কারখানা বন্ধ রাখতে বলল বিজিএমইএ-বিকেএমইএ

সমালোচনার মুখে সব ধরনের পোশাক কারখানা আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2020, 04:19 PM
Updated : 4 April 2020, 07:40 PM

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সারা দেশে যখন অবরুদ্ধ অবস্থা চলছে, সেই সময়ে কারখানা খোলার ঘোষণায় বিভিন্ন জেলা থেকে পায়ে হেঁটে ঢাকার পথ ধরেন হাজার হাজার পোশাক শ্রমিক।  

এই খবর প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা ঝড় শুরু হয়। শ্রম ঘন লাখ লাখ শ্রমিকের পোশাক কারখানায় অতি সংক্রামক করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ জানান অনেকে।

এই পরিস্থিতিতে শনিবার রাতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় গার্মেন্ট মালিকদের প্রতি কারখানা বন্ধ রাখার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার জন্য সব কারখানা মালিক ভাই-বোনদের বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

“একই সাথে শ্রমিক ভাই-বোনদের এটাও আশ্বস্ত করতে চাই যে, তারা তাদের মার্চের বেতন পাবেন। এটা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার কারণে কোনো শ্রমিক যাতে চাকরিচ্যুত না হন সবপক্ষকে এই অনুরোধটুকু করছি।”

পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের সংগঠনভুক্ত সব কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানান।

মালিকপক্ষের কারখানা চালু ও বন্ধের এই দুই সিদ্ধান্তের কারণে হাজার হাজার শ্রমিকের ঘর থেকে বেরিয়ে দলবেঁধে রাস্তায় চলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এর দায় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

বাংলাদেশে বিজিএমইএর অধীনে ৩২০০ এবং বিকেএমইএর অধীনে ২২০০ কারখানা চালু আছে বলে দুই সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে। এসব কারখানায় ৪০ লাখের মতো শ্রমিক কাজ করেন বলে মালিকরা দাবি করে আসছেন।

দেশে করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সব অফিস-আদালতে ছুটি ঘোষণা করা হলেও পোশাক কারখানার বিষয়ে কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেয়নি সরকার। তবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ অধিকাংশ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত দিলে অনেক শ্রমিক বাড়ি ফিরে যান।

শনি ও রোববার কিছু কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত শোনার পর শুক্রবার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকার পথে রওনা হন পোশাক শ্রমিকরা। চলমান লকডাউনে দেশের রেলপথ, সড়কপথ, আকাশপথ ও নদীপথে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের বেশিরভাগই হেঁটে রওনা হন।

এরপর শনিবারও দিনভর দূর দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফিরে আসার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও ইতিবাচক উত্তর মিলছিল না রুবানা হকের কাছ থেকে। বিষয়টি তার এখতিয়ারের মধ্যে নেই বলেও বার বার বুঝিয়ে দিতে চাইছিলেন তিনি। এছাড়া সরকারি সংস্থাগুলোও যে কারখানা বন্ধ করতে বলেনি সেকথা বলতে থাকেন তিনি।

“বিজিএমইএর কোনো ক্ষমতা নেই ফ্যাক্টরি খোলা বা বন্ধ করার। তার পরেও গতবার আমি অনুরোধ করেছিলাম। তখনও সাথে সাথে এটাও বলতে হয়েছে যে, যারা পিপিই বানান এবং যাদের ক্রয়াদেশ রয়েছে তারা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে কারখানা চালাতে পারেন। শ্রম মন্ত্রণালয়, কল-কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরও একই কথা বলেছে,” বলেন রুবানা হক।

পায়ে হেঁটে শ্রমিকদের ফিরে আসার কথা তুলে ধরে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক বিজিএমইএ নেতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে মানবিক বিপর্যয়ের এই সময়ে মালিকরা শ্রমিকদের উপর ‘নির্যাতন চালাচ্ছেন’।

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক (ফাইল ছবি)

