ছুটির দিনে জমজমাট রিহ্যাব মেলা

ক্রেতা আর দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে জমজমাট ছুটির দিন পার করেছে ঢাকায় রিহ্যাবের শীতকালীন মেলা।

রিহ্যাব উইন্টার ফেয়ারের চতুর্থ দিন শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণের এই মেলায় ক্রেতারা বেছে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন নিজেদের পছন্দের ফ্ল্যাট।

মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন আবাসন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বলছেন, মূলত ক্রেতাদের সঙ্গে সংযোগের পথ তৈরি করছে মেলা। এর সঙ্গে অনেকে তাৎক্ষণিক বুকিংও দিচ্ছেন।

রাজধানীর বসুন্ধরা, উত্তরা বা ধানমণ্ডিতে পছন্দের ফ্ল্যাট বেছে নিতে মেলায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাইফ খান।

মেলা ঘুরে ফেরার পথে কথা হয় তার সঙ্গে। জানালেন, বুকিং না দিলেও কয়েকটি ফ্ল্যাট বাছাই করেছেন তিনি। এখন গিয়ে দেখে চূড়ান্ত করার পালা।

”জায়গাভেদে ফ্ল্যাটের দাম অনেক। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমেরিকার চেয়ে বেশি দাম এখানকার ফ্ল্যাটের। তবুও খুঁজে দেখছি, যদি কেনা যায়,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন সাইফ খান।

চলমান প্রকল্পের চাইতে রেডি ফ্ল্যাটের দিকে নিজের আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি নগদ টাকা দিয়ে নগদে ফ্ল্যাট বুঝে নিতে চাচ্ছি। পরের জন্য ওয়েট করতে চাই না।”

মঙ্গলবার থেকে চলছে রিহ্যাব আয়োজিত পাঁচ দিনের শীতকালীন মেলা। বিভিন্ন অফার নিয়ে মেলায় ১১৫টি আবাসন প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। তাদের সঙ্গে ৩০টি নির্মাণসামগ্রী এবং ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মেলায় যোগ দিয়েছে।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রিহ্যাব উইন্টার মেলার চতুর্থ দিনে একটি স্টলে দর্শনার্থী। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

চতুর্থ দিন বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ক্রেতাদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। ক্রেতাদের বহু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ফ্ল্যাট বাছাইয়ে সহায়তায় ব্যস্ত ছিলেন বিভিন্ন স্টলের কর্মীরা।

স্বামী-সন্তানকে নিয়ে শুক্রবার বিকেলে রিহ্যাবের এই মেলায় আসেন সম্প্রতি অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা আফসানা খানম।

পেনশনের টাকায় কেনার পরিকল্পনা থেকে মেলায় ফ্ল্যাট খোঁজার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “মিরপুর ও বাড্ডা এলাকায় কয়েকটি ফ্ল্যাট দেখেছি। বাজেট আর দামের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করছি। রেডি ফ্ল্যাটই কিনব আমরা।”

রিহ্যাব মেলায় এসে সাধের সঙ্গে সাধ্যের সমন্বয় করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানালেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আসাদুল কবির।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমনিতে ফ্ল্যাটের দাম বেশি মনে হচ্ছে। আমার যে বাজেট, সে অনুযায়ী এলাকা ও ফ্ল্যাটের আকার অনুযায়ী মেলানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।”

বাজেটের সঙ্গে মিলিয়ে মিরপুর এলাকায় ফ্ল্যাট খুঁজছেন বলে জানান আসাদ।

ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে বড় রকমের সাড়া পাওয়ার কথা জানান বেসিক বিল্ডার্সের হেড অব সেলস মাজহারুল আলম মামুন।

তিনি জানান, ঢাকার সাতটি স্থানে ৬০-৭০টি রেডি ফ্ল্যাট এবং চলমান ৬০ প্রকল্পে পাঁচ শতাধিক ফ্ল্যাট নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছেন তারা। জায়গা ভেদে এসব ফ্ল্যাটের দাম বর্গফুট প্রতি সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।

এক প্রশ্নে মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ”আমাদের ফ্ল্যাটগুলোর আয়তন ১২০০ বর্গফুট থেকে শুরু করে দুই হাজার ৮৫০ বর্গফুট পর্যন্ত। তবে ১২০০ থেকে ১৭০০ বর্গফুট পর্যন্ত ফ্ল্যাটগুলোর চাহিদা একটু বেশি।”

ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রিহ্যাব উইন্টার মেলার চতুর্থ দিনে একটি স্টলে দর্শনার্থী। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

রেডি-ফ্ল্যাটে তাৎক্ষণিক বুকিংয়ে ৩-৭ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দেওয়ার কথা জানান বেসিক বিল্ডার্সের কর্মীরা।

এক প্রশ্নে প্রতিষ্ঠানের হেড অব সেলস মামুন বলেন, ”নতুন কিংবা পুরাতন যে কোনো প্রকল্পে গ্যাস সংযোগ আর দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে আমরা ভবনের নিচতলা থেকে এলপিজির মাধ্যমে গ্যাসের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।”

ঢাকার ২০টি চলমান প্রকল্পের দুই শতাধিক ফ্ল্যাট নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছে আবাসন প্রতিষ্ঠান কনপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংস। ফ্ল্যাটগুলোর আয়তন এক হাজার ১৯০ থেকে চার হাজার ৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত।

এলাকাভেদে ফ্ল্যাটগুলোর দাম প্রতি বর্গফুটে ৮ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা বলে জানান প্রতিষ্ঠানের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কাজী শামসুল আলম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকার বিভিন্ন এলাকার এসব ফ্ল্যাট এলাকাভেদে দাম নির্ধারিত হয়েছে। জায়গার দাম, দিক অনুযায়ী ফ্ল্যাটের অবস্থান এবং ইন্টেরিয়রের ‍উপর ফ্ল্যাটের দামও নির্ভর করে। আমরা সেভাবে দাম নির্ধারণ করেছি।”

বৃহস্পতিবার তিনটি ফ্ল্যাট বুকিং হওয়ার কথা জানিয়ে শামসুল আলম বলেন, “মেলা মূলত আমাদের সঙ্গে ক্রেতাদের সংযোগটা তৈরি করে। আমাদের প্রকল্পের কাজ এগোতে থাকবে আর তারা পছন্দ হলে বুকিং দেবেন। আমরা আমাদের ফ্ল্যাটের পরিচিতি ও অবস্থা তাদের কাছে তুলে ধরছি।”

ফ্ল্যাট ও প্লটের নিবন্ধন ফি কমানোর ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের বিষয়ে এক প্রশ্নে এই আবাসন ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, তারা নিবন্ধন ফি ও ট্যাক্স কমানোর আশ্বাস দিয়েছে। আমাদের আশা, নিবন্ধন ফি কমলে ফ্ল্যাটের দামও কমবে।”