বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) বলছে, তাদের চালু করা এই বন্ডের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে বাজার থেকে তোলা ৯.৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮০ কোটি টাকা) ব্যয় হবে প্রাণ গ্রুপের পরিচালন ও বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়নে।
‘বাংলা বন্ড’ এর তালিকাভুক্তি উপলক্ষে সোমবার লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেন, “এর মধ্য দিয়ে আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে এক দীর্ঘ যাত্রার সূচনা হল।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যের গল্প এ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।
এই বন্ডের মাধ্যমে বিদেশ থেকে যে পাওয়া অর্থ পাওয়া যাবে, তা দেশের বেসরকারি খাতকে ‘অনেক দূর এগিয়ে নেবে’ বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আইএফসি ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের যৌথ আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইএফসির এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিনা স্টোয়েলকোভিচ, আইএফসির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ট্রেজারার জন গ্যান্ডোলফ, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের সিইও নিখিল রথী এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমও উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে এই বন্ডের মেয়াদ হবে ৩ বছর। পরে তা বাড়িয়ে ৫ বছর এবং সর্ব্বোচ্চ ১০ বছর করা হতে পারে।
ভারতের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রথমে তিন বছর মেয়াদী রুপি বন্ড ছাড়া হয়েছিল। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ৫ বছর করা হয়। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০ বছর। প্রবাসী ভারতীয়রা এই বন্ডে বিপুল হারে বিনিয়োগ করেছেন।
এরপর আইএফসি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠায় এবং তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অর্থমন্ত্রণালয় একই বছর ৪ অক্টোবর এক চিঠিতে ‘টাকা বন্ড’ ছাড়ার অনুমোদনের বিষয়টি জানায়।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) যাচাই কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে আইএফসির ওই প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
ওই কমিটির কাছে প্রাণ গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান প্রাণ এগ্রো ও নাটোর এগ্রো লিমিটেডের জন্য এ বন্ড ছাড়ার প্রস্তাব করে আইএফসি। চলতি বছরের এপ্রিলে আইএফসির প্রস্তাবে সাড়া দেয় বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
এই বন্ডের মাধ্যমে বাজার থেকে যে অর্থ পাওয়া যাবে, সেখান থেকে প্রাণ এগ্রো ও নাটোর এগ্রো ৮০ কোটি টাকা ঋণ পাবে। সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ ঋণ সমান কিস্তিতে তিন ও পাঁচ বছরে তাদের পরিশোধ করতে হবে।
এই বন্ডের তালিকাভুক্তি উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেন, “আইএফসির সাথে আমার অনেকগুলো মিটিং হয়েছ। সামনে আরও ৩০০ মিলিয়ন ডলার আসবে। তার মধ্যে এইটা প্রথম। এই বন্ডে কী রকম সারা পাওয়া যায় সেটা দেখে পরেরগুলো ছাড়া হবে।”
তিনি বলেন, “আজকের দিনটি আমাদের দেশের জন্য একটি গৌরবের দিন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই চিন্তার আদলে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা প্রথমবারের মত লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে একটি বন্ড নিয়ে আসতে পরেছি। এরপর আমরা পর্যায়ক্রমে আরও বন্ড আনব।“আপনারা জানেন, আমরা অনেকদিন ধরে একটা যায়গায় আটকা পরে ছিলাম। আমাদের ফাইনানসিয়াল মার্কেটে কোনো ফাইনানসিয়াল টুলস ছিল না। আমাদের শুধু ছিল ব্যাংক ঋণ। সেখানে অনেক সমস্যা আছে। আমরা সবাই এখন চাইছি ব্যাংক গুলোর ওপর আর চাপ না বাড়াতে। বন্ড ফাইনান্সিং একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।”
বাংলা বন্ডের কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার মর্যাদা বাড়বে মন্তব্য করে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের সিইও নিখিল রথী বলেন, “বাংলাদেশের টাকাকে আমরা লন্ডনে স্বাগত জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে আইএফসিকে অভিনন্দন জানাচ্ছি পথিকৃৎ হিসেবে তাদের এই ভূমিকার জন্য।”
বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক শিল্প, উৎপাদন ও আর্থিক খাত এই বাংলা বন্ড থেকে উপকৃত হবে জানিয়ে আইএফসির এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিনা স্টোয়েলকোভিচ বলেন, “সমৃদ্ধি অর্জনের পথে বাংলাদেশের অভিযাত্রায় অংশীদার হিসেবে আমরা পাশে থাকতে চাই।”