জিপি টাকা না দিলে ‘প্রশাসক বসানোর প্রক্রিয়ায় যাবে’ বিটিআরসি

আপিল বিভাগের বেঁধে দেওয়া তিন মাস সময়ের মধ্যে অডিট আপত্তির দুই হাজার কোটি টাকা গ্রামীণফোন না দিলে দেশের সবচেয়ে বড় এই মোবাইল ফোন অপারেটরে প্রশাসক বসানোর প্রক্রিয়ায় যাবে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2020, 01:41 PM
Updated : 3 Feb 2020, 02:05 PM

গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় ‘শিগগিরই’ নিরীক্ষা আপত্তি নিয়ে জটিলতার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করার পর বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হকের এমন প্রতিক্রিয়া আসে।

তিনি বলেন, আপিল বিভাগের বেঁধে দেওয়া তিন মাস সময় শেষ হবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। তার মধ্যে যদি আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন না আসে, আর গ্রামীণফোন যদি টাকা না দেয়, তাহলে তারা ‘প্রশাসক বসানোর যোগ্য’ হবে।

“তখন বিটিআরসি যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং প্রশাসক বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।”

বিটিআরসি বলে আসছে, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাশাপাশি রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের। কয়েক দফা চেষ্টায় সেই টাকা আদায় করতে না পেরে বিটিআরসি লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে দুই অপারেটরকে নোটিস পাঠায়।

বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় দুই অপারেটর আদালতের দ্বারস্থ হয়। পরে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগে গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দফা বৈঠক হলেও তাতে সফলতা আসেনি।

গ্রামীণফোনের আবেদনে গত ১৭ অক্টোবর বিটিআরসির নিরীক্ষা আপত্তি দাবির নোটিসের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় হাই কোর্ট। বিটিআরসি লিভ টু আপিল করলে আপিল বিভাগ ২৪ নভেম্বর গ্রামীণ ফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা দিতে নির্দেশ দেয়। সেজন্য তাদের তিন মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

কিন্তু টাকা না দিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি ওই আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করে গ্রামীণফোন। সেখানে বলা হয়, ১২ মাসের কিস্তিতে আপাতত ৫৭৫ কোটি টাকা দিতে প্রস্তুত আছে তারা।

টাকা আদায়ে চাপের অংশ হিসেবে গতবছরের ২২ জুলাই থেকে গ্রামীণফোনের বিভিন্ন ধরনের সেবার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র দেওয়া বন্ধ রেখেছে বিটিআরসি। সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়ে সে বিষয়ে এক প্রশ্নে গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, “গত ৬ মাসে আমাদের ইনভেস্টমেন্ট হয়নি, যে পরিমাণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করার কথা করতে পারিনি। আগামী ৬ মাস করতে না পারলে কাস্টমার এক্সপিরিয়েন্সে মেজর গ্যাপ হবে।

“আমরা কোর্টে গিয়েছি, রিভিউ পিটিশন করেছি, রেগুলেটরের সাথেও কথা হয়েছে। কাস্টমারদের বলব ২ থেকে ৪ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে, একটি ভাল আউটকাম আসবে।”

আপিল বিভাগ পুনর্বিবেচনার আবেদন নাকচ করে দিলে গ্রামীণফোন কী পদক্ষেপ নেবে জানতে চাইলে ইয়াসির আজমান বলেন, “যদি রিজেক্ট হয়ে যায় এটির উত্তর দেওয়া যাবে না।”

ইয়াসির আজমানের বক্তব্যর প্রতিক্রিয়ায় বিটিআরসি প্রধান জহুরুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিটিআরসি ৫৭৫ কোটি টাকা নিতে পারবে না যদি আপিল বিভাগ আদেশ না দেয়। এটি নির্ভর করছে আপিল বিভাগের ওপর। আমরাতো কিছু করিনি, উনারা কোর্টে গেছেন, পরে আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দিয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা দিতে হবে তিন মাসের মধ্যে।

“তিন মাস শেষ হবে ২৪ শে ফেব্রুয়ারি। যদি না দেয় তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছে আপিল বিভাগ। এখন যদি তারা টাকা কম দেয় বা বেশি দেয় সেটি আপিল বিভাগের মাধ্যমেই হতে হবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে জহুরুল হক বলেন, “আপিল বিভাগ কম বেশি করলে অবশ্যই মেনে নেব, না মানার কারণ নেই। কিন্তু কথা হল গ্রামীণফোনের দুই হাজার কোটি টাকার অনুপাতে রবিকে ১৩৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণফোনকে কমালে রবিরটাও কমাতে হবে, তখন জটিলতা দেখা দেবে। আপিল বিভাগ যেটি করবে সেটি আমরা মেনে নেব।”