দাম কমলেও বাঙালির রান্নার অন্যতম উপকরণ কিনতে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে চার গুণ বেশি অর্থাৎ অন্তত ১০০ টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদেরকে।
শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে ঘুরে পাইকারি ও খুচরায় পেঁয়াজের দাম কমার চিত্র পাওয়া গেছে। বাজারে প্রচুর সরবরাহ থাকার পরও দাম এখনও অনেক বেশি বলেই মনে করছেন ক্রেতারা।
এই বাজারে মানভেদে খুচরা পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানী বিভিন্ন এলাকার মুদি দোকানগুলোতে ১০০ টাকা কেজির নিচে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।
গত সপ্তাহে বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ১৪০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১২০ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
কারওয়ান বাজারে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই সময় পেঁয়াজের এত দাম থাকার কোনো কারণই নেই। সব বাজারেই তো অনেক পেঁয়াজ, তবে দাম এত বেশি কেন?”
পেঁয়াজের দাম আরও কমানোর বিষয়ে সরকার খুব আন্তরিক না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী চাঁন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত সপ্তাহের থেকে প্রতি পাল্লায় (পাঁচ কেজি) ১৫ থেকে ২৫ টাকা কমেছে। বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে, ফলে দাম আরও কমবে।
রাষ্ট্রায়ত বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে, ঢাকার বাজারে শুক্রবার দেশি পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৭০-১০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। গত বছরের এই সময়ে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ ২০-২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
শ্যামবাজারের পাইকার ইদ্রিস আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের থেকে শুক্রবার প্রতি কেজিতে ১৫ টাকা করে কমেছে।
কিছু দিনের মধ্যেই হালি পেঁয়াজ বাজারে এলে এবং পেঁয়াজ রপ্তানির উপর থেকে ভারত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রভাবে পেঁয়াজের দাম কমবে বলে তার ধারণা।
শুক্রবার শ্যামবাজারে পাইকারিতে পাকিস্তানি পেঁয়াজের কেজি ৫২-৫৩ টাকা, নেদারল্যাল্ডের ৫৫-৬০ টাকা, মিয়ানমারের ৬০-৭৫ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজের কেজি ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর কারওয়ান বাজারে পাঁচ কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৫০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৪০০ টাকা, বড় আকারের তুরস্কের পেঁয়াজ ৩২০ টাকা এবং পাঁজ কেজি পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়।
এর বাইরে কারওয়ান বাজারে কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরের বড় আকারের লাল রঙের পাঁচ কেজি পেঁয়াজ ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উৎপাদন সঙ্কটে পড়ে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পাঁচ মাস পর দুদিন আগে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারত সরকার।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর বাংলাদেশে এই পণ্যের বাজারে দেখা দেয় অস্থিরতা। এই নিত্যপণ্যের দাম প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকা থেকে আড়াইশ’ টাকায় উঠে যায়।
সরকার চীন, তুরস্ক, মিশর, মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা চালায়।
সবজি বাজার স্থিতিশীল
শীত বিদায় নিলেও এখনও শীত মৌসুমের অনেক সবজি বাজারে থাকায় দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে।
শুক্রবার কারওয়ান বাজারে এক কেজি মরিচ ৫০ টাকা, গাজর ২০ টাকা, সিম ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, ঢেরস ৬০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা কেজি এবং আকারভেদে একেকটি ফুলকপি ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর একপ্লালা অর্থাৎ পাঁচ কেজি আলু ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এক কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়।
বেশিরভাগ সবজির দাম হাতের নাগালে থাকলেও করলার দাম আকাশ ছোঁয়া। এক কেজি করলা ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় প্রতিদিনই করলার দাম বাড়ছে। ১০ দিন আগেও ১০০ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছিল এই সবজি।
রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী মো. আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবার সবজির দাম ওঠা-নামার মধ্যে রয়েছে। তবে এখন বাজারে অনেক সবজি পাওয়া যাচ্ছে এবং দামও মোটামুটি কম।
সবজির বর্তমান দাম নিয়ে ‘কারো আপত্তি থাকার কথা নয়’ বলে মনে করেন ব্যাংক কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।