বাণিজ্য মেলায় কমছে কলেবর, বাড়ছে প্রবেশ মূল্য

নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি জোরেশোরে চললেও এবারে কমে আসবে স্টল-প্যাভিলিয়নের সংখ্যা; বাড়বে মেলায় আগতদের জন্য টিকেটের দাম।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2019, 01:43 PM
Updated : 27 Dec 2019, 01:44 PM

বাণিজ্য মেলার ২৫তম এই আসরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ পরিকল্পনা মতই এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি।

বার্ষিক এ মেলার ভেন্যু রাজধানীর পাশের উপশহর পূর্বাচলে স্থানান্তর করা হবে বলে গত কয়েক বছর ধরেই ঘোষণা দেওয়া হচ্ছিল সরকারের তরফ থেকে। তবে আসন্ন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাও বসবে আগের ভেন্যু শেরেবাংলা নগরেই।

এবার স্মৃতিসৌধের আদলে তৈরি করা হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার তোরণ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বৃহস্পতিবার মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, বেশ কিছু বড় প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও ছোট ছোট স্টল ও মিনি প্যাভিলিয়ন, সাধারণ প্যাভিলিয়ন নির্মাণ কাজ অনেকটা পিছিয়ে আছে। শেষ হয়নি মেলার প্রধান ফটকের নির্মাণ কাজ।

তবে মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত ইপিবির একজন কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই সব প্রস্তুতি তারা শেষ করতে পারবেন।

“আগের চেয়ে কাজের গতি অনেক বেড়েছে। প্রধান ফটকের স্থানটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। সেখান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চলাচল হয় বলে নিরাপত্তার স্বার্থে মাঝে মধ্যে কাজ থামিয়ে রাখতে হয়েছিল। সে কারণে ফটক নির্মাণ কিছুটা পিছিয়ে আছে।”

এবারের মেলায় প্রধান ফটক তৈরি করা হচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রতীক সামনে রেখে। ফটকের দুই পাশে দুটি জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতীকের মধ্যে সেতুবন্ধন হবে পদ্মা সেতুর প্রতীকী কাঠামো।

এর ব্যাখ্যা দিয়ে মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব আব্দুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রাম আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামকে স্মৃতিসৌধের মাধ্যমে প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। দুই স্মৃতিসৌধকে যুক্ত করছে পদ্মা সেতু।”

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় তৈরি হচ্ছে বড় আকারের প্যাভিলিয়ন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

মাস্টার প্লান অনুযায়ী বাণিজ্য মেলার এবার স্টলের সংখ্যা কমেছে। প্যাভিলিয়ন, মিনি-প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলসহ মোট ৪৫০টি জায়গা বরাদ্দ রেখে মেলার আঙ্গিনা সাজানো হয়েছে; যা গতবছর ছিল ৫৫০টি।  সবচেয়ে বেশি কমেছে সাধারণ স্টল। গত বছর ২৫০টি সাধারণ স্টল থাকলেও এবার মাত্র ৫০টি স্টল রাখা হচ্ছে।

এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, প্রথম দফায় স্টল বরাদ্দ পেয়েও কয়েকজন ব্যবসায়ী শেষ মুহূর্তে মেলায় না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সে কারণে তাদের ছেড়ে দেওয়া স্টলগুলোতে দ্বিতীয় দফায় বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সেখানেও প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না হওয়ায় পাঁচটি স্টল ফাঁকা রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যক্তিগত সমস্যার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান আব্দুর রউফ।

গত ১৩ অক্টোবর প্রথম দফা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্টল বরাদ্দের আবেদন চাওয়া হয়েছিল, যা দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ৫ নভেম্বর। কিন্তু পর্যাপ্ত আবেদন জমা না পড়ায় ১২ ডিসেম্বর ফের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দুটি প্রিমিয়াম প্যাভিলিয়ন, চারটি প্রিমিয়াম মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬টি সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন এবং একটি স্ন্যাকস বুথের জন্য ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন চাওয়া হয়।

