আমদানি কমাতে শার্শায় অর্জুন-অশ্বগন্ধার চাষ শুরু

আমদানি-নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্য নিয়ে যশোরে অর্জুন, অশ্বগন্ধা, বাসক, ঘৃতকুমারী, শতমূলী, তুলসী প্রভৃতি ভেষজ উদ্ভিদের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2020, 09:24 AM
Updated : 21 Jan 2020, 12:49 PM

বিউটি পার্লার, ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এসব ভেষজ উদ্ভিদ।

জেলার শার্শা উপজেলায় প্রথমবারের মতো শুরু করা এই চাষে সফলতার সম্ভাবনা দেখছেন বলে কৃষকসহ সংশ্লিষ্টরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৌতম কুমার শীল বলেন, দেশের তিন শতাধিক ইউনানী ও দুই শতাধিক আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার বেশি ভেষজ সামগ্রী আমদানি করে। এসব প্রতিষ্ঠানে বছরে ২০ হাজার টনের বেশি ভেষজ কাঁচামালের চাহিদা রয়েছে।

এছাড়া হোমিওপ্যাথি ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে এবং বিউটি পার্লারে ও প্রসাধন শিল্পে ভেষজ উদ্ভিদের চাহিদা বেড়েছে বলে তিনি জানান।

সৌতম কুমার বলেন, কৃষি অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় গত অক্টোবর শার্শায় ১৪টি প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে মাতৃবাগান তৈরি করা হয়েছে। আর অন্তত ১০ বিঘা জমিতে ১৬ জন কৃষক ঔষধি গুণসম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদের চাষ শুরু করেছেন।

উপজেলার রাজনগর গ্রামের কৃষক মুন্না পারভেজ ৩৩ শতাংশ জমিতে ঘৃতকুমারী চাষ করছেন।

মুন্না বলেন, “ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। তাই বিকল্প হিসেবে অ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী) চাষ করিছি। মাসখানেক পরে এর পাতা বিক্রির উপযোগী হবে। এখনই এর চাহিদা বুঝতি পারছি। বাজারে প্রতিটি পাতা বিক্রি হচ্ছে ১০-১২টাকায়।”

ওই গ্রামের রেশমা খাতুন জানান, মাতৃবাগান তৈরির জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে ৩৩ শতাংশ জমিতে বাসক গাছ লাগিয়েছেন তিনি। তার বাগান দেখে অনেকেই বাসক গাছ লাগাতে আগ্রহী হয়েছে বলে তিনি জানান।

লক্ষ্মণপুর গ্রামের রেক্সোনা পারভীন চাষ করছেন ঘৃতকুমারী।

তিনি বলেন, বিউটি পার্লারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তারা ভারত থেকে এটা সংগ্রহ করতেন। এখন আমরা চাষ করছি। এতে স্থানীয় চাহিদা মিটে যাবে।

চাষে বিনিয়োগের পরিমাণ সম্পর্কে কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার বলেন, এক বিঘা জমিতে ঘৃতকুমারী চাষে ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এখান থেকে দেড়-দুই লাখ টাকার ঘৃতকুমারী পাতা বেচা যায়। আর চারা বিক্রি করে আরও অন্তত এক লাখ টাকা হয়। 

অধিকাংশ ভেষজ উদ্ভিদের চাষ প্রক্রিয়া সহজ বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তরুণ কুমার বালা।

তিনি বলেন, সার ও কীটনাশকের ভূমিকা অত্যন্ত গৌণ। এ কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। গুল্মজাতীয় ভেষজ প্রায় বিনা পরিচর্যা ও বিনা খরচে উৎপাদন করা যায়। আবার এসব উদ্ভিদের বাজার দর বেশ চড়া।

কৃষি কর্মকর্তা বলেন, দেশে প্রচুর লতা-গুল্মজাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে, যা গ্রামেগঞ্জে, পতিত জমিতে বিনা পরিচর্যায় জন্মায়। পরিকল্পিতভাবে অতিপ্রয়োজনীয় এবং সহজলভ্য ভেষজ উদ্ভিদের পারিবারিক বাগান গড়ে তোলা যায়।