মে মাসে বাংলাদেশ ছাড়ছে অ্যাকর্ড

বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ছয় বছর আগে কাজ শুরু করা ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ডকে বিদায় করার যে চেষ্টা পোশাক কারখানা মালিকরা চালিয়ে আসছিলেন, তা কাগজে কলমে বাস্তব রূপ পেয়েছে।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2020, 03:42 PM
Updated : 15 Jan 2020, 03:57 PM

সংস্কারের বাকি কাজ একটি ত্রিপক্ষীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে মঙ্গলবার রাতে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে একটি চুক্তিপত্রে সই করেছেন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক ও অ্যাকর্ডের দুই প্রতিনিধি।

চুক্তি অনুযায়ী আগামী মে মাসের মধ্যে অ্যাকর্ডের সব ধরনের জনবল, কারখানা পরিদর্শন চিত্র ও সুপারিশ নবগঠিত আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল বা আরএসসির কাছে তুলে দেবে অ্যাকর্ড। অন্তর্বর্তী সময়ের মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাবে আরএসসি।

চুক্তি সইয়ের পর রুবানা হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চমৎকার একটি বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে সবগুলো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাদের আন্তরিকতা আর আমাদের চাওয়ার মধ্যে তেমন বিরোধ ছিল না।

“মে মাসের মধ্যে তাদের সব কাজ বুঝে নেবে মালিকপক্ষ, ব্র্যান্ড ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত আরএসসি। সেখানে দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি বিদেশি কয়েকজন দেখভালের জন্য থাকছেন।”

২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড এবং ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে ক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়।

সে প্রেক্ষাপটে কারখানা পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত হয় অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, যা সংক্ষেপে অ্যাকর্ড নামে পরিচিতি পায়। ২০১৮ সালের মে মাসে অ্যাকর্ডের কার্যকারিতার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ ও অ্যাকর্ডের প্রতিনিধিরা (ফাইল ছবি)

একই সময়ে একই লক্ষ্যে গঠিত আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স নির্দিষ্ট সময়ের পর ফিরে গেলেও কাজ শেষ হয়নি বলে আরও তিন বছর সময় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় অ্যাকর্ড, যাতে আপত্তি তোলে বাংলাদেশের পোশাক কারখানা মালিকরা।

মালিক ও শ্রমিকপক্ষের বিরোধিতার কারণে অ্যাকর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির ওই উদ্যোগ আদালতে গড়ায়।

পরে গত ৮ মে অ্যাকর্ড ও বিজিএমইএ যৌথভাবে আরও ২৮১ কর্মদিবস কাজ করতে একটি সমঝোতা চুক্তিতে সই করে। তার ধারাবাহিকতায় গঠিত হয় আরএসসি।

অ্যাকর্ডের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে অনেক পোশাক কারখানায় অবকাঠামোগত সংস্কার হলেও এক পর্যায়ে তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ হতে থাকে মালিক পক্ষ।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানও অ্যাকর্ডের নানা ‘অনিয়মের’ কথা গণমাধ্যমে বলেছিলেন। কেন তারা চলে না গিয়ে বার বার সময় বাড়াতে চাচ্ছে সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন তিনি।

তবে সময় বাড়ানোর পক্ষে অ্যাকর্ডের যুক্তি ছিল, কারখানায় যে রকম সংস্কার আনতে তারা কাজ শুরু করেছিলেন তা শেষ না হওয়ায় চলে গেলে উদ্দেশ্য সফল হবে না।

অ্যাকর্ডের কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গঠন করা হয়েছিল রিমেডিয়েশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বা আরসিসি। কিন্তু এই কর্তৃপক্ষের ‘সক্ষমতা তৈরি হয়নি’ অভিযোগ তুলে তাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেনি অ্যাকর্ড।

তবে এখন যে আরএসসি গঠন করা হয়েছে তাতে দেশীয় ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ রয়েছে।

অ্যাকর্ডের অধীনে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “অ্যাকর্ডের নির্দেশনা মেনে কারাখানাগুলোকে দেড় বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছে। কিন্তু বার বার তাদের সিদ্ধান্ত ও স্ট্যান্ডার্ড পরিবর্তনের কারণে টাকা খরচ করেও অনেক মালিক সনদ পাননি। অনেকের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

“২০১৭ সালের অক্টোবরে ভিন্ন একটি কোম্পানিকে সংস্কার কাজ দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে দেয়, যারা মোটেও এই কাজে অভিজ্ঞ বা দক্ষ ছিল না। তারাই বেশি সর্বনাশ করেছে।”

নবগঠিত আরএসসি অ্যাকর্ডের মান বজায় রেখেই কাজ চালিয়ে যাবে মন্তব্য করে রুবানা হক বলেন, “ইতোমধ্যেই আমরা কিছু নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছি। গত বছর ৫১টি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছি, যারা গত ছয় বছরেও সংস্কারের শর্তগুলো পূরণ করতে পারেনি। সম্প্রতি কলকারখানা অধিদপ্তরের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী আরও ৮৪টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই ৮৪টি কারখানার কোনো কর্মকাণ্ড নেই, দীর্ঘদিন তারা ইউডি নিচ্ছে না, কাজও করছে না। এসব কাজের মাধ্যমে আমাদের বার্তা হচ্ছে, আমরা নিয়ম মেনে কাজ করে যাব।”