দাম বেড়েছে আদা-রসুনের

সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে রসুন ও আদার দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে বেড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2020, 02:38 PM
Updated : 7 Feb 2020, 02:46 PM

চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশে এই দুই পণ্যের আমদানি ঘাটতিকে দাম বাড়ার কারণ দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

এছাড়া কিছু সবজি ও চালের দামে কিছুটা হেরফের হলেও মানভেদে পেঁয়াজের কেজি ১০০ থেকে ১৪০ টাকায়ে বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রবার রাজধানীর অন্যতম প্রধান বাজার কারওয়ানবাজার ছাড়াও রামপুরা বাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর, শাহজাহানপুর, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার ঘুরে এই চিত্র পাওয়া যায়।

ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম প্রতি কেজি ১৬০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০ টাকা হয়েছে। আর আদার কেজি ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ১৬০ টাকা হয়েছে।

রামপুরা কাঁচাবাজারের আজহার স্টোরের মালিক মো. আজহার বলেন, গত সপ্তাহে খুচরায় রসুন বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা, এটি এক লাফে বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা। পাশাপাশি আমদানি করা আদার কেজি এখন ১৬০ টাকা, গত সপ্তাহে দাম ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।

কারওয়ানবাজারের আড়ৎদার এরশাদ হোসেনও আদা-রসুনের দাম বাড়ার কথা জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাইকারি বাজারে রসুন এখন ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর চীনা আদা পাইকারিতে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি আদা ১১০ থেকে ১২০ টাকা পাইকারি দামে বিক্রি হয়েছে।

আদা-রসুনের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতা মো. আজহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে চীনা রসুন বাজারে নেই বললেই চলে। এখন দেশি ও ভারত থেকে আমদানি করা রসুন বাজারে আছে। চীনা রসুন আমদানি বন্ধ থাকায় এর দাম বেড়ে গেছে।”

একই কারণে আদার দামও বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “চীনা আদাটা বাজারে মজুদ বেশি থাকায় এখনও পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু দাম বেড়ে গেছে।”

আদা-রসুনের দাম আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে শুধু আদা-রসুন নয়, অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে ক্রেতাদের।

কারওয়ানবাজারে কেনাকাটা করতে আসা ব্যাংকার আশরাফুল ইসলাম বলেন, “বাজার যদি সঠিকভাবে মনিটরিং করা না হয় তাহলে ব্যবসায়ীরা এই অজুহাত, সেই অজুহাতে দাম বাড়িয়ে যাবেই। তাই সরকারকে এসব দিকে কঠোর হতে হবে। বেশি বেশি মোবাইল কোর্ট চালু রাখতে হবে।”

এদিকে পেঁয়াজের দাম গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকার মতো কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১২০ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

চালের দামও বাড়তি

মিনিকেট, নাজিরশাইল, বিআর-২৮ এবং পোলাওয়ের চালের দাম গত দুই সপ্তাহ আগে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

শান্তিনগর বাজারের দুলাল রাইস স্টোরের মালিক দুলাল ভূইয়া জানান, নাজিরশাইল এক নম্বর পুরাতনটা খুচরায় ৫৮ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর নতুনটা ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। নাজির নিম্নমানের চাল ৫০ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যেও বিক্রি হচ্ছে। আর মিনিকেট ৫০ থেকে ৫২ টাকা, বিআর-আঠাশ ৩৬-৩৮ টাকা, পাইজাম ৩৪-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ানবাজারের চাল ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মেসার্স মতলব ট্রেডার্সের মালিক আবু রায়হান বলেন, “নতুন করে চালের দাম বাড়েনি, যা বেড়েছে দুই সপ্তাহ আগেই। তবে দাম আর কমেনি।”

কারওয়ানবাজারের ‘আল্লার দান রাইছ স্টোর’র আবদুল আউয়াল জানান, কয়েক জাতের চালের সাথে পোলাওয়ের চালের দামও বেড়েছে।

পুরাতন চিনিগুঁড়া চাল ৫০ কেজি বস্তা এখন পাইকারিতে পাঁচ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। এই বস্তা ২০ দিন আগেও ৭০০-৮০০ টাকা কম ছিল।

এছাড়া মিনিকেটের প্রতি ৫০ কেজির বস্তা ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা, নাজিরশাইল ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা, বিআর-আঠাশ ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা, পাইজাম ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আউয়াল বলেন, “চালের দাম কখনও আড়ৎদার থেকে বাড়েনি। মিল মালিকরা দাম বাড়ালে তা বাজারের ওপর প্রভাব পড়ে। কিন্তু সরকারের লোকেরা ঢাকার বাজারে মনিটরিং করে, এতে আসলে লাভ হবে না।”

বাজারে করলা, বরবটি ও কচুরমুখীর কেজি ১০০ টাকা করে। এছাড়া বাজার ও মানভেদে প্রতি কেজি টমেটো ৩০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, সিম ৪০-৫০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টাকা, আলু ২৫-৩০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, গাজর ৩০-৪০, প্রতিটি লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ফুলকপি-বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং শশা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মালিবাগ কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী জয়নাল আবদীন বলেন, “বাজারে করলা, বরবটি ও কচুরমুখী সরবরাহ কম, এই কারণে দামও বেশি। তবে অন্যান্য সবজির দাম স্থিতিশীল আছে।”