ভোলায় গ্যাস খুঁজতে বাপেক্সের সঙ্গে যুক্ত হল গ্যাজপ্রম

ভোলায় নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাপেক্সের সঙ্গে কাজ করবে রুশ সংস্থা গ্যাজপ্রম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2020, 02:53 PM
Updated : 28 Jan 2020, 03:03 PM

খনিজ অনুসন্ধানে ইউরোপের সবচেয়ে বড় কোম্পানিটির সঙ্গে মঙ্গলবার সমঝোতা চুক্তি সইয়ের পর প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরী বলেছেন, আরও বেশি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারে জোর প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে এখন থেকে বাপেক্স ও গ্যাজপ্রম যৌথভাবে কাজ করবে।

এলক্ষ্যে মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে পেট্রোসেন্টারে পেট্রোবাংলার সঙ্গে পিজেএসসি গ্যাজপ্রম এবং বাপেক্সের সঙ্গে গ্যাজপ্রম ইপি ইন্টারন্যাশনালের আলাদা দুটি চুক্তি হয়।

অনুষ্ঠানে জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এ বি এম আবদুল ফাত্তাহ, বাংলাদেশে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত এআই ইগনাতভ উপস্থিত ছিলেন।

পেট্রোবাংলার পক্ষে সংস্থার সচিব সৈয়দ আশফাকুজ্জামান এবং পিজেএসসি গ্যাজপ্রমের পক্ষে ডেপুটি চেয়ারম্যান ভিতালি মারকেলভ, বাপেক্সের পক্ষে কোম্পানি সচিব মোহম্মদ আলী এবং গ্যাজপ্রম ইপির পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সের্গেই তুমানভ সমঝোতাপত্রে সই করেন।

অনুষ্ঠানে জানান হয়, চুক্তির আওতায় পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সকে জ্বালানি অনুসন্ধান ও কূপ খনন বিষয়ক বিভিন্ন কাজে কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে গ্যাজপ্রম। পাশাপাশি প্রয়োজন মনে করলে কোনো প্রকল্পে অর্থায়নও করবে তারা।  

প্রাথমিকভাবে ভোলার শাহবাজপুর, ভোলা নর্থ ও ভোলা নর্থ-১ এই তিনটি গ্যাসক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে আরও বৃহত্তর পরিসরে অনুসন্ধান কাজ চালাতে বাপেক্সকে সহায়তা দেবে গ্যাজপ্রম। 

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের জ্বালানি উন্নয়নের জন্য এই সহযোগিতা চুক্তি। এর ফলে পুরো এনার্জি সেক্টরকে নিয়ে কী ধরনের পার্টনারশিপ হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হবে। চট্টগ্রামের কিছু দুর্গম এলাকায় অনুসন্ধান কাজ হতে পারে। দ্বিমাত্রিক বা তৃমাত্রিক জরিপ কাজ হতে পারে।

“এক কথায় অনুসন্ধান ও উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার সব ধরনের কাজে তারা আমাদের সঙ্গে একসাথে কাজ করতে আগ্রহী।”

গ্যাজপ্রমকে সঙ্গী পেয়ে সন্তুষ্ট তৌফিক এলাহী বলেন, গ্যাজপ্রম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এনার্জি প্রতিষ্ঠান। রাশিয়ার জ্বালানি সঞ্চিতি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি। তারা হাজার হাজার মাইল পাইপলাইন দিয়ে তারা ইউরোপী গ্যাস দিচ্ছে।

গ্যাজপ্রম বিনিয়োগ করবে কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এটা একটা এমওইউ; এটা ঠিক চুক্তি না। কীভাবে বিনিয়োগটা আসবে; কে মূল ধন দেবে সেটা চুক্তির সময় ঠিক করা হবে।”

বাপেক্স খনিজ অনুসন্ধানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র সংস্থা

ভোলার গ্যাসক্ষেত্রগুলো গ্যাজপ্রমকে দিয়ে দেওয়ার যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, তারই বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না- এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তৌফিক এলাহী বলেন, “না। এখানে যা হবে যৌথ উদ্যোগেই হবে; কারও একক নয়।

“তিনটা গ্যাসক্ষেত্র ইতোমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। এরকম আরও গ্যাসক্ষেত্র হয়তো আসতে পারে। সেগুলো যৌথভাবে হবে। ভোলা উত্তরের গ্যাসফিল্ড (ভোলা নর্থ) সেটা আরও উত্তরে প্রসারিত হতে পারে। এগুলো বাপেক্সকে সাথে নিয়ে করার জন্য চিন্তা চলছে।”

কী কারণে বিদেশি কোম্পানিকে নেওয়া হল, তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আগে যে গ্যাসফিল্ডগুলো ফোল্ডের মধ্যে পাওয়া যেতে, এখন ভোলার যতই উত্তর দিকে যাওয়া যাচ্ছে সেখানে মনে হচ্ছে একটা ট্র্যাপের মাধ্যমে ফিল্ডগুলো পাওয়া যাচ্ছে। ট্র্যাপে অনুসন্ধানের ভালো অভিজ্ঞতা বাপেক্সের নাই। ফলে এটা খুবই দুরূহ কাজ হবে। সেজন্য আমরা আশা করি, গ্যাজপ্রমের সাথে কাজ করলে প্রযুক্তিগত বাধাগুলো দূর করতে পারব।”

বাপেক্সের মাধ্যমে প্রমাণিত গ্যাসক্ষেত্র বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া হচ্ছে কি না- এ প্রশ্নে তৌফিক এলাহী বলেন, “আমাদের সব সময় দেশের সামনে কী চ্যালেঞ্জ আছে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের দেশে বিদ্যুতে, শিল্পে যত দ্রুত সম্ভব জ্বালানি দিতে হবে। এখন একটা কাজ আজকে আমি পারি না, কিন্তু পাঁচ বছর অপেক্ষা করলে আমি করতে পারব।

“কিন্তু দেশের প্রয়োজনে যেসব প্রযুক্তি এবং অর্থ প্রয়োজন হয় গ্যাজপ্রম সেগুলো দ্রুত নিয়ে আসবে। বাপেক্সেরও প্রযুক্তিগত উন্নতি হবে।”

গ্যাজপ্রম বাপেক্সের প্রমাণিত এলাকার বাইরে গিয়ে কাজ শুরু করবে কি না- বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এই কাজ হবে সব জায়গায়। এমন কি গভীর সমুদ্রে গিয়েও গ্যাজপ্রম অনুসন্ধান কাজ করতে পারবে, আমরা সেই সুযোগ দেব।

“এই সমঝোতার পর তাদের সাথে কাজ করে আমরা যদি দেখি যে লাভবান হচ্ছি তাহলে সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করা হবে।”

২০১০ সালে রাশিয়া সফরকালে সেদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কাজে সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা গ্যাজপ্রম প্রাথমিকভাবে টার্ন কি চুক্তির ভিত্তিতে বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড বা বিজিএফসিএল এবং সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেড এর আওতাভুক্ত ১০টি কূপ খনন করে। শ্রীকাইল-৪, ভোলার শাহবাজপুর ইস্ট-১, ভোলা নর্থ-১ কূপগুলোর খননের সঙ্গে ছিল গ্যাজপ্রম।