পেঁয়াজের দাম নিয়ে সংসদে ক্ষোভ

পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় এ নিয়ে সংসদে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারি ও বিরোধী উভয় দলের সংসদ সদস্যরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2019, 03:51 PM
Updated : 14 Nov 2019, 06:49 PM

এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে তা খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন।

তিনি বলেন, “পেঁয়াজের ঝাঁজ বেশি হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে এটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। মানুষের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া হলে সেটি খারাপ হবে। এতে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।”

বৃহস্পতিবার পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় উঠে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “কী কারণে প্রতিদিন পেঁয়াজের মূল্য বাড়ছে?

“বাণিজ্যমন্ত্রী যখন বলেন ১০০ টাকার নিচে মূল্য নামবে না, তখন ব্যবসায়ীরা তো সুযোগ পেয়ে যান। বলা হচ্ছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। তাহলে কেন মূল্য বাড়ছে, তা বোধগম্য নয়।”

গত সেপ্টেম্বরে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে; ৩০ টাকা কেজির পেঁয়াজ কয়েক দিনেই পৌঁছে যায় ১০০ টাকায়।

তখন সরকার মিয়ানমার থেকে আমদানি শুরু করে। এছাড়া টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি এবং আড়তগুলোতে অভিযানের পর দাম কিছুটা কমলেও পরে আবার দাম বাড়তে শুরু করে।

এরপর তুরস্ক ও মিশর থেকে আরও আমদানি করে দাম ৮৫ টাকায় নামিয়ে আনার আশা দেখালেও তা তো ঘটেইনি; উল্টো ঘূর্ণিঝড়ের পর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ২০০ টাকায় উঠেছে।

নাসিম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে বলেছিলেন পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়ে গেছে। তিনি ভারতকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ না করতে অনুরোধ করেছিলেন। সংসদে অর্থমন্ত্রী আছেন, বাণিজ্যমন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রীকে বলব, পেঁয়াজের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আরও তৎপর হওয়া উচিৎ।”

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে, আজকে পেঁয়াজের কেজি দুইশত টাকা। আমরা কোনোদিনই এটা ভাবিনি।”

তিনি  বলেন, “দেশে পেঁয়াজের কী চাহিদা, তা আগেই মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। আমাদের দরকার কত? আছে কত? যেটা ঘাটতি তা তুরস্ক ও মিসরসহ অন্য দেশ থেকে আগেই সংগ্রহ কর।

“যারা পেঁয়াজ আমদানি করেন তাদের সুবিধা দিন। অন্তত কিছু দিনের জন্য আমদানি শুল্ক শূন্য করে দিন। কারণ, এ ধরনের ঘোষণা দিলে দেখা যাবে এর প্রভাব বাজারে পড়ছে।”

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ বলেন, “বাজারে কিন্তু পেঁয়াজ আছে। এর মূল্য বাড়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু গতকাল মূল্য ছিল দেড়শ টাকা, আর আজ দুইশত টাকা!

“এভাবে মূল্য বেড়ে যাওয়াকে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মনে করি। সরকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে। এই সময় দুর্নীতিগ্রস্ত যে ব্যবসায়ীরা এই কাজগুলো করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংসদ ওয়াদাবদ্ধ।”

তিনি বলেন, “এর একটা ব্যবস্থা হওয়া উচিত। নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন। দেশবাসীকে আশ্বস্ত করবেন, যেন পেঁয়াজের মূল্য শিগগিরই কমে আসে।”

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “গত পরশু বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৮০ টাকা। ওইদিন এই সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পমন্ত্রী দেওয়া বক্তব্যে পেঁয়াজের মূল্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে বললেন। এট বলার পরদিন মূল্য হয়ে গেল ১৫০ টাকা। আর আজকে হল ২০০ টাকা।

“পত্রিকায় দেখলাম ভারতে পেঁয়াজের মূল্য কমার কারণে কৃষক কাঁদছেন। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের এত ভালো সম্পর্কের পরে নিশ্চয়ই সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে পদক্ষেপ নিলে ক্রাইসিসটা থাকতো না।”

পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিকে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবি জানান সাবেক প্রতিমন্ত্রী চুন্নু।

তিনি বলেন, “অনেক ফেন্সিডিল ব্যবসায়ী রাস্তাঘাটে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মরে যায়। পেঁয়াজের মূল্য যারা বাড়ায়, তারা বন্দুকযুদ্ধে মরে যাক। তাহলে এটা একটা উদাহরণ হবে। পেঁয়াজের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে অভিযান হওয়া উচিৎ।”

‘পেঁয়াজ আনার ব্যবস্থা নিয়েছি’

সংসদ সদস্যরা পেঁয়াজ নিয়ে ক্ষোভ জানালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাজার সহনীয় করতে আরও দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।

তিনি বলেন, “বিদেশ থেকে অর্থাৎ ইজিপ্ট থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য ইতিমধ্যে লোক চলে গেছে। সেখান থেকে আমরা পেঁয়াজ আনছি। আরও কোন দেশে পেঁয়াজ পাওয়া যায়, সেটা খোঁজ নিয়ে আমরা নিয়ে আসার ব্যবস্থা নিচ্ছি।

“ইতিমধ্যে ৫০ হাজার মেট্রিক টনের এলসি খোলা হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে চলে আসবে।”

টিসিবির মাধ্যমে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রির তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি যেটা নির্দেশ দিয়েছি, আসার সাথে সাথেই বিশেষ করে টিসিবি এটা নিয়ে নেবে এবং বিতরণের ব্যবস্থা টিসিবি করবে। সমস্ত জেলায় জেলায় ট্রাকে করে এই পেঁয়াজ চলে যাবে। সেইভাবে একটা আয়োজন আমরা করে ফেলেছি।”

পেঁয়াজ নিয়ে ষড়যন্ত্রের সন্দেহের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা বলেন, “পেঁয়াজের দাম বাড়ছে, অথচ পেঁয়াজ কিন্তু আছে দেখা যাচ্ছে। আমরা যে অভিযান চালাইনি, তা না। অনেক জায়গায় দেখা গেছে পেঁয়াজ পচে যাচ্ছে। কিন্তু পেঁয়াজ বাজারে ছাড়া হচ্ছে না।”

ভারতে পেঁয়াজের দাম নিয়ে তিনি বলেন, “এখানে (সংসদে) একজন বিরোধী দলের নেতা বলেছেন, পেঁয়াজ নাকি ভারতে ৮/১০ টাকা। ওটা একটা স্টেটে। সেখান থেকে তারা পেঁয়াজ বাইরে যেতে দিচ্ছে না। শুধু সেখানেই কম দাম, কিন্তু সারা ভারতবর্ষে এখন পেঁয়াজ প্রায় ১০০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। তাদেরই পেঁয়াজের অভাব এবং তারা বিদেশ থেকে আমদানি করছে। তারপরও আমার অনুরোধে যেগুলো এলসি খোলা হয়েছিল, পেঁয়াজগুলো তারা আনতে দিয়েছিল।”

দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে গবেষণায় জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১২ মাসেই যেন চাষ করা যায়, সেই ধরনের বীজ বারির গবেষকরা উদ্ভাবন করেছেন। ভবিষ্যতে তা বাজারজাত করা হবে।