পণ্য রপ্তানি কমছেই। প্রতি মাসেই কমছে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক
Published : 07 Mar 2020, 09:33 PM
প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক, চামড়াসহ সব খাতের অবস্থাই করুণ; আলো দেখাচ্ছে একমাত্র পাট।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বৃহস্পতিবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৬৯ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার আয় করেছে।
এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে কিনা- তা নিয়ে সংশ্রয় প্রকাশ করেছেন তারা।
ইপিবি’র তথ্য ঘেটে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে সবমিলিয়ে ২ হাজার ৬২৪ কোটি ১৮ লাখ (২৬.২৪ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম।আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
পাটের তৈরি এসব পণ্য রপ্তানিও হয়। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান
তবে এই হতাশার মধ্যেও ‘সুখবর’ দিচ্ছে পাট। পাট ও পাট পণ্য রপ্তানিতে কয়েক বছর ধরেই খারাপ সময় যাচ্ছিল। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাত থেকে ৮১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ২০ শতাংশ কম।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাট ও পাট পণ্য রপ্তানি করে এক হাজার ২৬ কোটি (১ দশমিক ০২ বিলিয়ন) ডলার বিদেশী মুদ্রা আয় করেছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ওই একবারই এ খাতের রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৯৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। তার আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসেছিল ৯২ কোটি ডলার।
চলতি অর্থবছরের পাট খাত থেকে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮২ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
পাট পণ্যের প্রদর্শনীর একটি স্টলে দর্শক। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান
শনিবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এটা অবশ্যই ভালো খবর যে, সব খাতের রপ্তানি যখন কমছে; তখন পাটের বাড়ছে। তবে এখানে মনে রাখতে হবে যে, পরিমাণের দিক দিয়ে কিন্তু রপ্তানি বাড়েনি। যেটা বেড়েছে সেটা দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে।আমাদের পাট ও পাটজাত পণ্যের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশের মতো বেড়েছে।কাঁচা পাটের দাম বেড়েছে আরও বেশি ৩০ শতাংশের মতো।”
বিশ্বব্যাপী পলিথিনের ব্যবহার কমায় পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বেড়েছে বলে জানান তিনি।
“ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।আমরা আমাদের ‘সোনালী আঁশ’ পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারি; যদি এ খাতের দিকে একটু নজর দেই।
“মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ছাড়া আর মাত্র একটি-দুটি দেশে পাট উৎপন্ন হয়। বিশ্ব যতো বদলাবে পাট পণ্যের চাহিদা ততোই বাড়বে।পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশগুলো এ পথে অগ্রসর হবে।”
ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান
বিষয়টি ব্যাখা করে তিনি বলেন, “দাম বাড়ায় এখন আমাদের ব্যবসায়ীরা প্রচুর কাঁচাপাট আমাদের মিলগুলোর কাছে বিক্রি না করে ভারতে রপ্তানি করছে।এতে আমরা পাটের অভাবে ব্যাগ, থলে, বস্তাসহ অন্যান্য পাটজাত পণ্য উৎপাদন করতে পারছি না।এখানে কাঁচাপাটের যে বেশি দাম সেটা কিন্তু কৃষকরা পাচ্ছেন না। কৃষকরা অনেক আগেই পাট বিক্রি করে দিয়েছে।এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী কৃষষের কাছ থেকে কম দামে কেনা পাট মজুদ রেখে এখন বেশি দামে রপ্তানি করছে।”
সরকার দেশে পাটের ব্যবহার বাড়াতে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ প্রণয়ন করে। সেই আইন অনুযায়ী ২০১৩ সালে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি- এই ছয় পণ্য সংরক্ষণ, সরবরাহ ও মোড়কীকরণে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।
ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান
ছয়টি পণ্যে পাটের বস্তা বাধ্যতামূলক করা গেলে, দেশে পাটকলের সংখ্যা দ্বিগুণ হত; কর্মসংখ্যান হত,” সাজ্জাদ হোসাইন।
বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আবদুল কাইয়ুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশের জনগণ প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারের প্রতি সচেতন হওয়ায় সেখানে পাট পণ্যের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। সে কারণে সারা পৃথিবীতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বেড়েছে।
“ভবিষ্যেতে আরও বাড়বে। আমাদের হারিয়ে যাওয়া সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনার একটি সুযোগ এসেছে। সরকার ও বেসরকারি খাত মিলেমিশে কাজ করলে এক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই সফল হবো বলে মনে করি।”
“আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে ইউরোপের অনেক বাজারে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। সেই বাজার কিন্তু বিশাল।প্লাস্টিকের ব্যাগের বিকল্প হতে পারে পাটের ব্যাগ।এই বাজার ধরতে আমাদের এখনই প্রস্তুত হতে হবে।”
ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান
“বিশ্বব্যাপী যেভাবে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে, তাতে পাটের চাড়িদা বাড়তেই থাকবে। এ ভিষয়টি অনুধাবন করে আমরা যাতে ধারাবাহিকভাবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বাড়াতে পারি সে ব্যবস্থা করতে হবে।”
বর্তমানে দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে মোট ২২টি পাটকল চালু রয়েছে এবং বেসরকারি খাতে প্রায় ২০০ পাটকল আছে।
তুরস্ক, আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বেনিন, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিলি, চীন, কংগো, কোস্টারিকা, মিসর, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া, ইথোপিয়া, গাম্বিয়া, জার্মানি, গোয়েতেমালা, হাইতি, ভারত, আয়ারল্যান্ড, ইরান, জাপান, জর্ডান, কোরিয়া, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, মেক্সিকোসহ বিশ্বের ৫০টি দেশে পাট ও পাট পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ।