৬ মাসের মধ্যে দেশেই চিকিৎসকদের পিপিই তৈরির আশা

পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও চিকিৎসকদের সুরক্ষা পোশাক পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট-পিপিইর মতো সামগ্রী তৈরির অভিজ্ঞতা ছিল না বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2020, 06:23 PM
Updated : 29 March 2020, 06:23 PM

এখন নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যুক্ত চিকিৎসকদের সুরক্ষা পোশাক তৈরির কাজে হাত দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য পিপিই তৈরির চিন্তা এসেছে কারখানা মালিকদের।

বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক রোববার এক বার্তায় বলেন, বাংলাদেশে এতদিন পর্যন্ত মেডিকেল গ্রেড বা ডব্লিউএইচও স্ট্যান্ডার্ডের পিপিই তৈরি হত না। এখন জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক পর্যায়ের (লেভেল ওয়ান) ২০ হাজার পিপিই তৈরি করতে গিয়ে তারা দেখছেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে লেভেল ৩/৪ বা চিকিৎসকদের ভাইরাসপ্রতিরোধী পিপিই তৈরির ‘সক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব’।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমণ বাংলাদেশে ধরা পড়ার পরই চিকিৎসা সামগ্রীর অপ্রতুলতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পিপিই না পেয়ে দেশের অনেক স্থানে চিকিৎসকরা চাকরি ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন।

মহামারীর কারণে সারা বিশ্বেই বেড়ে গেছে পিপিইর চাহিদা। এই পরিস্থিতিতে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ ২০ হাজার পিপিই তৈরির উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছে। সংগঠনটির সদস্যভুক্ত বিভিন্ন কারখানা স্ব উদ্যোগী হয়ে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য এই পোশাক তৈরি করে দিচ্ছে। আর এতে ফেব্রিক্স ও অন্যান্য কাচামাল দিয়ে সহায়তা করছে পোশাক কারখানার বাইরের কিছু সেচ্ছাসেবী সংগঠন। 

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, “আমাদের দেশের পোশাক প্রস্ততকারকরা সাধারণত পিপিই তৈরি করেন না। মেডিকেল গ্রেড বা ডব্লিউএইচও স্ট্যান্ডার্ডের ফেব্রিক চীন থেকে আমদানি করতে হয়। হাসপাতালে ব্যবহারের উপযোগী পিপিই তৈরি করতে হলে কারখানাগুলোতে বায়ু প্রতিরোধী সেলাই মেশিনসহ আরও কিছু যন্ত্রপাতি বসাতে হবে। 

“এছাড়া কারখানায় জীবাণুপ্রতিরোধী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কর্মীদেরকে কিছু প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সনদ অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশি কারখানাগুলোর জন্য এই কাজগুলো করতে অন্তত ছয় মাস সময় প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কভিড-১৯ রোগ দেখা দেওয়ার পর থেকেই পিপিই স্যুইটের সঙ্কট দেখা দেয়। শুধু চিকিৎসকদের জন্য নয়, নার্স, হাসপাতালকর্মী এমনকি বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক কর্মীদের জন্যও পিপিইর প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বিজিএমইএর সদস্যরা ২০ হাজার পিপিই তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে কেবলই বিতরণের জন্য।

“আমরা এখন যা তৈরি করছি সেটা হবে লেভেল-১ পিপিই। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত ডাক্তারদের জন্য প্রয়োজন হবে লেভেল-৩/৪ মানের পিপিই। এছাড়া আমাদের পিপিইগুলো স্বীকৃত নয়। এটা কেবল শতভাগ পানিরোধী পোশাক। এর ডিজাইন আসল পিপিইর মতোই। এগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা সহকারীরা ব্যবহার করবে। এছাড়া এখনকার পরিস্থিতিতে যেসব চিকিৎসকরা তাদের নিয়মিত কাজে যোগ দিতে ভয় পাচ্ছেন তারাও ব্যবহার করতে পারবেন,” বলেন ‍রুবানা।

বিজিএমইএ কর্মকর্তারা জানান, যেসব ফেব্রিক দিয়ে পিপিইগুলো তৈরি করা হচ্ছে সেগুলো ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন পেয়েছে।

বিজিএমইএর সদস্য খান মনিরুল আলম বলেন, “বর্তমানে আমাদের অনেক সদস্য কারখানা এই ২০ হাজার পিপিই তৈরির উদ্যোগে এগিয়ে এসেছে। যাদের হাতে কাপড় রয়েছে তারা কাপড় দিচ্ছে, যাদের হাতে কাপড় নেই কেউ তৈরিতে অবদান করছে। বিজিএমইর সদস্য কাপড়ের কারখানাগুলোও কম মূল্যে কাপড় বিক্রির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে। এসব পিপিই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হবে।”

রুবানা হক জানান, বর্তমানে প্রচলিত কাপড় দিয়ে পিপিই তৈরি করা হলেও আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে চীন থেকে পিপিই তৈরির কাপড় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে আরও ভালো মানের পিপিই তৈরি করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে।

মূল লক্ষ্য রপ্তানি

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতে পিপিই রপ্তানির সক্ষমতা অর্জন করতে চাচ্ছেন রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার মালিকরা।

রুবানা হক বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশে পিপিই রপ্তানি করা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা কাজটি শুরু করতে চাই। ইতোমধ্যে আইএলও, ডব্লিউএইচও, ডব্লিউএফপি, ইউনিসেফ ও অন্যান্য সংগঠনের একটি জোটের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। আমাদের বর্তমান সক্ষমতাকে কিভাবে পিপিই তৈরির সক্ষমতায় রূপান্তর করা যায় সেই সহযোগিতা তাদের কাছে চাওয়া হচ্ছে। তারা সাপ্লাই চেইন ও কারিগরি জ্ঞান দুই দিক থেকেই সহায়তা করবে।”

দেশের জন্য পিপিই তৈরির সঙ্গে যুক্ত একজন কারখানা মালিক বলেন, পিপিইর আন্তর্জাতিক বাজার সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। পিপিইর মূল ফেব্রিক চীনেই উৎপাদিত হয়, তারাই সারা বিশ্বে এই পণ্যগুলো রপ্তানি করে থাকে। তিনিসহ আরও কিছু বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।