চালের মজুদ ‘যথেষ্ট’, অভয় দিলেন খাদ্যমন্ত্রী

করোনাভাইরাস আতঙ্কে বাজারে চালের দাম বাড়ার খবরের মধ্যেই ‘যথেষ্ট মজুদ’ থাকার কথা জানিয়ে অভয় দিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2020, 09:59 AM
Updated : 18 March 2020, 09:59 AM

তিনি বলেছেন, সরকারি গুদামে বর্তমানে সোয়া ১৪ লাখ চাল মজুদ আছে। সুতরাং চাল-গম নিয়ে ভোক্তাদের ‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’।

পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।

বাজার মনিটরিং নিয়ে বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বই আক্রান্ত হয়েছে।

“চাল ও গম নিয়ে ভোক্তারা যেন আতঙ্কিত না হয়। কোনো ব্যবসায়ী বা মিলার যদি এটাকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে তবে সরকার ও খাদ্য মন্ত্রণালয় কোনো ক্রমেই চুপচাপ বসে থাকবে না।”

খাদ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে সরকারি গুদামে ১৭ সাখ ৩৯ হাজার ৪৯৫ মেট্রিক টন খাদ্যশষ্য মজুদ আছে। এর মধ্যে তিন লাখ ১৯ হাজার টন গম। এর বাইরে ‘পাইপলাইনে’ রয়েছে আরও দুই লাখ মেট্রিকটন গম। গতবার এই সময়ে ১৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫২৩ মেট্রিক টন খাদ্যশষ্য মজুদ ছিল।

ওএমএস-এর চাল বিতরণের জন্য ইতোমধ্যে ডিলারদের চিঠি দেওযা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আটা বিক্রি চলছে এবং চলবে, ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুধবার ব্যবসায়ীদের চিঠি দেওয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “ব্যবসায়ীরা বাড়তি পুঁজি করতে চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে ব্যবস্থা নেব তাতে আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) আমাদের বাহবাই দেবেন।”

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার স্কুল বন্ধের পাশাপাশি জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলার পর অনেকে ভবিষ্যতের সঙ্কটের শঙ্কায় খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বেশি বেশি কিনে বাসায় মজুদ করছেন এবং তার ফলে চালের দাম চড়তে শুরু করেছে বলে খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে।

তবে এই মুহূর্তে ভোক্তারা একসাথে কতটুকু খাদ্যশষ্য কিনতে পারবেন তা নির্ধারণ করে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “সিলিং নির্ধারণ করে দিতে চাই না। কারণ তা করলে মানুষ মনে করবে না জানি কি আছে! (বিদেশ থেকে) মানুষ আসা বন্ধ হয়েছে, তবে পেঁয়াজ আসছে, প্রয়োজনে চাল ঢুকিয়ে দেব, অত চিন্তার কোনো কারণ নেই। এক মাস ১০ দিন পর ধান পাব। ২৫ দিন পর হাওরের ধান পাব, এত চিন্তার কোনো কারণ নেই।”

সরকারি মজুদের থেকে আট থেকে ১০ গুণ বেশি ধান-চালের মজুদ বেসরকারি পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রকৃত ব্যবসায়ী ও মিলারদের উচিত মানবতার প্রশ্নে আল্লাহকে হাজির-নাজির রেখে মানুষের আরও সেবা দেওয়া। সেখানে কেউ যদি পুঁজি করে বাড়তি সুবিধার চেষ্টা করে… রোজা সামনে রেখে কোনো অবৈধ ব্যবসা যাতে না করতে পারে সে বিষয়ে সচেষ্ট আছি।

“ভোক্তাদের আমি বলতে চাই, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কোনোক্রমেই কোনো ব্যবসায়ী বা মিলার যদি উদ্বৃত্ত ব্যবসার চেষ্টা চালায় কোনোক্রমেই ছাড় দেওয়া যাবে না। কেউ যদি মজুদ রেখে কষ্টে ফেলার চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাইরে থেকে চাল আমদানি করে বাজার পরিস্থিতি ঠিক রাখা হবে বলে আশ্বাস দেন খাদ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “কোনো প্রকার চালের ঘাটতি নেই, অযথা এক মাসের জায়গায় তিন মাসের ক্রয় করার কোনো প্রয়োজন নেই, এটা আমরা নির্দ্বিধায় বলছি। এই সুযোগে করোনাকে পুঁজি করে বাজারে এমন কথা ছড়ালে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

“বাজারে ২৫টি মনিটরিং টিম আছে। প্রয়োজনে এটাকে আরও বৃদ্ধি করে মনিটর করব। আমরা শক্ত অবস্থানে আছি, কোনোক্রমেই এটাকে নিয়ে বাজে ব্যবসা করতে দেওয়া যাবে না।”

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “আল্লাহকে একটু ভয় করেন, মানুষকে ভালোবাসেন, মানুষকে সেবা দেন, দেশের প্রতি একটু আনুগত্য স্বীকার করেন, দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলেন এটাই আমাদের মেসেজ।”

খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।