হতাশা নিয়ে পর্দা নামল বাণিজ্য মেলার

ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন অভিযোগ আর হতাশা নিয়ে শেষ হল ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৫তম আসর।

নিজস্ব প্রতিবেদকমেহেরুন নাহার মেঘলাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2020, 06:22 PM
Updated : 6 Feb 2020, 06:40 PM

ভোটের কারণে বিঘ্ন ঘটার পর দুই দফায় বাড়ানো হয়েছিল এবার মেলার সময়; কিন্তু ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি বলে আক্ষেপ রয়ে গেছে ব্যবসায়ীদের।

বৃহস্পতিবার মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে অন্য বছরের তুলনায় মেলার শেষ দিনে ভিড় কম দেখা গেছে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি পণ্য ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এবার তাদের স্টলগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা আশানুরূপ বেশি ছিল না।

হাঁড়িপাতিলসহ নানা পণ্যের সমাহারে সাজানো ‘মিয়াকো’র স্টলের ইনচার্জ মো. আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেলার শেষদিকে আমাদের আশা থাকে ক্রেতাদের অনেক ভিড় থাকবে। যারা এই এক মাসে বিভিন্ন সময়ে প্রোডাক্ট পছন্দ করে গিয়েছেন, তারা শেষদিকে এসে সেগুলো কিনে নিবেন। কিন্তু মেলার শেষদিনে এসেও আজকে আমরা অলস সময় কাটাচ্ছি।”

মেলার শেষ সময়ে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়েও প্রত্যাশিত ক্রেতা না পাওয়ার কথা বলেন তিনি।

মেয়েদের অলংকারসহ বিভিন্ন ডিজাইনের ঘড়ি বিক্রয় প্রতিষ্ঠান এফ জি ফ্যাশন জুয়েলারির বিক্রয় প্রতিনিধি রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেলায় এবার ছোট দোকানগুলো পুরোই ফাঁকা। মেলার সময়সীমা বাড়ানো হলেও মাঝারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এবার তেমন লাভ করতে পারেনি। আর শেষদিন তো মেলায় লোকজন খুবই কম।”

মেলার শেষদিন দেশীয় পণ্যের স্টলগুলোর তুলনায় বিদেশি পণ্যের প্যাভিলিয়নগুলোতে ক্রেতা সমাগম ছিল তুলনামূলক বেশি।

তবে বিদেশি পণ্যের স্টলের সংখ্যা গত বছরগুলোর তুলনায় অনেকটাই কম বলে চোখে পড়েছে ক্রেতাদের।

বনশ্রী থেকে বান্ধবীর সঙ্গে মেলায় আসা উন্নয়ন কর্মকর্তা উম্মে হাবিবা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবছর মেলায় দেখলাম বিদেশি পণ্যের স্টলগুলো অনেক কম। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হিসেবে এই ব্যাপারটি নেতিবাচক। আবার দেশি পণ্যের স্টলগুলোতেও শুধু দেশের পণ্য বিক্রি হয় না।”

লোকসমাগম নিয়ে হাবিবা বলেন, “ভেবেছিলাম শেষদিন মেলায় অনেক ভিড় হবে। আসতে অনেকটাই ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু ওয়ার্কিং ডে হওয়ায় মেলায় আজকে তেমন ভিড় নেই বলে মনে হচ্ছে।”

এদিকে মেলার শেষদিন বিক্রেতারা তাদের বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে দেয় নামমাত্র মূল্যে। কোনো কোনো স্টলে চলে ‘আখেরি অফার’ নামে মূল্যছাড়ের প্রতিযোগিতা। আবার কোনো কোনো স্টলে একটি পণ্য কিনলে দেওয়া হয় আরেকটি পণ্য।

কারুপণ্য শতরঞ্জির স্টলে দুটি পাপোষ কিনলে দুটি পাওয়া গেছে বিনামূল্যে। এছাড়াও বিভিন্ন কার্পেট, শতরঞ্জির উপর ছিল বিভিন্ন রকম ছাড়।

কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা কম দেখে হতাশ এই স্টলের সেলস এক্সিকিউটিভ কাজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্যদিনের তুলনায় আজকে ক্রেতার সংখ্যা যেখানে বেশি হওয়ার কথা ছিল, সেখানে আজকেই ক্রেতার সংখ্যা মনে হচ্ছে অনেক কম।

“মূলত দুই দফায় মেলার সময় বাড়ানোর ফলেই ক্রেতা-দর্শনার্থী এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। একবারেই যদি ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলার সময়সীমা বাড়ানো হতো, তাহলে বোধহয় এমন সমস্যা তৈরি হত না।”

তবে প্লাস্টিক সামগ্রীর বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান আর এফ এলের স্টলে আইটি এক্সিকিউটিভের দায়িত্বে কর্মরত শামীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন ভিন্ন কথা।

তিনি বলেন, “আমাদের অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে বিক্রি আরও বেশি হয়েছে। হয়ত ক্রেতার সংখ্যা কম, তবুও যারা আসছেন, তারা কেউ খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন না। ফলে আজকে বিক্রি হচ্ছে অনেক বেশি।”

শামীম জানান, বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্যের উপর মেলার শেষদিন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে।