পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে

দীর্ঘদিন ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে অন্তত ২০ টাকা করে কমেছে।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2020, 06:32 PM
Updated : 17 Jan 2020, 06:37 PM

ভালো মানের নতুন দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছিল।

দেশি পেঁয়াজের সঙ্গে আমদানি করা চীন, মিশর ও পাকিস্তানের পেঁয়াজের দামও কমেছে বলে কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মনির হোসেন জানিয়েছেন।

তিনি শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশি পেঁয়াজের দাম এক সপ্তাহে ১৩০- ১৪০ টাকা থেকে কমে ১০০ টাকায় নেমেছে। আর চায়না পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৬৫ টাকা, মিশরেরটা ৭৫ টাকা এবং পাকিস্তানি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।”

গেল সপ্তাহে আমদানি করা সব পেঁয়াজই কেজিপ্রতি ৮০ টাকা বা তার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছিল।

পেঁয়াজ ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মধ্যে চিনি, ভোজ্য তেল, সরু চাল, মুগ ডাল, মসুর ডাল, মরিচ ও এলাচের দামও ঊর্ধ্বমুখী।

এগুলোর মধ্যে শুকনো মরিচ, মুগ ডাল, মশুর ডাল, এলাচ ও সরু চালের দাম বেড়েছে গত এক সপ্তাহের মধ্যে। এছাড়া চিনি, সয়াবিন তেল, পাম তেলের দাম গত এক মাস ধরেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায়, অর্থাৎ ধাপে ধাপে বাড়ছে।

ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এলাচের কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে চার হাজার টাকা থেকে ৪২০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল দুই হাজার থেকে ২২০০ টাকা। একই সঙ্গে জৈয়ত্রীর দামও প্রতি কেজি ১৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩২০০ টাকা হয়েছে।

শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর বড়বাগ কাচাবাজারের মুদি দোকান কাজী স্টোরের পরিচালক রতন মিয়া দিচ্ছিলেন বাজারে নতুন করে বেড় যাওয়া পণ্যগুলোর হিসাব।

এ সময় সেখানে কেনাকাটা করতে আসা মিরপুরের বাসিন্দা শাহেদ বলেন, “সব নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যেই রয়েছে। একটা পণ্যের দাম কমছে তো তিনটা পণ্যের দাম বাড়ছে। সব মিলিয়ে বাজারে কোনো স্বস্তির খবর নেই।

“আমি আড়াইশ গ্রাম করে মরিচের গুড়া কিনি। ১০ দিন আগে কিনেছিলাম ৭০ টাকায়। আজকে কিনতে হয়েছে ৯০ টাকায়। তাহলে এক কেজি মরিচেই তো বেড়ে গেল ৮০ টাকা।”

মুদি দোকানি রতন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো মানের মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তায় অন্তত ১০০ টাকা করে বেড়েছে অর্থাৎ কেজিতে বেড়েছে দুই টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

কাজী স্টোরে খুচরায় প্রতিকেজি মিনিকেট ৫০ টাকা, বিআর- ২৮ চাল ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা, পাইজাম ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে প্রচলিত বড় দানার মশুর ডাল ১০ দিন আগেও বিক্রি হচ্ছিল প্রতিকেজি ৬০ টাকায়, তবে এখন এই ডাল কিনতে হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০ টাকায়। এছাড়া দেশি চিকন দানার মশুর ডাল ১০ দিন আগে প্রতিকেজি ১১০ টাকা বিক্রি করা হলেও এখন তা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে মুগডাল প্রতিকেজি ১৩০ টাকা থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের ডাল ব্যবসায়ী চুন্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমক বলেন, মশুর ডালের দাম বাড়ার দুটি কারণ। একটি হচ্ছে বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম একটু বেড়েছে। আর দেশে এখন ডালের মওসুম শেষের দিকে। এই সময়টাতে দাম একটু বেড়েই থাকে। এছাড়া বছরের পুরো সময় জুড়ে ডালের দাম স্থিতিশীল ছিল।

কারওয়ান বাজারের মরিচ বিক্রেতা শহীদুল ইসলাম জানান, শহরাঞ্চলে দেশি মরিচের চেয়ে ভারতীয় মরিচই বেশি চলে। এই মরিচ দেখতে লাল এবং ঝালও বেশি হয়ে থাকে। গত এক সপ্তাহ ধরে ভারত থেকে আমদানি করা এই মরিচের দাম প্রতি কেজি ২৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৩০ টাকা হয়েছে। আর দেশি মরিচের দাম ২২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৬০ টাকা হয়েছে।

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধমুখী।

কারওয়ান বাজারে মুদি দোকানি রাকিব জানান, বাজারে এখন খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১০০ টাকা এবং পাম তেল ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে সোয়বিন তেল ছিল ৮৫ টাকা আর পাম তেল ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়। ফলে গত এক মাসে ধীরে ধীর এই পণ্যের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা করে।

খোলা তেলের পাশাপাশি বোতলজাত তেলের দামও কিছুটা বেড়েছে।

টিকে গ্রুপের পুষ্টি ব্র্যান্ডের দুই লিটার সয়াবিন তেলের গায়ে খুচরা মূল্য লেখা আছে ২১৮ টাকা, যা আগে ছিল ২০০ টাকা।

মুদি দোকানি মুনির জানান, আগে পুষ্টি তেলের দুই লিটারের বোতল ১৮০ টাকায় কিনে ১৯০ টাকায় বিক্রি করতেন তারা। এখন ১৯২ টাকায় কিনে ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। একই ভাবে রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতলের গায়ে দাম লেখা ৫৩০ টাকা, যা আগে লেখা ছিল ৫১০ টাকা। আগে এই তেল ৪৭০ টাকায় কিনে ৪৮০ টাকায় বিক্রি করা হলেও এখন ৫০০ টাকায় কিনে ৫১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

একইভাবে সাম্প্রতিক বাজারে চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।