সিরামিক শিল্পের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী

সিরামিক শিল্পকে দেশের অন্যতম বর্ধিষ্ণু শিল্প হিসেবে তুলে ধরে এ খাতের বিকাশের প্রতিবন্ধকতাগুলোর দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2019, 02:49 PM
Updated : 5 Dec 2019, 02:49 PM

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সিরামিক পণ্য প্রদর্শনীর উদ্বোধনী পর্বে তিনি এই আহ্বান জানান।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ‘অনেক দূর’ এগিয়ে গেছে সিরামিক শিল্প। এই খাতের সমস্যাগুলো সমাধান করা দরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে সিরামিকের চাহিদা বেড়েই চলছে, এই সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে।

সিরামিকের কাঁচামাল আমদানিতে এখন যেভাবে শুল্কায়ন হয়, তাতে এ শিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে এ খাতের উদ্যোক্তাদের ভাষ্য।

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা সত্যি হলে তা অবশ্যই দূর করা দরকার। আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনা আজও উন্নত হয়নি। বন্দরে এসে কাঁচামাল ২০ থেকে ২৫ দিন পড়ে থাকে। এতে করে ব্যবসায়ীদের বাড়তি একটা ক্ষতি হয়।”

শুল্কায়নে কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বিসিএমইএ এর সচিব জায়েদী হাসান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিরামিক শিল্পের মূল কাঁচামাল হল (ক্লে) খনিজ মাটি যা পাহাড় থেকে কেটে সরাসরি রপ্তানি করা হয়।

“বাংলাদেশে এই ক্লে আমদানি করা হয় চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে। তখন এর মধ্যে পানি, ময়েশ্চার, আয়রনসহ বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় উপাদান থাকে যার পরিমাণ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ।

“ওই কাঁচামাল আমদানির সময় দামের ওপর ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু আমরা প্রসেস করার সময় এখান থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ ওয়েস্ট হয়ে যায়। এই ওয়েস্ট বা বর্জ্যের পরিমাণটা বিবেচনায় নিয়ে শুল্ক আরোপের কথা বলা হচ্ছে।”

শুল্কায়ন পদ্ধতির সমালোচনা করে এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম অনুষ্ঠানে বলেন, “সরকার ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব হলেও বিভিন্ন বিভাগ ব্যবসা বাণিজ্যে অহেতুক বাধার সৃষ্টি করছে। সম্পূর্ক শূল্ক দেওয়া হয় দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার জন্য। সেখানে কোন যুক্তিতে সিরামিক শিল্পের ওপর সম্পূর্ক শূল্ক দিয়ে রাখা হয়েছে সেটাও বোধগম্য নয়।”

এই অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যানের অতিথি হিসাবে আসার কথা থাকলেও তিনি উপস্থিত না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠনের সভাপতি ফাহিম।

তিনি বলেন, “সম্ভবত এসব প্রশ্নের কারণেই এনবিআর চেয়ারম্যান আজ এই অনুষ্ঠানে আসেননি।”

গত ১০ বছরে বাংলাদেশের সিরামিক শিল্পে ২০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “এখানে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। এই শিল্পের জন্য সরকারের প্রণোদনা থাকা উচিত ছিল।”

ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমানোর পদক্ষেপে ধীর গতি নিয়েও সমালোচনা করেন ফজলে ফাহিম।

তিনি বলেন, “এনবিআর ও অর্থমন্ত্রণালয় ব্যবসা বাণিজ্যে এমন এমন কিছু বাধা তৈরি করেছে, যা আসলেই কাম্য নয়। অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের ১১ মাস পর আওয়াজ তুলেছেন যে, ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমাতে হবে। তাহলে তিনি কী করেছেন?”

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও সুদ হার নিয়ে কথা বলেন; এ বিষয়ে তিনি ব্যাংকারদের সমালোচনা করেন।

“১২ থেকে ১৪ শতাংশ সুদ দিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। ৮ মাস আগেই প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন সিঙ্গেল ডিজিট সুদের জন্য। এজন্য তাদেরকে বেশ কিছু সুবিধাও দিয়েছিলেন। তারা সুবিধা নিলেন, কিন্তু সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিট করলেন না। প্রধানমন্ত্রী বললেন, তবু কাজের কাজ কিছুই হল না।”

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, তাদের কাঁচামাল বন্দরে পৌঁছানোর পর তা খালাস করতে ৪০ থেকে ৫০ দিন সময় লেগে যায়। এটা এই খাতের প্রবৃদ্ধির জন্য বড় বাধা। সরকারের সঠিক সহায়তা পেলে এই শিল্পকে দেশের অন্যতম রপ্তানি খাতে পরিণত করা সম্ভব।  

ঢাকায় দ্বিতীয়বারের মত আয়োজিত সিরামিক পণ্যের এই আন্তর্জাতিক মেলায় বাংলাদেশসহ ২০টি দেশের ১৫০টি ব্র্যান্ড অংশ নিচ্ছে। টাইলস, সিরামিকের কাঁচামাল, মেশিনারিজ, সিরামিকের তৈজসপত্র স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা মেলার দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।