
ধর্মঘটের উদ্দেশ্য অস্থিরতা সৃষ্টি, অভিযোগ পেট্রোল পাম্প মালিকদের একাংশের
নিজস্ব প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 03 Dec 2019 07:01 PM BdST Updated: 03 Dec 2019 09:25 PM BdST
রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ২৬ জেলায় জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধে যারা ধর্মঘট ডেকেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অভিযোগে তুলেছে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আরেক অংশ।
Related Stories
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয়দানকারী মোহাম্মদ নাজমুল হক।
তিনি দাবি করেন, যারা ওই ধর্মঘট পালন করেছেন তারা এই পরিষদে এক সময়ে থাকলেও তাদের প্রধান সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম তেল পাচারের অভিযোগে ঐক্য পরিষদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন।
তারা ‘বেআইনিভাবে’ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নাম ও ব্যানার ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ করেন নাজমুল।
তিনি বলেন, “গত ১০ বছর ধরে সরকারের কাছে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তেল বিক্রির কমিশন ও ট্যাংক লরির ভাড়া বৃদ্ধিসহ ১২ দফা দাবি জানিয়ে আসছি। এর মধ্যে কিছু দাবি সরকার মেনেও নিয়েছে। অন্যান্য দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে ইতোমধ্যে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী আলোচনার জন্য ১৫ ডিসেম্বর আমাদেরকে নিয়ে সভা আহ্বান করেছেন।
“সরকার থেকে আমাদের দাবি পূরণ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখনই হঠাৎ করে জ্বালানি তেল পাচারের দায়ে আমাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত কতিপয় ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধনে কোনো ধরনের নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করে এ ধর্মঘট পালন করে। তাদের উদ্দেশ্যে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা এবং জ্বালানি তেল সেক্টরকে অস্থিতিশীল করার জন্য সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আমাদের সংগঠনের নাম ও ব্যানার ব্যবহার করে তিনটি বিভাগে ধর্মঘট পালন করেছে।”
এই ধর্মঘটে কেন্দ্রীয় ঐক্য পরিষদের কোনো অনুমোদন নেই এবং এতে সাধারণ মালিক শ্রমিকদের কোনো সমর্থন ছিল না বলে দাবি করেন নাজমুল হক।
বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল বলেন, “এই কর্মসূচির ফলে ওই এলাকার জনগণ ভোগান্তির শিকার হয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। গুটিকয়েক ব্যক্তি তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে অর্থহীন একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল।”
তিন বিভাগে ১ ডিসেম্বর থেকে প্রায় দেড় দিন জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ থাকার পর সোমবার ঢাকায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসির লিয়াজোঁ কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠক থেকে ধর্মঘট ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করার ঘোষণা আসে।
এই বৈঠকের বিষয়ে নাজমুল হক বলেন, “যারা এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল, তারা গতকাল ছোট পরিসরে অনুল্লেখ্য কর্মকর্তাদের সাথে মিটিং করে কোনো দাবি আদায় ছাড়াই ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন।
“আপনারাদের কাছে প্রশ্ন, তেল পাচারের দায়ে অভিযুক্ত এবং মূল সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত ব্যক্তিবর্গের সাথে সরকার কীভাবে বৈঠকে বসেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। সরকারের এহেন দুর্বলতা অপরাধীদের আরও উৎসাহিত এবং সংগঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।”
‘বেআইনি ধর্মঘট’ পালনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান নাজমুল।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যারা ধর্মঘট পালন করেছে, তারা বাঘাবাড়ি তেলের ডিপোসহ যশোরের কয়েকটি ডিপো নিয়ন্ত্রণ করে। যে কারণে এই অঞ্চলে তারা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। সারাদেশে তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো অবস্থা নেই, যে কারণে তারা সারাদেশে এই ধর্মঘট পালন করতে পারেনি।”
