ব্যবসায়ীদের অন্য দেশে না ঝোঁকার পরামর্শ চীনা দূতের

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীন থেকে পণ্য আমদানি সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হলেও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করতে চান ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2020, 12:54 PM
Updated : 17 Feb 2020, 01:01 PM

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনায় তিনি বলেছেন, চীনকে বাদ দিয়ে অন্য দেশ থেকে পণ্য আমদানির কথা ভাবার মত পরিস্থিতিও এখনও তৈরি হয়নি।

“বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি আমার জোরালো পরামর্শ হচ্ছে, চীনকে সাপ্লাই চেইন থেকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো দেশের দিকে যাওয়া তাদের উচিত হবে না।

“প্রথমত এটা প্রায় অসম্ভব, দ্বিতীয়ত খরচ এবং তৃতীয়ত এটার প্রয়োজন নেই। এজন্য আমি বলব, তারা যেন ব্যবসায় গন্তব্য পরিবর্তন না করেন।”

রাষ্ট্রদূত বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সংস্পর্শ এড়াতে কর্মীদের কাজ করতে হচ্ছে সতর্কতার সঙ্গে। তাতে কাজ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কাস্টমসের অতিরিক্ত নজরদারি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণেও বিলম্ব হচ্ছে।

”কিন্তু এটার প্রয়োজন নেই। কারণ কোনো পণ্য ভাইরাস বহন করে না। আর ভাইরাস বাঁচতে পারে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। কিছু জায়গায় কাস্টমস সেবা বন্ধ থাকার কারণেও সাধারণ পণ্য সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কড়াকড়ি কমে এলে পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শেষে ছড়িয়ে পড়া নতুন ধরনের করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে ১৭৭৫ জনের মৃত্যু ঘটিয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৭১ হাজার।

ইতোমধ্যে ২৫টির বেশি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। আর তার বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে; জাপান ও সিঙ্গাপুর এরই মধ্যে মন্দার ঝুঁকি দেখছে।

অনেক বিমান পরিবহন সংস্থা চীনের সঙ্গে ফ্লাইট কমিয়ে এনেছে, অথবা বন্ধ রেখেছে। সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনও দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিশ্বের বহু বড় বড় কোম্পানি চীনে পণ্য উৎপাদন করে বলে ১৪০ কোটি মানুষের এ দেশকে বলা হয় বিশ্বের কারখানা। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে অনেক কারখানা বন্ধ থাকায় সরবরাহে দেখা দিয়েছে ঘাটতি। 

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে সুতাসহ অন্য যে সব কাঁচামাল ব্যবহার হয়, তার ৬০ শতাংশের বেশি চীন থেকে আমদানি করা হয়। বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে বেশি পণ্যও আমদানি করে চীন থেকে। কিন্তু গত এক মাসে চীন থেকে কোনো পণ্য বাংলাদেশে আসেনি বলেন শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজের ভাষায়, “এখন আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারছি, বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়তে যাচ্ছি আমরা, আমাদের দেশ।”

তবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে চীনা দূত বলছেন, “ভাইরাসের কারণে হুবেই থেকে শিপিং সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। ভাইরাসের কারণে নববর্ষের ছুটি বাড়ানো হয়েছিল, সেটার পরে মানুষ এখন কাজে ফিরতে শুরু করেছে। সে কারণে বলছি, সরবরাহ বিলম্বিত হতে পারে, কিন্তু বাতিল হবে না।”

করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কার মধ্যে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিকাব আয়োজিত ’ডিকাব টকে’ নানা বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন রাষ্ট্রদূত জিমিং।

চীন যে ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, গত বছর বাংলাদেশ-চীনের ব্যবসায়ের পরিমাণ ছিল ১৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের এক-তৃতীয়াংশ।

চীন থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয় না এমন পণ্য মিলবে খুবই কম। স্ক্রু ড্রাইভার থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল, বাণিজ্যিক পণ্য ও তিন-চারটি মসলা আমদানির উৎস চীন।