বেশ ঝাঝাল কণ্ঠে এই কথার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা।

তিনি বলেন, “আমি শ্রমিকদের ওপর কোনো অত্যাচার-অবিচার করিনি। আমার ওপর এর দায় চাপাবেন না। দয়া করে এ বিষয়ে আর কোনো প্রশ্ন তোলা থেকে বিরত থাকুন। আমাদের উদ্দেশ্য থাকবে সমস্যার সমাধান করা, কারও দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা আমাদের লক্ষ্য নয়। এখন আমাদের টিকে থাকার প্রশ্ন, দয়া করে বিভক্তি সৃষ্টি করবেন না।”

যারা পায়ে হেঁটে ঢাকায় ফিরছেন তারা পোশাক শ্রমিক কি না সে বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করেন বিজিএমইএ সভাপতি।

তিনি বলেন, “২৫ তারিখে গণপরিবহন বন্ধ হয়েছে, আমরা কারখানা বন্ধ দিয়েছি ২৬ তারিখে। অধিকাংশ শ্রমিক ফ্যাক্টরির আশপাশে থাকে। যারা ঢাকায় ফিরছে তারা যে পোশাক শ্রমিক এমনটি ধরে নেবেন না।”

তিনি একথা বললেও বস্তুত ২৬ এপ্রিল সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার পরেও যানবাহন চলছিল। সে সময় হাজার হাজার মানুষের ঢাকা ছাড়ার চিত্র সামনে আসার পর সমালোচনার মুখেই যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

শনিবার রাত ১০টার দিকে কারখানা বন্ধের ওই বার্তা দেওয়ার ঘণ্টা দেড়েক আগের এক বার্তায় অনুপস্থিতির জন্য শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত না করতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান রুবানা হক।

সেখানে তিনি বলেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আদেশে বলা হয়েছিল, যেসব রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ক্রয়াদেশ আছে এবং যারা পিপিই বানাচ্ছেন সেসব মালিকরা শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে কারখানা চালু রাখতে পারেন।

“শ্রমিক যদি সঙ্গত কারণে উপস্থিত না থাকেন, তাহলে মানবিক বিবেচনায় তারা চাকরি হারাবেন না মর্মে মালিকদের অনুরোধ করব।”

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন এই পরিস্থিতিতে পোশাক কারখানা খোলার সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছেন বলে খবর প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।

রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির কথা মাথায় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে অনুরোধ জানান মেয়র খোকন।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক বিবৃতি বলা হয়, “বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে লক্ষ লক্ষ গার্মেন্ট কর্মী শহরে প্রবেশ করছে। এর ফলে করোনা পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে বহু নাগরিক ফোন করে মাননীয় মেয়রকে অবহিত করেছেন।

“এর প্রেক্ষিতে এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।”

এরপরে বিজিএমইএ সভাপতির মালিকদের প্রতি সরকারি ছুটির ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানোর ওই বার্তা আসে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনে দেশ; রোববার থেকে গার্মেন্ট খোলা, টঙ্গী এলাকার একটি গার্মেন্টের সামেনে টানানো নোটিস দেখছেন কয়েকজন কর্মী। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

মালিকদের পক্ষ থেকে নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সামগ্রী হিসাবে জরুরি ভিত্তিতে পিপিই বানানোর প্রয়োজনে কারখানা খোলার কথা বলা হলেও মূলত কিছু বিদেশি ব্র্যান্ড বা ক্রেতার কার্যাদেশ পালন করতেই ঝুঁকি নিয়ে কারখানা চালু রাখা হচ্ছে।

বিজিএমইএর উদ্যোগে অন্তত ১৪টি শিল্পগ্রুপ বা কারখানার সমন্বয়ে মাত্র ২০ হাজার পিপিই তৈরির একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যদিও এরইমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে স্মার্ট জ্যাকেট নামের একটি প্রতিষ্ঠান অর্ধ লক্ষাধিক পিপিই সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দিয়েছে। মোট এক লাখ পিপিই তৈরির কাজে হাত দিয়েছে স্মার্ট জ্যাকেট।

নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এখন লকডাউন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনার যে আদেশ দিয়েছিলেন তার অধিকাংশই তারা স্থগিত রেখেছেন। পরিস্থিতি ভালো হলে এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হবে বলেও কেউ কেউ জানাচ্ছেন।

