অবৈধ নিরীক্ষা দাবির অর্থ আদায়ে বিটিআরসির অন্যায় বলপ্রয়োগ: গ্রামীণফোন

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) অবৈধ নিরীক্ষা দাবির সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে অন্যায়ভাবে বলপ্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামীণফোণের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল প্যাট্রিক ফোলি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2019, 10:39 AM
Updated : 11 Nov 2019, 11:20 AM

কার্যক্রম পরিচালনায় ‘অবৈধ বিধিনিষেধ’ আরোপ করার মধ্য দিয়ে বিটিআরসি কোম্পানির ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “বিটিআরসি অন্যায়ভাবে আমাদের উপর বলপ্রয়োগ করে বেআইনি নিরীক্ষা দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আদায়ে চেষ্টা করছে।

“যেটাকে তারা জনগণের অর্থ বলছে, সেটা সত্য নয়। তাদের মূল দাবির ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বিষয়টিও সঠিক নয়।“

অনাকাঙ্ক্ষিত নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে বিটিআরসি জোর করে নিজের নয় এমন অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন ফোলি।

বিটিআরসির দাবির মধ্য থেকে ন্যূনতম কত টাকা দিতে পারবে, তা জানাতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাওয়া দুই সপ্তাহ সময়ের ১১ দিনের মাথায় সাংবাদিকদের সামনে আসেন গ্রামীণফোনের কর্তারা।

এখনো আদালতের বাইরে আপসরফার মাধ্যমে দুইপক্ষের জন্য ‘সহায়ক ও স্বচ্ছ’ সমাধানে গ্রামীণফোন প্রস্তুত বলে সাংবাদিকদের জানান চিফ মার্কেটিং অফিসার ইয়াসির আজমান।

তিনি বলেন, “গত ২২ বছরে গ্রামীণফোন ৭৩ হাজার কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা করেছে। শতকরা হিসাবে আমাদের আয়ের ৫৪ শতাংশ।

“এই রকম একটা কোম্পানির কাছে বিটিআরসির এই বেআইনি অডিটটা যেন এভাবে না চলে, আমরা টেবিলে এসে আলোচনার মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ এবং দুইপক্ষের জন্য সহায়ক এমন সমাধান বের করে নিয়ে আসতে পারি।”

প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ও অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের সঙ্গে দুই বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমরা বলেছিলাম, সমঝোতা হলে সব মামলা তুলে নেব। ২১ অক্টোবর তথ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে সম্মত হয়েছিলাম।

“আমরা আশা করেছিলাম, উনি আমাদেরকে যে সময়টা বেঁধে দিয়েছিলেন, তার মধ্যে এটার একটা সমাধান বের করে নিয়ে আসতে পারব। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এটা আর হয়নি।”

‘৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে না’

নিরীক্ষা দাবির অর্থ নিয়ে বিরোধের কারণে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দেওয়া প্রায় চার মাস বন্ধ রেখেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

এর ফলে চলতি বছর টেলিকম খাতে বাংলাদেশ ৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হারাবে বলে জানান গ্রামীণফোনের কর্তারা।

ইয়াসির বলেন, “আমরা যদি এই মুহূর্তে এনওসিগুলো ক্লিয়ার করতে না পারি, বাংলাদেশে ৪ বিলিয়ন টাকার মতো বিনিয়োগ এই বছর হবে না, যার ফলে সরকারও বিভিন্ন রকম শুল্ক পাবে না।”

আদালত পাওনা আদায়ে স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর বিটিআরসি চাইলে বিনিয়োগের এই সুযোগ তৈরি করতে পারত বলে মন্তব্য করে তিনি।

“বিটিআরসি এটা কেন করছে না, তা বোধগম্য নয় আমাদের কাছে। আমরা তাদের কাছে আবেদন জানিয়েছি, যেন এই এনওসিগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়।”

এই রকম প্রায় ২০টি এনওসি বিটিআরসিতে আটকে আছে বলে সাংবাদিকদের জানান গ্রামীণফোনের কর্মকর্তারা।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে সভার প্রসঙ্গে টেনে প্রতিষ্ঠানের সিইও মাইকেল ফোলি এ বিষয়ে বলেন, ”আইসিটি উপদেষ্টার নির্দেশনাগুলো অমান্য করছে বিটিআরসি এবং বর্তমানে কেবল আদালতের দিকে নিবদ্ধ আছে তারা”

গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করে আসছে বিটিআরসি।

কয়েক দফা চেষ্টায় সেই টাকা আদায় করতে না পেরে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে নোটিস পাঠানো হয় দুই অপারেটরকে। বিটিআরসির দাবি করা টাকার ওই অঙ্ক নিয়ে আপত্তি তুলে গ্রামীণফোন ও রবি।

সালিশের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হয় দুই অপারেটর। তবে পরে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগে বিষয়টি নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দফা বৈঠকও করেন।

এরপর টাইটেল স্যুটের (স্বত্তের মামলা) অধীনে গ্রামীণফোন বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির অর্থ আদায়ের নোটিসের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করলেও ২৮ অগাস্ট নিম্ন আদালতে তা খারিজ হয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করে কোম্পানিটি।

১৭ অক্টোবর আপিল গ্রহণ করে বিটিআরসির পাওনা আদায়ের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ৫ নভেম্বর শুনানির জন্য রাখে উচ্চ আদালত। ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে বিটিআরসির আবেদনে সাড়া না দিয়ে চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান তা আপিলের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান।

বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার মধ্যে গ্রামীণফোন ন্যূনতম কত টাকা দিতে পারবে তা জানতে চেয়ে আপিল বিভাগ ১৪ নভেম্বর মামলায় শুনানির দিন রেখেছে।