মধ্যভাগে এসে জমে উঠছে বাণিজ্য মেলা

দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে ছুটির দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে জমে উঠল ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2020, 03:38 PM
Updated : 11 Jan 2020, 05:27 PM

‘মুজিববর্ষের’ ক্ষণগণনার উদ্বোধন উপলক্ষে সাপ্তাহিক ছুটির প্রথম দিন শুক্রবার সারা দিন বন্ধ ছিল মেলা, তার আগের দুই দিনেও আধাবেলা করে বন্ধ রাখতে হয়েছিল।

শনিবার সরকারি ছুটির দিনে সকাল থেকেই যেন সেই সেই বন্ধ থাকার আক্ষেপ পুষিয়ে নিয়েছে মেলা। সকাল ১০টায় মেলার দরজা খোলার পর ১১টার মধ্যেই সরগরম হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ।

দুপুরের মধ্যে মেলার অলি-গলি দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠে, যা সাধারণত অন্য সময়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোর বিকালে দেখা যায়।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় শনিবার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

গত ১ জানুয়ারি ঢাকার শেরেবাংলা নগরে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এবার শীতে অস্বাভাবিক বৃষ্টির বাধায় প্রথম দিকে জমেনি বাণিজ্য মেলার বেচাকেনা। তাই এদিন দর্শনার্থীর উপস্থিতি বিক্রেতাদেরকেও আশা দেখিয়েছে।

মেলার পূর্বপ্রান্তে ইরানি মসলাসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ী বাদল।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুধ ও বৃহস্পতিবার মেলা আধাবেলা করে বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার তো আগুন লাগার পর সন্ধ্যার মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে এবার মেলার শুরুর দিকটা খুব খারাপ গেছে।

“আজকে সকাল থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের দেখা গেছে। কিছুটা বেচা-বিক্রিও হচ্ছে। আজকে একটা ভালো বিক্রির আশা করছি।”

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় একটি স্টলে দর্শনার্থীর ভিড়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

দুই বছর বিরতি দিয়ে এবার মেলায় এসেছে কুমিল্লার বিসিক শিল্প নগরীর ফরিদ ফাইবার।

এই স্টলের বিক্রয়কর্মী অভি জানান, এতোদিন এই কোম্পানি সাগরে মাছ ধরার জাল ও রশি তৈরি করছিল। এবার তারা প্লাস্টিকের তৈরি বিশেষ ধরনের শীতল পাটি নিয়ে এসেছেন। প্লাস্টিকের পাটির ভেতরে শক্ত ফোম বসিয়ে বিশেষ ধরনের স্লিপিং মেট (প্রতিটি ১৩০০ টাকা), শীতল পাটি, জায়নামাজ, ওয়াল মেট নিয়ে এসেছেন তারা। প্রতি বর্গফুট ৫০ টাকা দরের এই রঙিন ওয়াল পেপার পাকা ঘরের দেওয়ালে সেঁটে দিলে তাদের আর রঙ করতে হয় না।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার একটি স্টলে দর্শনার্থী। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

“দেশে তৈরি এসব পণ্য এবারই প্রথম মেলায় নিয়ে আসা হয়েছে। মাত্র ছয় মাস আগে এই পণ্যের উৎপাদন শুরু হয়েছে। এবারের মেলায় ভালো একটা পরিচিতি পাওয়া যাবে বলে আশা করছি,” বলেন অভি।

এবার মেলা শুরুর তৃতীয় দিনেও অধিকাংশ স্টলের কর্মীরা ব্যস্ত ছিলেন নির্মাণ ও পণ্য সাজানোর কাজে। মেলার ১১তম দিনেও দু-চারটি স্টলে দেখা গেল প্রস্তুতির কাজ।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ১০ দিন কেটে গেলেও কিছু স্টলে গিয়ে দেখা যায়, এখনও চলছে গোছানোর কাজ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

মেলায় আসতে এত দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে দুবাই থেকে সুগন্ধি এনে বিপণনকারী তুষার আহমেদ বলেন, “এবারের মেলায় স্টল পাইনি। বেশ খাটাখাটনির পর একজনের কাছ থেকে স্টল ভাড়া নিয়েছি। সে কারণেই মেলায় আসতে এতো দেরি।”

মিরপুর থেকে স্ত্রী, বোনসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে মেলায় আসা তুহিন বলেন, “এ বছর আজই প্রথম মেলায় আসলাম। গতকাল আসার ইচ্ছে থাকলেও পরে শুনতে পারি মেলা বন্ধ রয়েছে।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার একটি স্টলে দর্শনার্থী। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

“এবারের মেলায় খোলামেলা পরিবেশ ও চলাচলের বিস্তৃত পরিসর ভালো মনে হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত মেলার অর্ধেকটা ঘুরে দেখা হয়েছে। তবে পুরোটা জায়গা না ঘুরে মেলা থেকে বের হচ্ছি না। তাছাড়া কেনাকাটাও কিছু বাকি আছে।”

মেলায় আসবাব ও দেশীয় পোশাকের প্যাভিলিয়নগুলোতেই বেশি ভিড় দেখা গেছে। কয়েক বছর আগে বাজারে আসা স্নোটেক্স গার্মেন্টের ব্র্যান্ড ‘সারা’-এর প্যাভিলিয়নে দুপুর থেকে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় একটি স্টলে দর্শনার্থীর ভিড়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এই স্টলে একজন ক্রেতা বলেন, “এই শীতের সময়ে তারা সময়োপযোগী পণ্য নিয়ে এসেছে। সারার হালকা পাতলা জ্যাকেটগুলো এই শীতে ভালোই উপযোগী। সারার পণ্যগুলো দেখতে সুন্দর, দামেও সাশ্রয়ী।”