টিকেট ৪০ টাকা

গত কয়েক বছরের মত প্রাপ্তবয়স্কদের (১২ বছরের বেশি) টিকেটের দাম আর ৩০ টাকার থাকছে না এবার। বড়দের টিকেটের মূল্য ঠিক হয়েছে ৪০ টাকা। তবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য (২ থেকে ১২ বছর) আগের মতই ২০ টাকার টিকেট কিনতে হবে।  

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় তৈরি হচ্ছে বড় আকারের প্যাভিলিয়ন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

কী কারণে টিকেটের মূল্য বাড়ানো হয়েছে জানতে চাইলে ইপিবির কর্মকর্তা ও মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব আব্দুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সার্বিক দিক বিবেচনা করে এবার প্রবেশ টিকেটের মূল্য বাড়ানো হয়েছে।”

তবে সার্বিক দিক বলতে কী কী বিবেচনা করা হয়েছে- সেই ব্যাখ্যা বাণিজ্য মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষের কাছে পাওয়া যায়নি। 

মেলা চলাকালে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কেনা যাবে টিকেট। মেলায় ২৫ শতাংশ টিকেট অনলাইনে বিক্রির শর্ত দেওয়া হয়েছে।

প্রবেশ টিকেট বিক্রির গেইটের ইজারা পেতে এবার সর্বনিম্ন পাঁচ কোটি ২৫ লাখ টাকা কার্যমূল্য ধরে আবেদন করতে হলেও এর চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করে গেইটের ইজারা পেয়েছে মীর ব্রাদার্স।

এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মীর শহীদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা ৬ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকার রয়্যালিটি দিয়ে টিকেট বিক্রির ইজারা পেয়েছেন।

আর আয়োজকরা বলছেন, মীর  ব্রাদার্স ছাড়া আর কেউ টিকেট বিক্রির ইজারা পাওয়ার আগ্রহ দেখায়নি।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় তৈরি হচ্ছে বড় আকারের প্যাভিলিয়ন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

যা থাকছে মেলায়

দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জনে ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য এবার দুটি ফোয়ারা, ইকোপার্ক, বিশ্রামাগার, মা ও শিশু কেন্দ্র, দুটি শিশু পার্ক রাখা হচ্ছে মেলার ভেতরে।

স্টল সংখ্যা কমে যাওয়ায় মেলায় চলাফেরা, ঘোরাঘুরি ও বিশ্রামাগারের পরিসরও বাড়বে বলে আশা করছে ইপিবি। জনপ্রতি ১৫ টাকা করে টিকেট কিনে শিশু পার্কে খেলতে পারবে মেলায় আসা শিশুরা।  

১২ লাখ এবং ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা রয়্যালিটিতে এই দুটি শিশু পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শিশুদের বিনোদনের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা করা হলে কিছু নির্দেশনা মেনে তা করতে হবে।

সেখানে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের শিশুতোষ প্রদশর্নী থাকলে তা শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক ও নির্মল চিত্র বিনোদনের উপযোগী হতে হবে। বিতর্ক বা অস্থিরতা সৃষ্টিকারী, শিশুদের মানসিক বিকাশের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ কিংবা সমাজের মূল্যবোধ এবং রাষ্ট্রীয় আইনের পরিপন্থি ও সরকার বিরোধী কেনো প্রচারকার্য পরিচালনা করা যাবে না।

একইভাবে মেলার ভেতরে নির্ধারিত স্থানে সুন্দরবন অথবা কোনো পরিকল্পিত ইকোপার্কের আদলে শোভা বর্ধন স্থাপনা নির্মাণ করা হলে সেখানেও সমাজবিরোধী, সরকারিবিরোধী, উস্কানিমূলক কিংবা শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো প্রচার চালানো যাবে না বলে সতর্ক করেছে ইপিবি।