ভাগ কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও সক্ষমতার তুলনায় সামান্য কার্যাদেশ নিয়ে চালু রয়েছে কিছু কারখানা। তবে এমন পরিস্থিতিতে কারখানা চালু রাখা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও রয়েছে।

দেশজুড়ে অবরুদ্ধ দশার মধ্যেই কিছু কারখানা প্রথম দফার ছুটি শেষে ৫ এপ্রিল থেকে কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শ্রমিকরা পাঁয়ে হেঁটে নিজ নিজ কর্মস্থলের পথে যাত্রা করে। মানুষের এসব ভোগান্তির ছবি গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

এমন পরিস্থিতিতে সরকার সবধরনের গণপরিবহন বন্ধের সময় ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিলে শনিবার মধ্যরাতে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক ও বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমানএক জরুরি ঘোষণায় সব পোশাক কারখানা একই সময় পর্যন্ত বন্ধ রাখতে মালিকদের প্রতি অনুরোধ করেন ।

এদিকে দেশের চলমান পরিস্থিতি ও লকডাউন উপেক্ষা করে বিজিএমইএ যেসব কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা থেকে সরে আসতে সংগঠনটির সভাপতিকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন-পবা’র সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আরিফুল হক রোকনের মাধ্যমে বাণিজ্য সচিব, শ্রম সচিব, বিজিএমইএ সভাপতি ও এফবিসিসিআই সভাপতিকেও উকিল নোটিস পাঠানো হয়েছে।