ধর্মঘটের প্রভাব চালের বাজারে পড়বে না: খাদ্যমন্ত্রী

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘটে আগামী ১০ দিন ট্রাক ও কভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকলেও ঢাকায় চালের বাজারে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2019, 08:02 AM
Updated : 20 Nov 2019, 08:02 AM

বুধবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চালের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে মিল মালিকদের সঙ্গে এক সভার শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রীর এমন মন্তব্য আসে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “সাত দিনও যদি পরিবহন ধর্মঘট থাকে, ১০ দিনও যদি থাকে, বাবুবাজারে যে স্টক থাকে, বড় বড় বাজরে যে স্টক আছে, ঢাকার বাজারে বিন্দুমাত্র (সমস্যার) কারণ নেই।

“৩-৪ দিন কেন, ১০ দিন বন্ধ থাকলেও প্রভাব পড়বে না, যদি কেউ কারসাজি না করে, গ্যারান্টি দিলাম, আমার সোজা কথা।”

পরিবহন শ্রমিকদের ‘স্বেচ্ছা কর্মবিরতিতে’ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরের বেশ কিছু জেলায় গত দুদিন ধরেই বাস চলাচল বন্ধ ছিল। বুধবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও দূরপাল্লার বাস চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

এর মধ্যেই সকাল থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান ধর্মঘট। ফলে পণ্য পরিবহনে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। 

ধর্মঘটের আগেই যে খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে, সে কথা মিল মালিকদের সঙ্গে সভার শুরুতে স্বীকার করে নেন খাদ্যমন্ত্রী। তার ভাষায়, এই দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।

“মিল ও বাজার মনিটর করে দেখা গেছে, মজুদের কোনো ঘাতটি নেই, আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই, বরং রপ্তানি করা জন্য প্রস্তুত আছি।“

সাধন মজুমদার বলেন, কেউ যেন চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করতে না পারে, সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেও বলা হয়েছে।

“যদি অনাহুত কেউ চালের দাম বাড়াতে চায়, তাহলে কোন ক্রমেই সহ্য করা হবে না, প্রশয় দেওয়া হবে না।”

মন্ত্রী তথ্য দেন, ২৬-২৭ টাকার মোটা চাল খুচরা বাজারে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে ভোক্তাদের ‘আঁতে ঘা’ লাগছে। সরকার এটা চলতে দেবে না।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পাইকাররা কেজিতে ৫০ পয়সার বেশি লাভ করতে পারেন না, এর বেশি করলে দেশেকে আপনারা শোষণ করতে বসেছেন, এটাও সহ্য করা হবে না। খুচরা বাজার আপনাদের কন্ট্রোল করতে হবে মনিটরিং করতে হবে।

সরকারি গুদামে ১১ লাখ ১২ হাজার ৬৭৪ টন চাল মজুদ আছে এবং চাল ও গম মিলিয়ে মজুদের পরিমাণ ১৪ লাখ ৫৯ হাজার মেট্রিক টন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মজুদের এই পরিমাণ ‘অন্যান্য দেশের তুলনায়’ বেশি।

‘চালের দাম আর বাড়বে না’- এমন শপথ নিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান সাধন চন্দ্র মজুমদার, যিনি নিজেও পারিবারিক সূত্রে ধান-চালের ব্যবসায় জড়িত।

গত ৭ দিনে খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “খুচরা বিক্রেতারা বৃদ্ধি করছে, যা বাড়ানো উচিত হয়নি।খুচরা বাজারে এটি হচ্ছে, চেষ্টা করব দাম যেন আর না বাড়ে। ভোক্তা অধিকার আইনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এক সাংবাদিক সাধন মজুমদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মন্ত্রী কথা বললে পরদিন দাম আরও বাড়ে- এমন একটি কথা প্রচলিত হয়েছে সাধারণের মধ্যে।

উত্তরে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “গতবারের চেয়ে ধানের দাম কম রয়েছে, তাই চালের দামও কম হবে- এটাই কথা। কৃষক দাম পাবে না, মধ্যস্বত্ত্বভোগী বেনিফিট বেশি নেবে- এটা চলতে দেওয়া যাবে না।”

দাম যতটা বেড়েছে তা কমতে কতদিন লাগবে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “এখন থেকে যেন না বাড়ে সেজন্য মিটিং করা হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার জরুরি ভিত্তিতে যাবে।”

বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, “মিল মালিকদের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ করলাম, কোনো কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়নি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ধানের আমদানি কম হওয়ায় দাম বেড়েছে, তবে বাজার এখন স্থির হয়ে আসছে। আমন ধান উঠলে এ রকম হত না।”

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুমসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন এ মত বিনিময় সভায়।