তবে ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাপক ভোগান্তি যাতে না হয়, সেই চিন্তা থেকে আমরা সারাদেশে কর্মসূচি দেইনি। সরকার আমাদের দাবি পূরণে আশ্বাস দিয়েছে, আমরা সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করছি।”
ঐক্য থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার বিষয়ে সৈয়দ সাজ্জাদুল বলেন, “তিনি নিজেই বহিষ্কৃত (নাজমুল), তিনি একজন ভূঁইফোড় নেতা। তার নিজের কোনো তেলের ডিপো নেই। ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আমি রয়েছি।”
সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হক ঐক্য পরিষদের পক্ষে ১২টি দাবি তুলে ধরেন।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাস্তবতার নিরিখে তেল বিক্রির কমিশন ও ট্যাংক লরি ভাড়া বাড়ানো, ট্যাংক লরি শ্রমিকদের জন্য পাঁচ লাখ টাকার দূর্ঘটনা বীমা প্রণয়ন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ইজাহা মাশুল অস্বাভাকি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করা, পরিবেশ অদিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, কল কারখানা পরিদর্শন পরিদপ্তরের হয়রানি বন্ধ, ফেরিঘাটে লরি পারাপার অগ্রাধিকার দেওয়া, পেট্রোল পাম্প পরিদর্শনে বিপিসি ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রনিতিধি নিশ্চত করা, ট্যাংক লরি টার্মিনাল সংস্কার ও নতুন টার্মিনাল নির্মাণ, পেট্রোল পাম্প স্থাপন নীতিমালা পুনর্বিন্যাস, ট্যাংক লরিতে পুলিশী হয়রানী বন্ধ, বিএসটিআইর আন্ডার গ্রাউন্ড ট্র্যাংকের কেলিবারেশন প্রথা বাতিল করা, ঢাকা-মাওয়া সড়কের পাশে ৩৫টি পেট্রোল পাম্প মূল সড়কের সাথে সংযোগ এবং নতুন সড়ক আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হারুনুর রশিদ, সহ-সভাপতি এনায়েত হোসেন খান, ঐক্য পরিষদের বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি মীর আহসান উদ্দিন পারভেজসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৬ নভেম্বর বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছিলেন পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের একাংশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি মিজানুর রহমান রতন।
সে অনুযায়ী তিন বিভাগের সব জেলায় রোববার সকাল থেকে পেট্রোল পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপোর শ্রমিকরা তেল উত্তোলন, বিপণন ও সরবরাহ বন্ধ রাখায় ২৬ জেলায় জ্বালানি তেল সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়।
এই অবস্থায় বিপাকে পড়েন গাড়ি চালকরা। পাম্পে এসে তেল না পেয়ে তাদের ফিরে যেতে হয়। উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে সড়কে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যাও কমে যায়। পাম্পগুলোতে ১৫ দফা দাবি সম্বলিত পোস্টার টাঙিয়ে রাখতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন
WARNING:
Any unauthorised use or reproduction of bdnews24.com content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
- ট্রান্সশিপমেন্টে ভারতের কাছ থেকে যৌক্তিক মাশুল: নৌসচিব
- সিরামিক শিল্পের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
- প্রাণ আপের ভোক্তার বিয়েতে যাবেন পূর্ণিমা
- ৯ প্রতিষ্ঠানকে রাইড শেয়ারিংয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন
- কাঠের শিল্পে ঘুরছে ভাগ্যের চাকা
- বিজয়ের মাসে বিকাশের ১৬ টাকায় ১৬ টাকাই ক্যাশব্যাক
- নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর পেট্রোল পাম্পে ‘তেল চুরি’
সর্বাধিক পঠিত
- জাইমার ব্যারিস্টার হওয়ার খবরে উদ্বেলিত বিএনপি নেতারা
- পরকীয়ার অভিযোগে খালেদার আইনজীবী কায়সার গ্রেপ্তার
- বাড়াবাড়ির সীমা থাকা দরকার: প্রধান বিচারপতি
- বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানালেন ‘ইউনিভার্স বস’
- মিরপুরে জোড়া খুনের নেপথ্যে দেহ ব্যবসা: পুলিশ
- এসএ গেমস: মালদ্বীপকে ২৪৯ রানে হারাল মেয়েরা
- ছিলেন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি, হয়ে গেলেন আওয়ামী লীগের সম্পাদক
- ফুটবলে অবশেষে জিতল বাংলাদেশ
- সিদ্ধেশ্বরীতে পড়ে থাকা লাশটি পুলিশকন্যার
- এমবাপে-নেইমারের গোলে পিএসজির জয়