পেট্রোল পাম্প ধর্মঘট ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসির সঙ্গে আলোচনায় কিছু দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2019, 08:15 AM
Updated : 15 Dec 2019, 01:20 PM

রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ২৬ জেলায় প্রায় দেড় দিন জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ থাকার পর সোমবার ঢাকার কারওয়ানবাজারে বিপিসির লিয়াজোঁ কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠক থেকে এই ঘোষণা আসে।

বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “উনারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা জনগণের ভোগান্তি চাই না।

“আগামী ১৫ ডিসেম্বর জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর আহ্বানে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে আমাদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। সে পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি স্থগিত রাখছি।”

জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসির পরিচালক (বিপণন) সৈয়দ মেহদী হাসান বলেন,  তাদের মধ্যে ‘খুবই ফলপ্রসূ’ আলোচনা হয়েছে।

“উনাদের যেসব দাবি, তার মধ্যে বিপিসি সংশ্লিষ্ট বিষয় আছে দুই-তিনটি। বাকিগুলোর বিষয়ের অন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।”

তবে জ্বালানি তেল বিক্রিতে পাম্প মালিকদের কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ কমিশন দেওয়ার যে দাবি ছিল, সে বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মেহদী হাসান বলেন, “মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।”

গত ২৬ নভেম্বর বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছিলেন পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি মিজানুর রহমান রতন।

সে অনুযায়ী তিন বিভাগের সব জেলায় রোববার সকাল থেকে পেট্রোল পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপোর শ্রমিকরা তেল উত্তোলন, বিপণন ও সরবরাহ বন্ধ রাখায় ২৬ জেলায় জ্বালানি তেল সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়।

এই অবস্থায় বিপাকে পড়েন গাড়ি চালকরা। পাম্পে এসে তেল না পেয়ে তাদের ফিরে যেতে হয়। উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে সড়কে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যাও কমে যায়। পাম্পগুলোতে ১৫ দফা দাবি সম্বলিত পোস্টার টাঙিয়ে রাখতে দেখা যায়। 

এই ১৫ দফায় রয়েছে- জ্বালানি তেল বিক্রিতে কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ কমিশন দেওয়া,  জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট নাকি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান- বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা, প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরি শ্রমিকদের জন্য ৫ লাখ টাকার দুর্ঘটনা বীমা,  ট্যাংকলরির ভাড়া বৃদ্ধি, পেট্রোল পাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণের নিয়ম বাতিল, পেট্রোল পাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম বাতিল, পেট্রোল পাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট করা, জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল করা, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক পেট্রোল পাম্পের প্রবেশ দ্বারের ভূমির জন্য ইজারা নেওয়ার নিয়ম বাতিল, ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম বাতিল, আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ৫ বছর অন্তর বাধ্যতামূলকভাবে ক্যালিব্রেশনের নিয়ম বাতিল, ট্যাংকলরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, সুনির্দিষ্ট দপ্তর ছাড়া ডিলার বা এজেন্টদের অযথা হয়রানি বন্ধ করা, নতুন কোনো পেট্রোল পাম্প নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় জ্বালানী তেল মালিক সমিতির ছাড়পত্রের বিধান চালু করা, পেট্রোল পাম্পের পাশে যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা এবং বিভিন্ন জেলায় ট্যাংকলরি থেকে চাঁদা গ্রহণ বন্ধ করা।

এসব দাবি নিয়ে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিপিসির লিয়াজোঁ অফিসে বৈঠকে বসেন পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম, মহাসচিব মিজানুর রহমান রতন, পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এ মোমিন দুলাল, পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, খুলনা বিভাগের সহ-সভাপতি এম মাহবুবুল আলম, সিনিয়ন সহ সভাপতি মোহাম্মদ সোবহান আব্দুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক শেখ মুরদা হোসনেসহ রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

দীর্ঘ আলোচনা শেষে বেলা দেড়টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা।

সাজ্জাদুল করিম বলেন, “আমরা সেই অর্থে কোনো ব্যবসায়ী নই। আমরা হলাম বিপিসির কমিশন এজেন্ট। সেই হিসাবে এসব সংস্থার ফি যদি বাড়ে এবং এতগুলো বিভাগ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়, তাহলে সেই খরচ হিসাব করে আমাদের কমিশন ঠিক করতে হবে। আমাদের বর্তমান কমিশনে এসব কিছুর হিসাব নেই। বৈঠকে কমিশন বাড়ানো হবে বলে মত দিয়েছে সরকারি কর্তৃপক্ষ।”

বিপিসি কর্মকর্তা মেহেদী বলেন, বর্তমানে পেট্রোলের ক্ষেত্রে প্রতি লিটারে ৩ দশমিক ৩৬ টাকা, অকটেনের জন্য প্রতি লিটারে ৪টাকা, ডিজেলের ক্ষেত্রে ১ দশমিক ৯৯ টাকা ও কেরোসিনে শূন্য দশমিক ৯০ টাকা কমিশন পাচ্ছেন পেট্রোল পাম্প মালিকরা।

“সর্বশেষ পর্যালোচনায় পেট্রোলের কমিশন বাড়েনি। আগামী কাল বৈঠক আছে, সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।”