ভাইরাস আতঙ্কে বাজারে ক্রেতাদের চাপ

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় ঢাকার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে, অনেকেই চাহিদার চেয়ে বেশি পণ্য কিনে নিচ্ছেন বলে বাজার তদারককারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2020, 01:06 PM
Updated : 18 March 2020, 04:29 PM

তবে দেশে খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে জানিয়ে ভাইরাস আতঙ্কে অতিরিক্ত পণ্য মজুদ না করার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রী।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশে চাল ও গমের মজুদ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রয়েছে। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে কেউ দাম বাড়াতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আমদানি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি। তাই আমদানি করা পণ্যের সংকট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত বাজারে হামলে পড়লে কেউ কেউ তার সুযোগ নিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে মন্তব্য করে সে বিষয়ে ক্রেতাদের সতর্ক করেছেন তিনি।

এদিকে অতিরিক্ত পণ্য থেকে লোকজনকে বিরত রাখতে মাঠে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মীরা।

বুধবার রাজধানীর আগারগাঁও, মিরপুর, মহাখালী এলাকার কাচাবাজার ও মুদি দোকানগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ক্রেতাদের বেশি ভিড় দেখা যায়।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় বুধবার ঢাকার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে গত অন্য দিনের তুলনায়।

মিরপুরে চেইনশপ প্রিন্স বাজারের কর্মকর্তা সোহাগ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত তিন দিন ধরে তাদের এখানে ক্রেতার চাপ বেড়ে গেছে। কেনাকাটার পরিমাণও দুই থেকে তিন গুণ বেড়েছে।

“আগে যারা ১০ কেজি চাল কিনতেন এখন ২০ থেকে ৩০ কেজি কিনে নিচ্ছেন। ডাল নিচ্ছেন ৩-৪ কেজি। আমরা যতটা সম্ভব কমিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যেই সরবরাহ ব্যবস্থায় কিছুটা ধাক্কা লেগেছে।”

পীরেরবাগের মুদি দোকানি জহিরুল ইসলাম ভূইয়া জানান, মানুষজন চালের ওপর বেশি হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। কালকে মিরপুরে সারা দিন চেষ্টা করে ১২ বস্তা চাল কিনেছিলেন।

“দোকানের সামনে আসার আগেই অনেকে বায়না দিয়ে ফেলেছেন। ওই চাল আর দোকানে তুলতে পারিনি। ভ্যানগাড়ি থেকেই বিভিন্ন ক্রেতার বাসায় চলে গেছে।”

গত এক সপ্তাহে খুচরায় প্রতিকেজি মিনিকেটে, আটাশ ও অন্যান্য চালে ২ থেকে ৩ টাকা করে বেড়েছে বলে জানান জহিরুল।

বর্তমানে যে মিনিকেট চালের কেজি ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে তা গত সপ্তাহে ৫২ টাকা ছিল বলে জানান তিনি।

মিরপুরের জননী রাইস এজেন্সির বিক্রেতা মহিউদ্দিন জানান, বাজারে যেভাবে ক্রেতার চাপ বেড়েছে তাতে মিল মালিকরা সপ্লাই দিয়ে পারছেন না। এ কারণে আপাতত চালের দাম বস্তায় ৫০ টাকার মতো বেড়েছে।

“তবে অচিরেই এ সমস্যা কেটে যাবে। কারণ পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। মজুদ থাকা অবস্থায় বিক্রি যতই বাড়ুক সঙ্কট হয় না। তাছাড়া বৈশাখ মাসেই আসছে নতুন ধান,” বলেন তিনি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে ক্রেতারা কেনাকাটায় খুবই অস্থিরতা দেখাচ্ছেন। এক ব্যক্তি ৬ কেজি গুঁড়া দুধ কিনেছেন, যদিও তার প্রয়োজন ছিল এক কেজি।

“আমরা ঢাকার বাজারগুলোতে গিয়ে ক্রেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি অতিরিক্ত মজুদ না করার জন্য। অধিদপ্তরের সাতটি দল নিউ মার্কেট, হাতিরপুল, শান্তিনগর, খিলগাঁও তালতলা, বাসাবো, মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার মার্কেট, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, মিরপুর শাহ আলী মার্কেট এলাকায় ঘুরেছে।”

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় বুধবার ঢাকার মিরপুরের চালের দোকানে বেড়েছে বিকিকিনি।

করোনাভাইরাস আতঙ্কে বাজারে চালের দাম বাড়ার খবরের মধ্যেই ‘যথেষ্ট মজুদ’ থাকার কথা জানিয়ে অভয় দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

তিনি বলেছেন, সরকারি গুদামে বর্তমানে সোয়া ১৪ লাখ টন চাল মজুদ আছে। সুতরাং চাল-গম নিয়ে ভোক্তাদের ‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’।

পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।

বাজার মনিটরিং নিয়ে বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বই আক্রান্ত হয়েছে।

“চাল ও গম নিয়ে ভোক্তারা যেন আতঙ্কিত না হয়। কোনো ব্যবসায়ী বা মিলার যদি এটাকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে তবে সরকার ও খাদ্য মন্ত্রণালয় কোনো ক্রমেই চুপচাপ বসে থাকবে না।”

খাদ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে সরকারি গুদামে ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ৪৯৫ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এর মধ্যে তিন লাখ ১৯ হাজার টন গম। এর বাইরে ‘পাইপলাইনে’ রয়েছে আরও দুই লাখ মেট্রিকটন গম। গতবার এই সময়ে ১৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫২৩ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল।

ওএমএস-এর চাল বিতরণের জন্য ইতোমধ্যে ডিলারদের চিঠি দেওযা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আটা বিক্রি চলছে এবং চলবে, ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”

এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “কোনো পণ্যের মজুদ-সরবরাহ কম নেই। অতিরিক্ত পণ্য কিনে অহেতুক বাজারে অস্থিরতা তৈরি করবেন না। প্রত্যেকটি পণ্যের যথেষ্ট মজুদ আছে। জনগণ মনে করতে পারে সমস্যা হবে, কিন্তু আসলে কোনো সমস্যা হবে না।

“কারণ করোনাভাইরাসের কারণে নিত্যপণ্য আমদানিতে কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং অন্যন্য বছরের চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ আমদানি বেশি হয়েছে। কাজেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”

গত এক মাসে পেঁয়াজ, রসুন ও মশুর ডালসহ কয়েকটি খাদ্যপণ্যের দাম কমার কথাও তুলে ধরেন তিনি।