তারাগঞ্জে হচ্ছে দেশের ‘সবচেয়ে বড়’ জুতার কারখানা

অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে রংপুরের তারাগঞ্জে গড়ে উঠছে অত্যাধুনিক জুতার কারখানা।

আবদুর রহিম হারমাছি রংপুর থেকে ফিরেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2019, 04:20 PM
Updated : 6 Dec 2019, 04:22 PM

দুইশ’ কোটি টাকা বিনিয়োগে ব্লিং লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড নামের এই কারাখানাটি গড়ে তুলেছেন প্রবাসী বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান।

রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক এ প্রকল্পে ৭৫ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে। ইতোমধ্যে কারখানার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৩৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১৭ কোটি টাকা দিয়েছে ব্যাংকটি।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে এশিয়ান হাইওয়ের কাছে তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছনে ঘনিরামপুরে সাড়ে ৮ একর জমির উপরে স্থাপন করা হয়েছে এই কারখানা।

ইতোমধ্যে কারখানাটিতে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান।

কারখানাটিতে বিশ্বমানের সিনথেটিক ও চামড়ার জুতা তৈরি হবে, যা ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে রপ্তানি পরিকল্পনা রয়েছে।

গত শুক্রবার কারখানাটি সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, শেষ হয়েছে কারখানার মূল ভবনসহ আনুষঙ্গিক নির্মাণ কাজ। তাইওয়ান থেকে আনা হয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, যা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুতাসামগ্রী। পরীক্ষামূলক উৎপাদনে কাজও শুরু করেছেন শ’ পাঁচেক শ্রমিক।

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদসহ ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তারাও গিয়েছিলেন কারাখানাটি পরিদর্শনে।

কারখানা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এক ঢিলে দুই পাখি মারার লক্ষ্যে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছি। প্রথমত, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকার বাইরে একেবারে গ্রামে বড় একটি কারখানা গড়ে তুলতে সহায়তা করছি। আর দ্বিতীয়ত, আমরা ‘তেলো মাথায় তেল না দিয়ে’ নতুন একজন উদ্যোক্তাকে বেছে নিয়েছি।

“আশা করছি প্রকল্পটি সফল হবে। উত্তরাঞ্চলের অর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।”

প্রকল্পের কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্লিং লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড শতভাগ রপ্তানিমুখী চামড়াজাত সিনথেটিক জুতা এবং অন্যান্য পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। এখানে সিনেথেটিক জুতা, চামড়াজাত জুতা, বেল্ট ও ওয়ালেট তৈরি হবে।

উৎপাদন ক্ষমতার হিসাবে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুতা তৈরির কারখানা এটি। এখানে দৈনিক তৈরি হবে ২২ হাজার জোড়া জুতা। এসব জুতা রপ্তানি হবে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বড় দেশগুলোতে। পুরোদমে উৎপাদনে গেলে আড়াই হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে এই কারখানায়, যার ৯০ শতাংশই হবে নারী।

দুই ভাই মোহাম্মদ সেলিম ও মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান মিলে গড়ে তুলেছেন ব্লিং লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড। তাদের গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর বাবুগ‌ঞ্জে। হাসানুজ্জামান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। আর সেলিম ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

দুই ভাই-ই এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে থাকতেন। বড় ভাই সেলিম বেশ কিছু দিন আগে দেশে ফিরে ব্যবসা করছেন। রংপুর ও নীলফামারীতে দুটি কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে তাদের।

হাসানুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে আবাসন নির্মাণ ব্যবসায়ী।

কারাখানাটি পরিদর্শনের সময় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার কারণে আমার অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্তা-ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তাদের পরামর্শেই আমরা দুই ভাই মিলে এই কারখানাটি গড়ে তুলেছি। আশা করছি, দেশের অর্থনীতি এবং উত্তরাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারব।

“আমার দীর্ঘদিনের এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কেবল বাকি শুল্ক সংক্রান্ত কিছু জটিলতা। সেগুলোর সমাধান হলে ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হবে বাণিজ্যিক উৎপাদন।”

হাসানুজ্জামান বলেন, “রংপুর, নীলফামারী ও সৈয়দপুরের অনেক মেয়ে ঢাকায় এপেক্স, বাটার কারখানায় কাজ করে। তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের এখানে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নিজের বাড়িতে থেকে নিজের এলাকার কারখানায় স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করবে তারা।”

প্রথম দিকে কারখানায় শুধু রপ্তানিমুখী জুতা তৈরি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে ইউরোপ- আমেরিকাসহ বড় দেশগুলোর ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তাদের প্রতিনিধি কারখানা ঘুরে গেছেন। ভালো সাড়া পেয়েছি।

“তবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার কারণে দেশের অভ্যন্তরেও জুতার একটি বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।”