বাজার মূল্য নির্ধারণে উৎপাদনকারী, ভোক্তা ও বিপণনকারী সব পক্ষের স্বার্থ যাতে সংরক্ষিত হয় সেজন্য এই কমিশনকে সব পক্ষের হয়ে কাজ করতে হবে বলেও পরামর্শ দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর টিসিবি ভবনে নবগঠিত প্রতিযোগিতা কমিশন আয়োজিত ‘ব্যবসায়ী ও ক্রেতা স্বার্থ সংরক্ষণে বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা এমন একটি দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম যেখানে মানুষ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্তভাবে বেঁচে থাকবে। এই দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে সেই লক্ষ্যকে সামনে নিয়েই বর্তমান সরকার কাজ করছে।”
প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার সংগঠনকে বাজার নিয়ন্ত্রণে সাইকেলের দুটি চাকার সাথে তুলনা করে তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা যাতে শুভ প্রতিযোগিতা হয় সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। কারণ কোনো অশুভ প্রতিযোগিতা সেটা যদি ভোক্তার পক্ষে যায় কিংবা ব্যবসায়ীর পক্ষে যায় দুটোই বাজারের জন্য ক্ষতিকর।”
“চাষী যদি ন্যায্যমূল্য পায় তাহলে চাষাবাদ বেড়ে যাবে। বাজারে পণ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত হবে। কিন্তু অধিক উৎপাদনের কারণে যদি বাজার সয়লাব হয়, যদি ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা না যায় তাহলে পরের বছর চাষাবাদ আবার কমে যাবে, বাজারে ঘাটতি পড়বে। তাই প্রতিযোগিতা কমিশনের কাছে উৎপাদন পর্যায় থেকে শুরু করে ভোক্তার হাত পর্যন্ত নিবিড় গবেষণা ও তথ্য উপাত্ত থাকতে হবে। জনগণকে ভালো রাখার দায়িত্ব সরকারের। ভোক্তা, উদ্যোক্তা, উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী সবাই জনগণের মধ্যে পড়ে। সুতরাং সবার সুষম স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে।”
“ব্যবসায় সঠিক লভ্যাংশ কী হবে তার কোনো মানদণ্ড আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি। মূলত বাজার ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা গেলে লভ্যাংশও প্রতিযোগিতামূলক হবে। কোনো পক্ষই আর অসাধু উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ন করতে পারবে না,” বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশন একদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণ অন্যদিকে বাজার উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। বাজার অর্থনীতি প্রতিযোগিতামূলকভাবে না চলার কারণেই বিভিন্ন সময় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক মন্দা দেখা দেয়।
“এর ফলে সৃষ্টি হয় বিশাল কর্মহীনতা। মানুষের আয় রোজগার কমে যায়, ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়; এমনকি লুপ্ত হয়ে যায়।”
বাংলাদেশের বর্তমান বাজার পরিস্থিতির আলোকে লবণ, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ব্যাংক ঋণের সুদহার, গণপরিবহন, চিনি ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে অগ্রাধিকার দিয়ে নবগঠিত প্রতিযোগিতা কমিশন কাজ করতে পারে বলে পরামর্শ দেন ফরাসউদ্দিন।
১৮৮৯ সালে কানাডায় প্রথম প্রতিযোগিতা আইন চালু হয়। পরের বছর যুক্তরাষ্ট্রে এবং ১৯৪৭ সালে জাপানে এ ধরনের আইন হয়। এশিয়ার ১৭টি দেশসহ বিশ্বের ১৩০টি দেশে প্রতিযোগিতা আইন চালু আছে। এই আইন যতো শক্তিশালীভাবে কার্যকর হবে অর্থনীতি ততো শক্তিশালী হয়ে তার গন্তব্যে পৌঁছাবে।
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম, বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দীন, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম ও প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য আবদুর রউফ বক্তব্য রাখেন।
২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন পাস হওয়ার পর ২০১৬ সালে প্রথম এর দপ্তর গঠন করা হয়। তবে আইন অনুযায়ী এই কমিশনের চারজন সদস্য ও একজন চেয়ারপারসনের লোকবল এখনও পূর্ণ হয়নি। ফলে ব্যবসায়িক বিরোধ নিষ্পিত্তি এখনও পূর্ণ গতিতে শুরু হয়নি। তবে ইতোমধ্যে দুটি বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে এবং দুটি বিরোধ নিষ্পত্তির পর্যায়ে রয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।