তারা এতটাই আতঙ্কিত যে বুঝে উঠতে পারছেন না কী করবেন?
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে এমনিতেই ছিল মন্দা; টানা চার মাস কমার পর গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৩ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
কিন্তু নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ফের সেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে ফিরে যায়।সদ্য শেষ হওয়া ফেব্রুয়ারিতেও সেই ধারাই অব্যাহত রয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বৃহস্পতিবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ২ হাজার ৬২৪ কোটি ১৮ লাখ (২৬.২৪ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৩২ কোটি ২৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ১ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম।
ফেব্রুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩৭২ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৩৩৮ কোটি ৩২ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ২ হাজার ৭৫৬ কোটি ৩০ লাখ (২৭.৫৬ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি পারভেজ বলেন, “এমনিতেই আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ খারাপ অবস্থা চলছিল। নানা বাধা-বিপত্তির কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছিলাম না। এখন করোনাভাইরাস আমাদের সবকিছু ওলট-পালট করে দিচ্ছে।”
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে এবছরের শুরুতে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর ইতোমধ্যে তা বিশ্বের ৭৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৯৫ হাজারে।
এই রোগ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পরেআন্তর্জাতিক অঙ্গনে পণ্য সরবেরাহ ও মানুষের চলাচলও সীমিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশ পড়তে যাচ্ছে শিল্পের কাঁচামাল সঙ্কটে।
ইভেন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান পাররভেজ বলেন, “আমরা খুবই আতঙ্কিত। মার্চ থেকে যে সব পণ্য রপ্তানি করা হবে, তাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
“আমাদের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সে সব দেশের মানুষ এখন করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে দোকানপাট-শপিং মল বন্ধ করে দিচ্ছে। পোশাক নিয়ে একদম ভাবছেন না। এ অবস্থায় আমরা কী পোশাক রপ্তানি করব? কোথায় রপ্তানি করব? কে কিনবে? এ সব নিয়ে বিচলিত আমরা।”
“বিশেষ করে সামনের দুটি ঈদে শ্রমিকদের বেতন দেব কীভাবে, ভাবতে গেলেই চোখে অন্ধকার দেখছি,” বলেন তিনি।
“আমরাও এর বাইরে নই। এখন আমাদের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই, এটা ১০০ ভাগ নিশ্চিত। আমরা প্রতি ঘণ্টায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি; আর অনুধাবন করছি কী ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি হতে চলেছি আমরা।”
ফারুক বলেন, “তবে এ কথা ঠিক যে, সব কিছু ছেড়ছুড়ে বসে থাকলে তো চলবে না, মোকাবেলা করতে হবে। আমরা সাধ্যমতো আমাদের কাজ চালিয়ে যাব।”
এই পরিস্থিতিতে সরকারের সহায়তা চাইছেন তৈরি পোশাক শিল্পের এই উদ্যোক্তা।
কী ধরনের সহায়তা দরকার- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানির জন্য আলাদা ডলার রেট চেয়ে আসছি। এটা এখন করতে হবে। আমি মনে করি, পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের রেট পাঁচ টাকা বেশি নির্ধারণ করতে হবে।”
সুখবর নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শুরু হলেও দ্বিতীয় মাস অগাস্টে এসেই ধাক্কা খায় রপ্তানি আয়। প্রথম মাস জুলাইয়ে গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল।
কিন্তু অগাস্ট মাসে গত বছরের অগাস্টের চেয়ে সাড়ে ১১ শতাংশ আয় কম আসে। সেপ্টেম্বরে কমে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। অক্টোবরে আরও বড় ধাক্কা খায়: এ মাসে কমে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। নভেম্বরে কমে প্রায় ১১ শতাংশ।
টানা চার মাস কমার পর গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৩ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু পরের মাস জানুয়ারিতে তা ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যায়।
পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫.৫৩%
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম। লক্ষ্যের চেয়ে কমেছে আরও বেশি; ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এই আট মাসে নিট পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর উভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
এই সময়ে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে এক হাজার ৮৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। আর উভেন থেকে এসেছে এক হাজার ৯৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলার।
হিসাব করে দেখা গেছে, এই ছয় মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ দশমিক ২৫ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।
পাট পণ্য রপ্তানি বেড়েছে
তবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে এই আট মাসে কৃষি পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। শাক-সবজি রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯৩ শতাংশ।
চা ও হ্যান্ডিক্যাফট রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৫৯ ও ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। তামাক রপ্তানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ।
তবে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ৯ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করে। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ৪ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি (৪৫.৫০ বিলিয়ন) ডলার।