বিজিএমইএর হিসাবে গত ১৫ দিনে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ স্থগিত করেছেন ক্রেতারা। ফলে অধিকাংশ কারখানাই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। যাদের কিছু কিছু কার্যাদেশ রয়েছে তারাই বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সেই কাজ সম্পন্ন করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।

‘দায় নিতে হবে’ বিজিএমইএকে

হাজার হাজার শ্রমিকের দলবেঁধে ঢাকার পথে এই যাত্রা এবং সিদ্ধান্ত বদলে শ্রমিকরা আবার বাড়ির পথ ধরলে সরকারের নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে এবং রোগটির বিস্তার বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সেজন্য ঢাকায় আসা শ্রমিকরা যেন আর ফেরত না যায় সে ব্যবস্থা তৈরি করতে পোশাক মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন, যিনি কোভিড-১৯ মহামারী ঠেকাতে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে সরকারকে সহযোহিতা করছেন।

বিএমএর কার্যনির্বাহী কমিটির এই সদস্য রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিজিএমইএর ‘ভুল সিদ্ধান্তের’ দায় তাদেরই নিতে হবে।

“আমার পরার্মশ হল, তারা যদি বাড়ি ফিরে যায় তাহলে তারা যেন সেইফলি পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে যেতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আর যদি তারা ঢাকায় থাকে তাহলে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করলে তারা আর গ্রামে যাবে না।”

মুশতাক হোসেন বলেন, শ্রমিকরা বাড়ি যাওয়ার সময় একবার একটা ঝুঁকি তৈরি করেছে। এখন আসার পথে আরেকবার ঝুঁকি তৈরি করেছে।

“এখন তারা যদি আবার গ্রামে যায়, আবার ফিরে আসে তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি তো আরও বেশি বেড়ে যাবে।”

 

তৈরি পোশাক কারখানা মালিকরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছেন বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. তৌফিক জোয়ার্দার।

তিনি  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাস ঠেকাতে সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে বিজিএমইএর এসব কাজ সাংঘর্ষিক।

“একবার তাদের আসতে বলা, থাকতে বলা, আদৌ তাদের যেতে বলা হবে কি না- এই পুরো বিষয়টি নিয়ে সমন্বয়হীতার ব্যাপার। যে কোনো মহামারীকে যুদ্ধের মতো চিন্তা করতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্তহীনতা খারাপ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।”

তিনি বলেন, “মহামারী কোনো প্রশাসনিক ইস্যু নয়, হেলথ ইস্যু। এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ খাতের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এটা বিজিএমইএ নিলেও এটা জেনে বুঝে নিতে হবে।”

হাজার হাজার পোশাক শ্রমিকদের এই যাতায়াত চলমান পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

তৌফিক জোয়ার্দার বলেন, “তারা যতবার যাতায়াত করবে, ততবার সামাজিক দূরত্ব ভেঙে কাছাকাছি চলে আসবে। ততবারই জীবাণুটা ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ বেড়ে যাবে।

“এই যে হাজার হাজার শ্রমিক আসল, এদের মধ্যে কেউ যদি সংক্রমিত হয়ে থাকে তাহলে সেটা তার মধ্যে আর থাকবে না। আরও অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে যাবে। এই শ্রমিকরা কিন্তু এক জায়গায় বসে থাকবে না। তাদেরকে চাল-ডাল কেনাসহ নানা কাজে বের হতে হবে। কারখানায় যেতে হবে। সেখানেও রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।”

যারা ঢাকায় চলে এসেছে তাদের কোনোভাবেই আর ঢাকার বাইরে যেতে না দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

তৌফিক জোয়র্দার বলেন, “ভুল সিদ্ধান্ত যদি বিজিএমইএ নিয়ে থাকে তার মাশুল তাদেরই দিতে হবে।

“পাঁচ দিন যদি শ্রমিকরা বসে থাকে তাহলে এর ক্ষতিপূরণ বিজিএমইএকে দিতে হবে। এর দায় তো শ্রমিকরা নিতে পারে না।”