চড়তে চড়তে কিছুটা পড়ল এলাচের দাম

বাজারে এই মুহূর্তে সবচেয়ে দামি মসলা এলাচ। পণ্যটির প্রতি কেজির দাম সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। এক সপ্তাহ আগেই এই দাম উঠেছিল ছয় হাজার টাকায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2020, 04:57 PM
Updated : 7 Feb 2020, 05:21 PM

গত এক বছরে এলাচের দাম বেড়ে তিন গুণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর দাবি, তাদের কেউ কেউ ১৫ থেকে ৩০ বছর ধরে মসলার ব্যবসা করলেও এলাচের দাম এত বেশি কখনও দেখেননি।

মসলা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ মূলত ভারত ও মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়াতেমালা থেকে এলাচ আমদানি করে আসছিল। ভারত থেকে এলাচের মোট আমদানির অল্প পরিমাণই আনা হত। সেই ভারতে গত দুই বছর ধরে এলাচের আবাদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশেসহ অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ভারতও এখন গুয়াতেমালা থেকে এলাচ আমদানি করছে। এ কারণে মাংসে ঘ্রাণ আনতে ব্যবহৃত মসলাটির দাম অনেক বেড়ে যায় বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি থেকে নিত্যপণ্যের বাজার দর প্রতিনিয়ত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে থাকে।

টিসিবির প্রকাশিত তথ্য মতে, এক বছর আগে এলাচের দাম কেজি প্রতি ছিল ১৬০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা। এরপর এ পণ্যটির দাম বাড়তে বাড়তে চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ৪২০০ টাকা থেকে ৪৬০০ টাকা হয়। পরে দাম আরও বেড়ে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এলাচের কেজি ৪৩০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা হয়।

আর চলতি সপ্তাহে এলাচের দাম ৪০০০ টাকার বেশি বলে জানিয়েছে সরকারি বিপণন এ সংস্থাটি।

তবে ব্যবসায়ীরা যে তথ্য দিয়েছেন এতে মানভেদে এলাচের দাম টিসিবির দেওয়া দামের চেয়ে বাজারে অন্তত এক হাজার টাকা বেশি।

কারওয়ানবাজারের অ্যারাইট স্টোরের পাইকারি মসলা বিক্রেতা আবদুল মতিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজারে তো বিভিন্ন ধরনের এলাচ আছে, এর মধ্যে আমি পাঁচ ধরনের এলাচি বিক্রি করি। এগুলোর কেজি ন্যূনতম ৩৬০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫৩০০ টাকা।”

এলাচের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০০ টাকা কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এলাচের কেজি ৬০০০ হাজার টাকার উপরে উঠেছিল। এখন ৫০০ টাকা কমেছে।”

৩০ বছরের ব্যবসায়ী জীবনে এলাচের দাম এত বেশি দেখেননি বলে জানান আবদুল মতিন।

“তবে ২০০১ সালের দিকে হঠাৎ করে এলাচের দাম বেড়ে গিয়েছিল। তখন সর্বোচ্চ ৩০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। পরে দাম কমে যায়।”

বর্তমানে এলাচের দাম এত বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে এলাচ উৎপাদন হয় না। চাহিদার পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এতদিন ভারত ও গুয়াতেমালা থেকে এলাচ আমদানি করা হতো। তবে ভারত থেকে যে পরিমাণ এলাচি আমদানি হয়ে থাকে তা বছরের এক থেকে দেড় মাস চলে, মূলত পুরোটাই আমদানি হয় গুয়াতেমালা থেকে।

“গত দুই বছর ধরে ভারতে এলাচ আবাদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে ভারত থেকে এলাচি তো আনা যাচ্ছেই না, বরং ভারতও গুয়াতেমালা থেকে আমদানি করছে। এ কারণে দাম এতোটা বেড়েছে।"

দাম এত বেশি বাড়ার কারণে বিক্রি কমে গেছে জানিয়ে মসলা ব্যবসায়ী মতিন বলেন, “এ কারণে আমাদের ব্যবসায়ও মন্দা অবস্থা চলছে।”

রামপুরা বাজারের তাহের স্টোরের মালিক আবু তাহের বলেন, “কখনও কখনও দাম বাড়লেও কেজিতে ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে। সবচেয়ে ভালোমানের এলাচ ২০০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, এখন তা ৬০০০ টাকা। হঠাৎ করে এ কী হলো?”

এলাচের দাম এত বেশি হওয়া সম্পর্কে শান্তিনগরের বাসিন্দা আতাউল ইসলাম বলেন, “আমি জানতাম না এলাচের দাম এত বেড়ে গেছে। সপ্তাহখানেক আগে বাজার করতে গিয়ে দোকানে ২০ টাকার এলাচ দিতে বলেছিলাম, কিন্তু দোকানি বলল, ৫০ টাকার কমে এলাচ বিক্রি করা সম্ভব না। তখন জানতে পারলাম এলাচের কেজি ৫-৬ হাজার টাকা।"